চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি সত্যিই বিশ্বের সেরা?

দশ বছর আগে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা 'নেচার' ১৪৫টি বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের অবদানের হিসাব রাখতে করে। ২০১৬ সালে যখন প্রথম এই নেচার ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়, তখন চাইনিজ একাডেমি অভ সায়েন্সেস (সিএএস) প্রথম স্থানে থাকলেও শীর্ষ দশে মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরই আধিপত্য ছিল।
এ তালিকায় হার্ভার্ড ছিল দ্বিতীয়, আর স্ট্যানফোর্ড ও এমআইটি ছিল পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করে যথাক্রমে ফরাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ (সিএনআরএস) ও জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক সোসাইটি। তালিকার নবম ও দশম স্থানে ছিল অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ (সপ্তম ও অষ্টম স্থানে ছিল যথাক্রমে জার্মানির হেলমহোলৎজ অ্যাসোসিয়েশন অভ জার্মান রিসার্চ সেন্টারস ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়)।
কিন্তু ধীরে ধীরে এই চিত্র পাল্টে গেছে। ২০২০ সালে বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ দশে প্রবেশ করে। ২০২২ সাল নাগাদ অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ এই তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে; তাদের জায়গা দখল করে নেয় দুটি চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালে এসে শীর্ষ দশে টিকে থাকে মাত্র তিনটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান—হার্ভার্ড, সিএনআরএস ও ম্যাক্স প্লাঙ্ক সোসাইটি। এ বছর হার্ভার্ড দ্বিতীয় ও ম্যাক্স প্লাঙ্ক নবম স্থানে রয়েছে। শীর্ষ দশের আটটি প্রতিষ্ঠানই এখন চীনের।
এই পরিবর্তন চীনের গবেষণা সক্ষমতায় বাস্তব ও দ্রুত উন্নতির প্রতিফলন। গত দশকে দেশটি গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় প্রকৃত অর্থে বছরে প্রায় ৯ শতাংশ করে বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে সরকারি ও উচ্চশিক্ষা খাতে সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে চীন। বিদেশে কর্মরত অনেক চীনা গবেষককেও ফিরিয়ে এনেছে দেশটি।
এ কাজের সুফলও মিলেছে। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী গবেষণাপত্র (সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত হওয়া গবেষণাপত্রগুলোর ১ শতাংশ) প্রকাশ করে। রসায়ন, প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের মতো ক্ষেত্রে চীনকে এখন বিশ্বসেরা বিবেচনা করা হয়। চীন ব্যাপকভাবে উচ্চমানের কম্পিউটার বিজ্ঞান গবেষণাও করে থাকে। ২০২৫ সালের সূচকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চীনের অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি ডিপসিক-এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং-এর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তবে এই র্যাংকিং তৈরির পদ্ধতিটি চীনের শক্তির দিকগুলোকেই বেশি তুলে ধরে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত জার্নালগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শীর্ষ স্তরের গবেষণার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বেছে নেওয়া হয়; ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা প্রতিফলিত করতে এর গঠনও নিয়মিত বদলানো হয়। রসায়ন ও ভৌত বিজ্ঞানের জার্নালগুলোতে প্রকাশনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৫ সালের সূচকে ব্যবহৃত জার্নালের অর্ধেকেরও বেশি এখন এই দুটি ক্ষেত্রের। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও জীববিজ্ঞান—যা এখনও পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্যের ক্ষেত্র—সেইসব বিষয়ের জার্নাল থেকে আসা গবেষণাপত্রগুলো সূচকের মাত্র ২০ শতাংশ।
আবার যখন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিবেচিত দুটি জার্নাল শুধু 'নেচার' ও 'সায়েন্স'-এ প্রকাশিত গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা হয়, তখন চীনের গবেষণা কেন্দ্রগুলোর র্যাংকিং বেশ নিচে নেমে যায়। সেই তালিকায় শুধুমাত্র সিএএস শীর্ষস্থানের কাছাকাছি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
নেচার ইনডেক্স কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা পরিমাপের কার্যকর উপায় হলেও মূল্যায়ন অনিবার্যভাবেই অসম্পূর্ণ। অনেক মূল্যবান গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ জার্নালেও প্রকাশিত হয়, আর বিশ্ব বদলে দেওয়া উদ্ভাবন সবসময় শীর্ষস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আসে না। তবে এ কথা বলতেই হবে, ঝেজিয়াং, পিকিং ও সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিএএস-এর পাশাপাশি বিশ্বের সেরাদের মধ্যে নিজেদের স্থান অর্জন করে নিয়েছে।