যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে সাগরে নামল চীনের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ‘ফুজিয়ান’
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে টেক্কা দিতে যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন। দেশটির এ যাবৎকালের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী [এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার] 'ফুজিয়ান' আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নৌবহরে যুক্ত হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি শুক্রবার জানিয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সপ্তাহের শুরুতে হাইনান দ্বীপের সানিয়া সামরিক বন্দরে 'ফুজিয়ান'-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
'ফুজিয়ান' হলো চীনের তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় ও আধুনিক বিমানবাহী রণতরী। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, এই রণতরীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর 'তড়িৎ-চুম্বকীয় বিমান উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা' [ইলেকট্রোম্যাগনেটিক এয়ারক্রাফট লঞ্চ সিস্টেম বা 'ইমালস']। এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ-চুম্বকের প্রচণ্ড শক্তিতে বিমানগুলোকে ছুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে যুদ্ধবিমানগুলো অনেক বেশি পরিমাণে অস্ত্র ও জ্বালানি নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারে এবং আরও দূরবর্তী লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। তিন ধরনের বিমান উড্ডয়ন করানো সম্ভব এই প্রযুক্তি দিয়ে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক রণতরী 'ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড'-এ এই প্রযুক্তি রয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, 'ফুজিয়ান'-এ এই উন্নত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন।
বুধবার বিকেলে আয়োজিত এই অভিষেক অনুষ্ঠানে দুই হাজারের বেশি নৌবাহিনীর সদস্য ও রণতরী নির্মাণকর্মীর উপস্থিতিতে শি জিনপিং পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর তিনি পুরো জাহাজটি ঘুরে দেখেন এবং পরীক্ষামূলকভাবে বিমান উৎক্ষেপণের বোতাম চাপেন।
রণতরীর বিমান ওঠা-নামার ডেকে (ফ্লাইট ডেক) চীনের জে-৩৫, জে-১৫টি এবং কেজে-৬০০ যুদ্ধবিমান প্রদর্শন করা হয়। কাছেই নোঙর করা ছিল দেশটির দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী 'শানডং', যা এই শক্তি প্রদর্শনীকে নতুন মাত্রা দেয়।
'ফুজিয়ান' ২০২২ সালে পানিতে ভাসানো হয় এবং ২০২৪ সালে এর সমুদ্র মহড়া শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছিল, যেকোনো সময়েই এর কমিশনিং হতে পারে।
দেশটির দ্রুত সামরিক আধুনিকীকরণ, বিশেষ করে নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ, জাতীয় গর্বের এক বড় উৎস হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই খবরটি শীর্ষ ট্রেন্ডিং বিষয়ে পরিণত হয়। 'আমার দেশের প্রথম ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপুল্ট সজ্জিত বিমানবাহী রণতরী যাত্রা শুরু করল' হ্যাশট্যাগটি এক ঘণ্টার মধ্যে ১০ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পায়।
শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী গড়ে তুলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় মিত্রদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে বেইজিংয়ের নৌবাহিনী এখন ওয়াশিংটনের চেয়ে বড়। তবে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিমানবাহী রণতরীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিচালিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীগুলো দীর্ঘ সময় সমুদ্রে থাকতে পারে। অন্যদিকে, 'ফুজিয়ান' প্রচলিত জ্বালানিতে চলে, যার অর্থ এটিকে জ্বালানি ভরার জন্য বন্দরে ভিড়তে হবে অথবা সমুদ্রে ট্যাংকারের সাহায্য নিতে হবে।
৮০ হাজার টন ওজন বহনে সক্ষম 'ফুজিয়ান' যুক্তরাষ্ট্রের ৯৭ হাজার টনের নিমিৎজ-ক্লাস রণতরীর কাছাকাছি সক্ষমতার। তবে চীন ইতোমধ্যে টাইপ ০০৪ নামে আরেকটি রণতরী তৈরির কাজ শুরু করেছে, যা শুধু ইমালস প্রযুক্তিই নয়, পারমাণবিক শক্তিচালিতও হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
