সুনামগঞ্জে সিংহ ঘুরে বেড়ানোর ঘটনাটি গুজব, ভিডিও টিকটক থেকে নেওয়া

রাতের আঁধারে সিংহ সদৃশ্য একটি প্রাণী হাঁটছে—এমন একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় সিংহী ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হয়, জগন্নাথপুরের পাটলী ইউনিয়নের সাচানী গ্রামে দুটি সিংহী ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এক কিশোরের মজার ছলে দেওয়া ভিডিওর কারণে এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জানা গেছে, টিকটক থেকে একটি পুরনো ভিডিও ডাউনলোড করে তাতে ভয়েস সংযুক্ত করে জগন্নাথপুরে সিংহ ঘোরাফেরার গুজব ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটির প্রকৃত উৎস নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জগন্নাথপুর হাওরপ্রধান উপজেলা। এখানে কোনো গভীর জঙ্গল বা চিড়িয়াখানা নেই। ভারতের সঙ্গেও এ উপজেলার সীমান্তসংযোগ নেই। ফলে জগন্নাথপুরে সিংহ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
এমন গুজবে আতঙ্কিত সাচানী গ্রামের বাসিন্দা কয়েস আহমদ বলেন, 'বাঘ না সিংহ—কোনো প্রাণীর ভিডিও দিয়ে বলা হচ্ছে এটি আমাদের গ্রামের। এতে গ্রামের মানুষ আতঙ্কে আছে। বয়স্করা রাতে ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন।'
জগন্নাথপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম জানান, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে মো. হামজা নামে একটি টিকটক আইডি থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। হামজা তার চাচাত ভাই ও বন্ধুকে জানায়, ঘটনাটি সে নিজেই দেখেছে। পরবর্তীতে তার চাচাত ভাই ভিডিওতে ভয়েস পরিবর্তন করে এটি জগন্নাথপুরের ভিডিও বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়।
ইউএনও বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় মেম্বার ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে যাচাই করতে বলা হয়। এলাকায় খোঁজ নিয়ে অনেকে গুজবে বিশ্বাস করে এটিকে সত্যি মনে করেন। এমনকি ভিডিওটি ডাউনলোড করা ছেলেটিও চেয়ারম্যান-মেম্বারকে প্রথমে মিথ্যা বলে যে সে নিজেই সিংহী দেখে ভিডিও করেছে।
পরে ভিডিওটি বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার টিমে পাঠানো হয়। শুক্রবার দুপুরে চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্থানীয় লোকজনসহ ছেলেটি ইউএনও অফিসে উপস্থিত হয়ে ভিডিওটি ভুয়া বলে স্বীকার করে এবং ক্ষমা চায়।
ইউএনও সাজেদুল ইসলাম জানান, ভিডিও ছড়ানো ছেলেটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার মোবাইল ফোন জব্দ করে চেয়ারম্যানের কাছে রাখা হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে থানায় জিডি করতে ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।