অপছন্দের উপহার: ধরা না পড়ে বিদায় করবেন যেভাবে
বড়দিন বা অনুষ্ঠান মানেই উপহারের ছড়াছড়ি। তবে সব উপহার যে সবার মনমতো হবে, এমন কোনো কথা নেই। হয়তো কেউ এমন একটি সোয়েটার পেলেন যার মাপ ঠিক হলো না, কিংবা এমন একটি ঘর সাজানোর জিনিস পেলেন যা দেখতে বেশ বিদঘুটে। আবার এমনও হতে পারে, উপহার পাওয়া পারফিউমের গন্ধটাই আপনার পছন্দ হলো না।
সব উপহার পেয়ে সবাই আনন্দিত হয় না। তাই বলে অপছন্দের উপহারগুলো আলমারির এক কোণায় ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না। কাউকে মনে কষ্ট না দিয়ে কীভাবে এসব উপহার বিদায় করা যায় তার জন্য রয়েছে চমৎকার কিছু উপায়।
১. উপহার হাতবদল
নর্থ ইয়র্কশায়ারের ডন-মারিয়া ফ্রান্সের কাছে অপছন্দের উপহারের সমাধান খুব সহজ। তিনি সোজা অন্য কাউকে সেটি দিয়ে দেন। তার মতে, বড়দিনের ঠিক পরপরই এই কাজ করার উপযুক্ত সময়।
এতে তিনি মোটেও অপরাধবোধে ভোগেন না। বরং তিনি মনে করেন, উৎসব পালনের এটি একটি টেকসই উপায়। তিনি বলেন, 'একবার আমি বাগানের কিছু বীজ উপহার পেয়েছিলাম যা আমার কোনো কাজেই লাগত না।'
সেগুলো নষ্ট হতে না দিয়ে ডন-মারিয়া তার এক বন্ধুকে উপহার দেন, যিনি বাগান করতে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, 'এটি খরচ সামলানোর একটি ভালো উপায়। বিশেষ করে এখনকার এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে। এতে আমার ঘরও জঞ্জালমুক্ত থাকে।'
এই অভ্যাসটি অনেক বড় একটি সমস্যার সমাধান করতে পারে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড মূল্যের অবাঞ্ছিত উপহার ফেলে দেওয়া হয়। এর কিছু অংশ আবর্জনার স্তূপে বা ল্যান্ডফিলে গিয়ে জমা হয়।
ডন-মারিয়া তার বাগানের বীজগুলো নতুন করে প্যাকেট করেন। সঙ্গে একটি ছোট্ট চিরকুটে লিখে দেন, 'এটি আমি উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানি তুমি এটি পছন্দ করবে।' তিনি বলেন, 'এটি অপচয় রোধ করে। তাই রি-গিফটিং বা উপহার হাতবদল নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই।'
২. প্রমাণ লোপাট
হাতবদল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কেউ মনে কষ্ট না পায়। বিবিসির লুইস মিনচিন সতর্ক করে বলেন, 'ধরা পড়া যাবে না।' উপহারটি অন্য কাউকে দেওয়ার আগে গায়ে লাগানো কোনো লেবেল বা নাম লেখা চিরকুট আছে কি না, তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।
নতুন করে প্যাকেট করার আগে উপহারটি ভালো করে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন লুইস। দেখতে হবে প্যাকেটের সিল বা মুখ খোলা কি না অথবা ব্যবহারের কোনো চিহ্ন আছে কি না। প্যাকেট খোলা থাকলে বা সেটের কোনো অংশ কম থাকলে সহজেই বোঝা যাবে জিনিসটি নতুন নয়।
বিবিসি রেডিও ২-এর রেভারেন্ড কেট বটলি নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। একবার তিনি একটি উপহার অন্য কাউকে দেওয়ার সময় ভেতরে থাকা কার্ড সরাতে ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'তারা প্যাকেট খুলেই কার্ডটি দেখে ফেলে। আমি তখন ভীষণ লজ্জিত হয়েছিলাম।'
বিবিসির 'মর্নিং লাইভ'-এর ডা. অস্কারের অভিজ্ঞতাও বেশ মজার। তিনি একবার এক বাক্স চকলেট উপহার পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, 'প্রিয় মিসেস স্মিথ, এই বছর আমার শিক্ষক হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।' তবে এতে তিনি দমে যাননি। তিনি বলেন, 'পরেরজনকে দেওয়ার সময় আমি শুধু লেবেলটি তুলে ফেলেছিলাম।'
শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ অ্যান্টোনেট আকানজির একটি কৌশল আছে। সেটি হলো—নিজের সামাজিক গণ্ডির বাইরে উপহার হাতবদল করা। তিনি বলেন, 'যদি আপনার খালা আপনাকে কোনো অপছন্দের জাম্পার দেন, তবে সেটি আপনার খালাতো বোনকে দেবেন না। খালাতো বোনকে ওই পোশাক পরতে দেখলে খালা চিনে ফেলতে পারেন। তখন পরিস্থিতি খুব বিব্রতকর হবে।' তার মতে, নিশ্চিত হতে হবে যেন মূল দাতা এবং নতুন গ্রহীতার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
৩. বিক্রি করে দিন
অক্সফোর্ডশায়ারের ৩৬ বছর বয়সী কার্স্টি কুইন জানান, তিনি ই-বে এবং ভিনটেডের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পুরোনো জিনিস বিক্রি করে মাসে প্রায় ৫০০ পাউন্ড আয় করেন।
তিনি বলেন, 'যদি এমন কোনো উপহার পান যা আপনি ব্যবহার করবেন না বা পছন্দ নয়, তবে সেটি ড্রয়ারে ফেলে রাখা বা আবর্জনায় ফেলার চেয়ে বিক্রি করে দেওয়া ভালো। এতে কোনো ক্ষতি নেই।'
তার মতে, 'অপ্রয়োজনীয় উপহার বিক্রি করলে অন্য কেউ কম দামে তার প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে পারে। বর্তমান কঠিন অর্থনীতির সময়ে এটি বেশ প্রাসঙ্গিক।'
তিনি আরও বলেন, 'বিক্রেতা সেই টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে পারেন। এটি অপচয় করার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত এবং টেকসই।'
অনলাইন মার্কেটপ্লেস 'ভিনটেড' জানায়, প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম রবিবার অবাঞ্ছিত উপহার বিক্রির বিজ্ঞাপন অনেক বেড়ে যায়। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় এই হার তিন গুণ বেশি থাকে।
প্ল্যাটফর্মটির তথ্যমতে, গত বছর বিক্রির তালিকায় শীর্ষে ছিল নারীদের প্রসাধনসামগ্রী, পারফিউম, গয়না, ঘুমের পোশাক এবং মেকআপ। বড়দিনের পর ফ্যাশন বা পোশাকের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এরপরই থাকে বিনোদন ও ইলেকট্রনিক পণ্য।
উপহারদাতাকে কষ্ট না দিয়ে জিনিসটি বিক্রি করার কিছু কৌশলও জানিয়েছে ভিনটেড। যেমন—এমন ইউজারনেম ব্যবহার করা যা দেখে সহজে চেনা যাবে না এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমি সাধারণ রাখা।
ভিনটেডের এক মুখপাত্র জানান, 'অনেকে অবশ্য সরাসরি বলেই দেন যে এটি অবাঞ্ছিত উপহার। তারা পণ্যের বর্ণনায় 'আনওয়ান্টেড গিফট' কথাটি লিখে দেন। এতে ক্রেতারা পণ্যটির অবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা পান।'
৪. দান
যদি উপহার বিক্রি বা হাতবদল করতে মন না চায়, তবে অন্য উপায়েও সেটি কাজে লাগানো যায়। লুইস বলেন, দান করা একটি চমৎকার উপায়।
চ্যারিটি বা দাতব্য সংস্থায় দান করলে তা অন্যের উপকারে আসে। বড়দিনের পর চ্যারিটি শপগুলো বা দোকানগুলো এমন জিনিসের অপেক্ষায় থাকে। একজনের অপছন্দের জিনিস অন্যজনের কাছে মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের রিটেইল ডিরেক্টর অ্যালিসন সোয়াইন-হিউজও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'আপনার যদি এমন কোনো ঘর সাজানোর জিনিস থাকে যা আপনার ঘরের সঙ্গে মানানসই নয়, কিংবা একই বোর্ড গেম যদি দুই সেট হয়ে যায়, অথবা এমন কোনো জাম্পার থাকে যার রং আপনার পছন্দ নয়—তবে সেগুলো আমাদের দিন। এতে অন্য কারও ঘর বা আলমারি রঙিন হয়ে উঠবে।'
শুধু দান করলেই হবে না, বড়দিনের সময় চ্যারিটি শপ থেকে কেনাকাটা করাও মহৎ কাজ। অ্যালিসন বলেন, 'আমাদের দোকানগুলো অনেক অপ্রত্যাশিত এবং মানসম্মত জিনিসে ভরা থাকে, যা নতুন মালিকের অপেক্ষায় আছে।'
তবে এখানেও একটি সতর্কতা আছে। যদি ভয় থাকে যে আত্মীয়রা দোকানে এসে তাদের দেওয়া উপহারটি দেখে ফেলতে পারেন, তবে নিজের এলাকার বাইরের কোনো চ্যারিটি শপে দান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. রসিদ দেয়া
যিনি উপহার দিচ্ছেন, তিনি যদি সঙ্গে একটি 'গিফট রিসিপ্ট' বা রসিদ দিয়ে দেন, তবে গ্রহীতার জন্য বিষয়টি সহজ হয়ে যায়।
লুইস বলেন, 'যদি আপনি কাউকে উপহার দেন এবং সঙ্গে রসিদ দিয়ে দেন, তবে তার হাতে অনেক বিকল্প থাকে। বিশেষ করে দামি উপহারের ক্ষেত্রে এটি খুব জরুরি।'
গিফট রিসিপ্ট থাকলে গ্রহীতা দোকানে গিয়ে পণ্যটি বদল করতে পারেন বা সমমূল্যের অন্য কিছু নিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুবিধাও থাকে, তবে তা নির্ভর করে দোকানের নীতির ওপর।
রসিদ না থাকলে পরিস্থিতি দ্রুত অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই লুইস সততার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, 'ভয় না পেয়ে সরাসরি বলুন—আমি সত্যিই দুঃখিত, কিন্তু আমি এটি বদলে অন্য কিছু নিতে চাই। আপনার কাছে কি মূল রসিদটি আছে?'
