সরকার ঠিক পথেই এগোচ্ছে

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক ফার্মস নিয়োগ দেওয়াসহ যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। সরকার পাচারের অর্থ ফেরত আনতে একটি কনক্রিট রোডম্যাপ দিয়েছে—যার ভিত্তিতে কাজ করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ প্রাধান্যের একটি হলো পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, দেশবাসীর প্রত্যাশাও তাই।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশের যেটা করণীয়, সরকার তা করার পরিকল্পনা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। সামনের সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অল পার্টি পার্লামেন্টারিয়ানদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মিটিং করবেন, সরকার প্রপার ডিরেকশনে যাচ্ছে। লন্ডন কনফারেন্স পাচারের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এটা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে গেছে, যেসব দেশে পাচার গেছে, ওইসব দেশও তা জানে। কিন্তু পাচারের টাকা দেশগুলোতে লগ্নী হয়ে গেছে। কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ সম্পদ কিনেছেন। এগুলো এখন ওইসব দেশের সম্পদ হয়ে গেছে।
তাই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে ওইসব দেশের ভূমিকা বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়টি খুব বেশি আলোচনায় আসে না। এ কারণেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ বিভিন্নভাবে এটি আলোচনায় আনতে হবে—পাচারকারীদের সম্পদ যাতে হস্তান্তর না হতে পারে, সেজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
পাচার হওয়া সম্পদ ফ্রিজ করা, তা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, উপযুক্ত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে বাংলাদেশে তা ফেরত আনার ক্ষেত্রে ওইসব দেশেরই দায়িত্ব বেশি। তবে পাচারের অর্থ পুনরুদ্ধারের কথা বলা যত সহজ, উদ্ধার করা ততটা সহজ নয়।
সরকার এতদিন অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এখন মনে হচ্ছে, অন্তবর্তীকালীন সরকার ঠিক পথে হাঁটছে। তবে সফলতা নির্ভর করবে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়ে গেছে, সেসব দেশের সহায়তার ওপর।
গ্লোবাল রেকর্ড ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ৫-৭ বছর সময় লাগে। আর বিভিন্ন দেশ থেকে যতো অর্থ পাচার হয়েছে, তার মাত্র ১% ফেরত আসছে, এই বাস্তবতা জানা দরকার। সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে অগ্রাধিকার ১১ মামলার ৫০% নিষ্পত্তি করা না গেলেও যদি হাই প্রোফাইলদের পাচার করা সম্পদ ফ্রিজ করা যায়, সেটাও বড় সাফল্য হবে।
যেসব দেশ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পেরেছে, তারা আন্তর্জাতিক ল'ফার্মস নিয়োগের মাধ্যমেই সফলতা পেয়েছে। তবে এটি খেয়াল রাখতে হবে, এসব ল'ফার্ম একইসঙ্গে অর্থ পাচারেও সহযোগিতা করে থাকে। তাই এসব ল'ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক যাচাই-বাছাই করে সতর্কতার সঙ্গে নিয়োগ দিতে হবে। আর ফার্মগুলোর ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ যে পরিমাণ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাচ্ছে, তারচেয়ে বেশি অর্থ ল'ফার্মগুলোকে পরিশোধ করতে হবে।
তাই কোন শর্তে, কখন এবং কী পরিমাণ ফি আন্তর্জাতিক ল'ফার্মগুলোকে দেওয়া হবে, তা সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে।
লেখক: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক।