পাঁচ মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি বিল ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৮৮ মিলিয়ন ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তদারকিতে গত পাঁচ মাসে দেশের বেশ কিছু ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ (ওভারডিউ) আমদানি বিল ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৮৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিদেশি ব্যাংকে আমদানি বিলের বকেয়া দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া তদারকি ও হস্তক্ষেপের কারণে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
এদিকে রোববার (১৩ এপ্রিল) জারি করা এক সর্কুলারে আমদানির বিপরীতে দেশি-বিদেশি সব ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি বিল পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তদারকির নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের মাসিক বিবরণী অনলাইন ইম্পোর্ট মনিটরিং সিস্টেমে (ওআইএমএস) পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, যথাসময়ে আমদানি বিল পরিশোধিত না হলে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যয় বৃদ্ধিসহ অনুকূল পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন (জিএফইটি) ২০১৮ উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, অথরাইজড ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলো কর্তৃক স্থানীয় ও বৈদেশিক উভয় ধরনের আমদানি বিল যথাসময়ে পরিশোধের বিধান রয়েছে। যথাসময়ে আমদানি বিল পরিশোধ করা না হলে সংশ্লিষ্ট এডি শাখার লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
সার্কুলারে আরও সতর্ক করা হয়েছে, আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্ব অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্ট লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'গত বছরের নভেম্বর শেষে বৈদেশিক মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত আমদানি বিল ছিল ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার।'
'এসব ব্যাংককে নিয়মিত মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যেসব ব্যাংকে মেয়াদোত্তীর্ণ অপরিশোধিত স্বীকৃত (বৈদেশিক বা স্থানীয়) বিল বেশি, সেসব ব্যাংকের সাথে ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি সভা শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বিভিন্ন কার্যকরী নির্দেশনা পাঠানো করা হয়, যা পরিপালনে বিভিন্ন সময়সীমা দেয়া হয়।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বৈদেশিক মুদ্রার ওভারডিউ ছিল ২০০ মিলিয়ণ ডলার, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে ব্যাংক-টু-ব্যাংক ঋণপত্রের (এলসি) আওতায় স্থানীয় বিল পরিশোধের অগ্রগতিও তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসির বিপরীতে দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় বকেয়া বিলের পরিমাণ নভেম্বরের ৩১১ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে এখন ১৫৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের একটি পৃথক প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানির বিপরীতে সবচেয়ে বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ বিল থাকা ১০টি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিমাসিক ভিত্তিতে সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রোববার দেশি-বিদেশি মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল দ্রুত পরিশোধে কয়েকটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সর্কুলারে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ বিল পরিশোধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর যেসব শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের পরিমাণ বেশি, সেসব শাখায় বিশেষ পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে সার্কুলারে।
মামলাধীন কোনো বিল পরিশোধযোগ্য না হলে তা সরবরাহকারীর ব্যাংককে অবহিত করতে হবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমদানি বিলের বিপরীতে ব্যাংকের এডি শাখার দেওয়া অসংগতি (যদি থাকে) ও বিলমূল্য পরিশোধের তথ্য সংরক্ষণ ও মাসিক ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে হবে।