ইউসিবির সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) এক সভায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ইউসিবির সঙ্গে একীভূত না হওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত করণ বিষয়ে জানানোর পর মৌখিকভাবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে ব্যাংকটি একীভূতকরণে যাবে না। শনিবার ফের বোর্ড মিটিংয়ে মার্জারে না যাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এতে বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সবাই এ মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, 'কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হয় ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য। গত ৯ এপ্রিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন।'
ওই কর্মকর্তা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২১১টি শাখার মধ্যে ২০০টি শাখা এখন মুনাফা করছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'ঢাকার কয়েকটি ব্রাঞ্চ লোকসানে রয়েছে উচ্চ খেলাপি ঋণ থাকায়। ইতমধ্যে আমরা বড় বড় খেলাপি গ্রাহকদের থেকে ঋণের টাকা আদায় শুরু করেছি।'
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যাংকের সার্বিক সূচকের উন্নতির জন্য ডেকে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। তবে সূচকগুলো আরও ভালোর দিকে নিতে আরও কয়েক বছর সময় প্রয়োজন।
গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডকে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করা হবে। এ সময় উভয় ব্যাংকের স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
আর্থিক খাতের দুরবস্থা কাটাতে কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের জন্য প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আলোকে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য পরিস্থিতি—এই চারটি সূচকের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধের চূড়ান্ত পর্যায়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে।
এরপর গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক কীভাবে একীভূতকরণ করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা অনুসরণ না করে কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ব্যাংকিং খাতে অস্বস্তি শুরু হয়।
সবচেয়ে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংককে জোরপূর্বক একীভূত করার প্রাথমিক সিন্ধান্ত হওয়ার পর আতঙ্কে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে।
এই পাঁচটি ব্যাংকের একটি বাদে বাকি চারটি ব্যাংক একীভূতকরণে যেতে চায় না বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে এমন সিদ্ধান্তে নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন চার ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা।