শিশুর ট্রমা কাটাতে যা করতে হবে

কোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার পর মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে— এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে শিশু-কিশোরদের মানসিক গঠন প্রক্রিয়াধীন থাকায় এ ট্রমার গভীরতা ও বিস্তৃতি তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিকর হয়। এই মানসিক বিপর্যয় শুধু প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং যারা এ ঘটনা টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে দেখছেন, তারাও ট্রমায় আক্রান্ত হন। এটা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
শিশুদের মানসিক বিকাশের এই সময়টাতে তাৎক্ষণিকভাবে দেখা দেয় উদ্বেগ, আতঙ্ক, মনোযোগে ঘাটতি, ঘুমের সমস্যা, বিছানায় প্রস্রাবের মতো আচরণগত পরিবর্তন। অনেকে স্কুলে যেতে ভয় পায়—যেটাকে বলে স্কুল ফোবিয়া। দীর্ঘমেয়াদে এ অভিজ্ঞতা 'পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার' বা 'পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে' রূপ নিতে পারে। তারা হাইপার ভিজিলেন্ট হয়ে পড়ে—হঠাৎ ভয় পায়, ভীত হয়ে পড়ে, এবং বিচ্ছিন্ন থাকতে চায়।
এ ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড। শুধু যারা প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের নয়— যারা ঘটনাটি প্রত্যক্ষ না করেও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদেরও সহায়তা দরকার। তবে সহানুভূতির বদলে এমপ্যাথি দেখাতে হবে। দয়া বা করুণা দেখালে শিশুদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। বরং তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে পাশে থাকতে হবে।
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মা ও শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা প্রশ্ন করলে তাদের মিথ্যা প্রবোধ না দিয়ে সত্যি এবং যথাযথ উত্তর দিতে হবে। যদি তারা দুই-একদিন পড়তে না চায় বা স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে দেরি করে, তা গ্রহণযোগ্য মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
জোর করে স্কুলে পাঠানো, 'তোমার তো কিছু হয়নি', 'তুই তো অন্য স্কুলে পড়িস'—এ ধরনের মন্তব্য করা যাবে না। এ ধরনের মন্তব্য শিশুদের ভেতরে আতঙ্ক আর অস্থিরতা বাড়ায়।
শিশুদের ঘুমের সময় নিশ্চিত করতে হবে এবং রাত জাগা বা সামাজিক মাধ্যমে ভীতিকর ভিডিও দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে। শোক প্রকাশে বাধা দেওয়া যাবে না, বরং তা উৎসাহিত করতে হবে।
একইসঙ্গে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও দুর্ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে শেখাতে হবে। যেমন— ইলেকট্রিক শক খেলে কী করতে হবে, আগুনে পুড়লে কীভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে— এসব জানা থাকলে শিশুরা আরও সচেতন হবে। স্কুল ও পরিবারে এ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
দুর্ঘটনার পর শিশু-কিশোররা যাতে কিছু অবদান রাখতে পারে, যেমন- আহতদের জন্য প্রার্থনা, অর্থ সহায়তা বা অন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, সেই সুযোগ দেওয়া জরুরি। এতে তাদের মনে দায়িত্ববোধ জন্মায় এবং ট্রমা কমে আসে।
ধমক দিয়ে শিশুদের শোক প্রকাশ থেকে বিরত রাখা যাবে না। ঘটনার পর পর যদি শিশু-কিশোরদের কোথাও কোনো কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ থাকে, বীভৎসতার মুখোমুখি না হয়ে কোনোভাবে যদি দুর্ঘটনার শিকার হওয়াদের কোনোভাবে আর্থিক সেবা বা কোনো ধরনের সহয়তা করার সুযোগ থাকে, বা তাদের জন্য প্রার্থনা করার সুযোগ থাকে, তাহলে সেই জায়গাটা তাদের দিতে হবে। তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রমা দূর করা যাবে।