ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক আমানত বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

দেশের ব্যাংকখাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে।
একই সময়ে ব্যাংক থেকে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মতো।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "অক্টোবর ও নভেম্বরে ব্যাংকখাতে বিভিন্ন ঘটনার কারণে কিছুটা আস্থার সংকট ছিল। তখন আমরা ব্যাংকখাতে প্রচুর উইথড্রয়াল প্রেশার দেখেছি।"
"কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আমাদের ব্যাংকগুলোর নানামুখী প্রচারণার কারণে ব্যাংকখাতের উপর গ্রাহকদের আস্থা বেড়েছে। গ্রাহকরা এখন আবার ব্যাংকে ফিরছেন। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংক ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে," এসব কারণে ডিপোজিট বাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ অভিজ্ঞ ব্যাংকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, গত দুয়েকমাস ধরে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোও বেশ ভালোরকমের আমানত পাচ্ছে।
এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। আগে দেওয়া অনেক ঋণ খেলাপি হওয়ায় বুঝেশুনে লোন দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেইসঙ্গে ব্যাংকখাতে তারল্য সংকট থাকায় সব ব্যাংকের অনেক বেশি ঋণ দেওয়ার মতো অবস্থাও নেই। এসব কারণেই ঋণ বিতরণ খুব বেশি বাড়েনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকখাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫.০৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিমান্ড ডিপোজিট ১.৭৯ লাখ কোটি টাকা এবং টাইম ডিপোজিট ১৩.২৬ লাখ কোটি টাকা। এর আগে জানুয়ারিতে ১৪.৮৮ লাখ কোটি টাকা ছিল।
গত নভেম্বরে ব্যাংক আমানত ছিল ১৪.৮৭ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে যা বেড়ে হয়েছিল ১৪.৮৯ লাখ কোটি টাকা। গত অক্টোবরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪.৯০ লাখ কোটি টাকা।
ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকখাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪.১৭ লাখ কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষে এটি ছিল ১৪.১১ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ১৪.৪১ লাখ কোটি, নভেম্বরে ১৪.১৮ লাখ কোটি, এবং অক্টোবরে ১৪.০৩ কোটি টাকা ঋণ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত দুইমাস ধরে আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৬.৮৬%।
এর আগে জানুয়ারিতে এই রেট ছিল ৬.১৪%। অর্থাৎ একমাসের ব্যবধানে আমানতের গ্রোথ ৭২ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৪%। অন্যদিকে, ঋণের প্রবৃদ্ধি জানুয়ারির ১৩.৮৯% থেকে কমে ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ১৩.২৬%।
জানুয়ারিতে আমানতের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক
গত জানুয়ারি মাসে আমানতের ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। ঋণের ইন্টারেস্ট রেট বাড়লেও সেটি আমানতের তুলনায় কম। ফলে ব্যাংকগুলোর ইন্টারেস্ট আয় জানুয়ারির তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর আমানতের এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট জানুয়ারির ৪.২৯% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩১% এ।
ডিসেম্বরে এটি ৪.২৩% ছিল। আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ হার ৪.০২% ছিল।
ঋণের এভারেজ ইন্টারেস্ট রেট জানুয়ারির তুলনায় ৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৭.২৭%। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকখাতের ইন্টারেস্ট আয়ে।
জানুয়ারির ২.৯৫% থেকে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে এ আয় হয়েছে ২.৯৬%।
গত ১৫ জানুয়ারি ৬% এ বেঁধে দেওয়া আমানত ইন্টারেস্ট রেটের সীমা তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসাথে কনজিউমার লোনে সুদহার ৩% পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ করে দেয় তারা। মূলত এরপরই আমানত বাড়ানোর লক্ষ্যে ইন্টারেস্ট রেট বাড়ায় ব্যাংকগুলো।