বাড়তি পণ্য আমদানি ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

এক্সেসরিজ বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স টি অ্যান্ড এ অ্যাসোসিয়েটস। ঢাকার এই প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন থেকে ২০ হাজার ৮৭৫ কেজি ন্যারো ওভেন লেবেল ফেব্রিক্স আমদানি করে। অথচ বন্ড লাইসেন্সের প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ২০ হাজার ১১৮ কেজি পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আমদানিকারকের বন্ড লাইসেন্স পরীক্ষা করে ৮৭৫ কেজি পণ্য বেশি আমদানির প্রমাণ পায়।
প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি এবং অসত্য এইচএস কোড (হারমোনাইজড সিস্টেম কোড) ঘোষণা দেওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গত ১১ জানুয়ারি টি অ্যান্ড এ অ্যাসোসিয়েটসকে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
টি অ্যান্ড এ অ্যাসোসিয়েটসের মতো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এভাবে বিভিন্ন সময়ে বন্ড সুবিধা নিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করছে। তৈরি পোশাক শিল্পের এসব কাঁচামাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সরবরাহ করে সেগুলো পুনরায় রপ্তানির বিধান থাকলেও এসব পণ্য খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, সরকার রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা দিয়েছে।
এক্সেসরিজ বন্ডের আওতায় আনা এসব পণ্য রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাবহার করে পুনরায় রপ্তানির বিধান থাকলেও জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকখাত শিল্পের জন্য কাস্টম বন্ড কমিশনারেট বিভিন্ন খাতে বন্ড লাইসেন্স প্রদান করে। এর মধ্যে একটি এক্সেসরিজ বন্ড। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে। পোশাক তৈরির পর সেগুলো রপ্তানি করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শুল্কায়ন সেকশন ৮ সি এবং ৮ ডি-এর অধীনে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের প্রমাণ মেলে। এসব প্রতিষ্ঠানকে তাদের বন্ড লাইসেন্সের প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি, ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানিসহ মিথ্যা এইচএসকোড ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত হয়। এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করে কাস্টম হাউস। সেকশন ৮ সি ২৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং শুল্কায়ন সেকশন ৮ ডি ২৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এর মধ্যে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বিভিন্ন সময় হাইপড কম্পোজিট লিমিটেডকে ৮১ লাখ টাকা, ডেকো এক্সেসরিজ লিমিটেডকে ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এশিয়া ইন্টারলাইনিংস লিমিটেডকে ৪৫ লাখ টাকা, নিটেক্স ড্রেসেস লিমিটেডকে ৮২ লাখ টাকা, নাইস কটন লিমিটেডকে ১৪ লাখ টাকা, ইউরোটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা এবং আল-মুসলিম ওয়াশিং লিমিটেডকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করছে। এতে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব অপতৎপরতা বন্ধে সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কিছু প্রতিষ্ঠান ভুলবশত ভিন্ন এইচএস কোডও ব্যবহার করছে।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানিফেকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) এর ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম বলেন, 'বন্ড লাইসেন্সে এর প্রাপ্যতার বাইরে বেশি পণ্য আমদানির সুযোগ নেই। এইচএস কোড প্রতি বছর পরিবর্তন হয়। তাই পুরোনো কোড ব্যবহারের কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জরিমানা করছে। বন্ড সুবিধায় আনা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে- এমনটি ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই। কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো বাইরে বিক্রি করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি বিজিএপিএমইএ নেতৃবৃন্দের সাথে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, আমদানিকারকের বন্ড লাইসেন্সের বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতার বিপরীতে ন্যাশনাল স্প্লিটের এর কারণে বর্তমানে কোনো বিলুপ্ত এইচএস কোড অন্তর্ভুক্ত থাকলে পণ্য চালান অঙ্গিকারনামা গ্রহণপূর্বক সাময়িক শুল্কায়ন করে খালাস করা হবে। তবে খালাস পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেট থেকে বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতার সঠিক এইচএস কোড অন্তর্ভুক্ত করে তা কাস্টম হাউসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।'
টি অ্যান্ড এ অ্যাসোসিয়েটসের প্রোপ্রাইপর মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'পণ্য খালাসে ঢাকা কাস্টম বন্ড কমিশনারেট প্রদত্ত লাইসেন্সে যে এইচএস কোড উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে সেটি সংশোধনও করা হয়।'
লাইসেন্স প্রাপ্যতার বেশি পণ্য আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনেক সময় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে কাগজের প্যাকেটের ওজন বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে হয়তো পণ্য বেশি হয়েছে।'