ভৈরবে পুরনো ঢেউটিনের কোটি টাকার বাজার

মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষেই ভৈরব বাজারের অবস্থান। এ বাজারে যেসব পণ্যের ব্যবসা হয়, তার মধ্যে অন্যতম পুরনো ঢেউটিন। বাজারের টিনপট্টির পুরনো ঢেউটিনের দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১ কোটি টাকার ঢেউটিন বেচাকেনা হয়। মূলত নিম্নবিত্তরাই পুরনো ঢেউটিন কিনেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা সদরের ভৈরব বাজার থেকে। দিনদিন এই পুরনো ঢেউটিন ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। এছাড়া কম দামে ঢেউটিন পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। নদীপথে খুব সহজে এবং কম খরচে ঢেউটিন নিয়ে যেতে পারেন তারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্ধশত বছর ধরে ভৈরব বাজারের টিনপট্টিতে পুরনো ঢেউটিন বেচাকেনা হচ্ছে। বর্তমানে পট্টিতে পুরনো ঢেউটিনের দোকান আছে ৮-১০টি। চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের গ্রাম থেকে পুরনো টিনের ঘর কিনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ঘরের ঢেউটিনগুলো খুলে নিয়ে আসেন ভৈরব বাজারে। বাজারের বালুর মাঠে ঢেউটিনগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ করা হয়। স্থানীয় শ্রমিকরাই এ মেরামত কাজ করেন। বিক্রির উপযোগী করে তুলতে প্রতি বান ঢেউটিনের পেছনে ব্যবসায়ীদের খরচ হয় ২১০ টাকার মতো।
ভৈরব উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া জানান, তিনিসহ স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক পুরনো ঢেউটিন মেরামতের কাজ করেন। তারা ঢেউটিনে থাকা ছিদ্রগুলো এটে দেওয়ার পাশাপাশি একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগান। এরপর সেগুলো ঘঁষামাজা করে বিক্রির উপযোগী করে তুলেন। এ কাজ করে প্রতিদিন একেকজন শ্রমিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করেন। নিজ এলাকায় কাজ পেয়ে শ্রমিকরাও খুশি বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলা বছরের ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসকে পুরনো ঢেউটিন ব্যবসার মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় মানুষজন ঘরবাড়ির মেরামত কাজ করেন। ফলে বছরের এই সময়টাতে পুরনো ঢেউটিনের ভালো ব্যবসা হয়। মৌসুমের প্রতি মাসে একেকটি দোকানে ১০-১২ লাখ টাকার ঢেউটিন বিক্রি হয়। আর একেকজন ব্যবসায়ী ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করেন। তবে মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে আসে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে ভৈরব বাজারের টিনপট্টিতে মানভেদে ৬ ফুটের প্রতি বান পুরনো ঢেউটিন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়। ৭ ফুটের ঢেউটিন প্রতি বান ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার, ৮ ফুটের ঢেউটিন প্রতি বান ৩৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় বেচাকেনা হয়। এছাড়া ৯ ফুটের প্রতি বান টিনের দাম ৩৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং ১০ ফুটের প্রতি বান পুরনো ঢেউটিন বেচাকেনা হয় ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলা থেকে ক্রেতারা আসেন পুরনো ঢেউটিন কিনতে। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিও বিক্রি হয় পুরনো ঢেউটিন। টিনপট্টি থেকে নতুন ঢেউটিনের তুলনায় অর্ধেক দামে পুরনো ঢেউটিন কিনতে পারেন ক্রেতারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রাম থেকে ঢেউটিন কিনতে যাওয়া টেনু মিয়া জানান, তিনি কৃষিকাজ করেন। বাড়ির কাজের জন্য নতুন ঢেউটিন কেনার সক্ষমতা নেই তার। সেজন্য তুলনামূলক কম দামে ভৈরব বাজার থেকে কয়েক বান পুরনো ঢেউটিন কিনেছেন। সাধ্যের মধ্যে ঢেউটিন কিনতে পেরে খুশি বলে জানান তিনি।

ভৈরব বাজারের পুরনো ঢেউটিন ব্যবসায়ী রঞ্জন চৌধুরী সেতু জানান, মৌসুমের সময় তাদের ব্যবসা খুব ভালো হয়। তখন তিনি মাসে ১০-১২ লাখ টাকার ঢেউটিন বিক্রি করতে পারেন। তবে মৌসুম ছাড়া বাকি সময়ে বেচাকেনা কমে যায়। যদিও এখন সারাবছরই পুরনো ঢেউটিন বেচাকেনা হয় বলে জানান তিনি।
ভৈরব বাজারের টিনপট্টির মেসার্স সোহেল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোহেল আহমেদ বলেন, 'টিনপট্টিতে আমার তিনটি পুরনো ঢেউটিনের দোকান আছে। একেকটি দোকানে মাসে ৮-১০ লাখ টাকার ঢেউটিন বেচাকেনা হয়। প্রতি বান ঢেউটিনে লাভ হয় ৫০০-৭০০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে এ ব্যবসা থেকে মাসে অন্তত দেড় লাখ টাকা আয়। দিন দিন এ ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। কারণ এখন সারাবছরই কম-বেশি পুরনো ঢেউটিন বেচাকেনা হয়।'