ইন্টারনেট ছাড়া ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখতে বিকল্প নিয়ে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সাম্প্রতিক দেশব্যাপী 'ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের' বিষয়টিকে আমলে নিয়ে, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বিভ্রাটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও যেন নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা নিশ্চিত করা যায়— সে লক্ষ্যে বিকল্প নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি কন্টিজেন্সি নেটওয়ার্ক বা ব্যাকআপ নেটওয়ার্কিং সিস্টেম তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট ছাড়া সারা দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম কীভাবে চালু রাখা যায়, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সভা করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংয়ের সময় এ তথ্য জানান ব্র্যাক ব্যাংক এমডি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন।
তিনি বলেন, "কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাংক সেক্টরকে ইন্টারনেট ডিপেন্ডেন্সি থেকে সরে আসতে হবে। আমাদের এখন কনটিনজেন্ট বা অল্টারনেটিভ সলিউশন প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আলাদা অবকাঠামো তৈরি করা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।"
তিনি বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্যাংকিং সেক্টর, উভয় ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট সংযোগ একইরকম। এটা হওয়া উচিত না। ব্যাংক সেক্টরে বড় ধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির কাজ আমরা শুরু করবো।"
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত ইন্ট্রা-নেটওয়ার্ক (আন্তঃ সংযোগ) চালু করার কথা ভাবছে। এটি চালু করা গেলে ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যাংকের সব ধরনের অভ্যন্তরীণ লেনদেন করা সম্ভব হবে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সেকশন ছাড়া বাকি সবই চলবে।"
"এই পদ্ধতি চালু করার চিন্তা কয়েকবছর আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল, তবে পরে বিষয়টি আর এগোয়নি। তবে এখন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ব্যাংক ট্রান্সেকশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি নিয়ে আবারও ভাবতে শুরু করেছে," বলেন তিনি।
ব্রিফিং এ সেলিম আরএফ হোসেন রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা জানিয়ে বলেছেন, "বাইরে থেকে অনেকে বলছেন রেমিটেন্স যেন না পাঠানো হয়। এ বিষয়টি আমি একদম সঠিক মনে করি না। প্রবাসী যারা আছেন, তারা দেশেই রেমিটেন্স পাঠাবেন।"
"রেমিটেন্সের চিত্রই এমন, এটা কোনো সময়ে বাড়বে, আবার কোনো সময় কমবে। দুয়েক দিনের রেমিটেন্স প্রবাহের চিত্র দেখে সামগ্রিকভাবে কোনো সিদ্ধান্তে চলে আসা ঠিক নয়; বরং রেমিটেন্সের ট্রেন্ড কয়েক মাসকে নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা, দি সিটি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ব্র্যাক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ও ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন সভায়।
সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, "ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় ব্যাংক খাতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং আমাদের নতুন কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা গভর্নর মহোদয় আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি, এই কয়দিনে ব্যাংক খাতের ইনফ্রাস্ট্রাকচারে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।"
এছাড়া, সাম্প্রতিক ঘটনায় দুটি ব্যাংকের চারজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ৩০০ ছোট ব্যাংকে সাইবার হামলার কথা শোনা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে সব ব্যাংকে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।