রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রণোদনার ‘অপব্যবহারের’ আশঙ্কা শ্রমিক নেতাদের

রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের লক্ষ্যে সরকারের ঘোষণা করা ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলের অর্থ মালিক পক্ষ 'অপব্যবহার করতে পারেন' বলে আশঙ্কা করছেন ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা।
তারা বলছেন, মালিকরা কারখানার লাইন সুপারভাইজার, লাইন চিফ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের শ্রমিকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে পারে। শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে এবং ভুয়া শ্রমিকদের তালিকা তৈরির পর মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট তৈরি করে মালিকপক্ষ প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে।
ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)'র 'Rapid Research Response to COVID-19'র অংশ হিসাবে করা গবেষণায় এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন শ্রমিক নেতারা।
বৃহস্পতিবার বিআইজিডি আয়োজিত ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণার প্রতিবেদনে।
প্যাকেজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশি শ্রমিক কাজ করেন এমন কারখানা খুঁজে তাদেরকে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত অশংগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে মজুরি সহায়তার সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

ওয়েবিনারে গবেষণার ফল তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ও বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অব প্র্যাকটিস মাহীন সুলতান। বিআইজিডির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ইমরান মতিনের পরিচালনায় ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আকতার, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাজমা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার, ডিআইএফই এর ডিআইজি মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামিম এহসান প্রমুখ।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মাহীন সুলতান বলেন, প্যাকেজটির সঠিক বাস্তবায়ন শ্রমিকদের মজুরি ও চাকুরীর অনিশ্চয়তা দূর করে দুর্দশা লাঘব করবে। তবে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে শতভাগ শ্রমিকের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্যাকেজের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের মাত্র ৫১ ভাগ শ্রমিকের তিন মাসের বেতন পরিশোধ সম্ভব হবে। অনেক কারখানার নিজেদেরই কয়েক মাসের মজুরি পরিশোধের সামর্থ্য থাকার কথা। এ সব কারখানাকে প্রণোদনার আওতায় না আনার সুপারিশ করা হয়।
মালিকদের প্রতি শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের বড় ধরনের বিশ্বাসের ঘাটতি আছে বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে।
এতে বলা হয়েছে, মালিকেরা এই প্রণোদনা শ্রমিকদের সুবিধার জন্যে মনে না করে বরং অল্প সুদে ঋণের একটা উৎস হিসেবে মনে করতে পারেন। অতীতে মালিকদের শ্রমিক বিরোধী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ এবং সরকারের ত্রাণ, পুনর্বাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে অপব্যাবহার এবং তসরুপের প্রবণতারোধ করতে না পারার কারণে শ্রমিকরা বিশ্বাস হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মাহীন সুলতান।