বৈশ্বিক সরবরাহ চক্রের বিচ্ছিন্নতা বাড়াবে এশিয়ায় ট্রাক চালকদের ধর্মঘট

এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করছেন ট্রাক মালিক ও শ্রমিকেরা। মহামারি সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় ইতোমধ্যেই প্রতিকূলতায় থাকা বৈশ্বিক সরবরাহে চক্রের ওপর যা নতুন আঘাত। এতে সরবরাহ বিচ্ছিন্নতার চাপ নতুন মাত্রা লাভের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পণ্য পরিবহনের সর্বশেষ ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। গত সোমবার রাতে স্থগিত করা এ ধর্মঘট শুরু হয় শুক্রবার থেকে। সরকারের ২৩ শতাংশ ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পণ্য পরিবাহী মালিক ও শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান অ্যান্ড লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
তিনদিনের এই অচলাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের বন্দর কার্যক্রম। বৃহত্তম বাণিজ্যিক জাহাজ বহরের মালিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি হ্যাপাগ- লয়েড এজি তার গ্রাহকদের জানায়, 'এশিয়ায় বন্দর কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে, বন্ধ আন্তঃজেলা পরিবহন।'
শুধু বাংলাদেশ নয়; এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ কালিমান্তান অঞ্চলের ট্রাক চালকরা ফুয়েল স্টেশন থেকে জ্বালানি চোরাচালানের কারণে ডিজেল সংকটের কথা জানান স্থানীয় প্রশাসনকে। যার প্রতিবাদে তারা একদিনের ধর্মঘট পালন করেন। থাইল্যান্ডে গত সপ্তাহ থেকেই ডিজেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাক চালকেরা।
স্থলপথে বন্দর পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর এই ব্যাঘাতে জাহাজের নির্ধারিত সময়সূচি পিছিয়ে পড়ছে, ফলে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বন্দরজট। যেকারণে নতুন মাত্রা লাভ করছে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস ও উৎপাদিত পণ্য জাহাজিকরণে দীর্ঘসূত্রিতা।
বাণিজ্যিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক- গার্দা ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় ট্রাক শ্রমিকদের আন্দোলন ত্রিশক্তি বন্দরে জাহাজের নির্ধারিত সময়সূচি পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও প্রধান বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের ভিড় বাড়তে পারে। তিনদিনের ধর্মঘটের প্রভাব স্বাভাবিক হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যাওয়ার আশঙ্কা করছে হ্যাপাগ-লয়েড।
এশিয়ায় ডিজেল স্বল্পতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আন্দোলনগুলো তীব্র হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে এই অঞ্চলের ভোক্তাপণ্যের মূল্যে। চলতি বছরে ইতোমধ্যেই ৬৪ শতাংশ বেড়েছে এ অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি। গত মাসে যা ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ মাত্রা লাভ করে বলে ব্লুমবার্গ ফেয়ার ভ্যালু ডেটাসূত্র জানাচ্ছে।
এশিয়াজুরে ডিজেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ পরিশোধনাগারের সক্ষমতা। তার সঙ্গে চীনের রপ্তানি সীমিত করা একটি প্রধান কারণ। জীবাশ্ম তেল পরিশোধনে বৈশ্বিক ভরকেন্দ্র চীন জ্বালানি সংকটের কারণে কমিয়েছে রপ্তানি। অথচ দেশটি পরিশোধিত তেলের বড় সরবরাহক। অন্যদিকে, শোধনাগারের সক্ষমতা কমে আসায় আমদানি কমিয়েছে ফিলিপাইন।
এপ্রসঙ্গে এনার্জি শিপিং বিশ্লেষক সংস্থা ভরটেক্সার প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েচ বলেন, "চলতি বছর আকাশচুম্বী হয়েছে ডিজেলের মূল্য। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মতো যেসব দেশ সাধারণত বিপুল পরিমাণ ডিজেল আমদানি করে তারা দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানিটির মূল্যে ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু, আমদানি বেড়ে চলায় এ ব্যবস্থা আর টেকসই না থাকায় তারা এখন আর্থিক খরচ কমাতে চাইছে।"
ফিচ সলিউশন্সের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক পিটার লি বলছেন, সরকারগুলো যথাযথভাবে ভোক্তা অধিকার রক্ষার পদক্ষেপ না নিলে এই অঞ্চলে আরও আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে একইসময় বিশ্ববাজারে জ্বালানির চড়া মূল্য এবং কয়লা থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যসহ সকল রকম দ্রব্যের আমদানি খরচ বেড়ে চলায় সরকারের বাজেট সক্ষমতার ওপরও চাপ পড়ছে।
লি বলেন, "ট্রাক চালক ও মালিকদের ডিজেলের উচ্চমূল্যের মুখে পড়তে হলেও, দীর্ঘদিন ধরে এ জ্বালানিতে উচ্চ ভর্তুকি অব্যাহত রাখাও সম্ভব নয়, কারণ মহামারির অভিঘাতে নানান খাত থেকেই সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে।"
- সূত্র: ব্লুমবার্গ