নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে মামদানি বনাম কুমোর সর্বশেষ জরিপ যা বলছে
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগাম ভোটদান ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন নিবন্ধিত ভোটার শহরের পরবর্তী নেতাকে বেছে নিতে ভোট দেবেন।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনসের তথ্য অনুযায়ী, গত নয় দিনের আগাম ভোটে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৩১৭টি ভোট পড়েছে—যা ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনের মোট আগাম ভোটের চেয়ে চার গুণেরও বেশি।
সর্বশেষ রিয়েলক্লিয়ারপলিটিক্স-এর গড় অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি ৪৫.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে ৩১.১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে ১৪.৭ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন মামদানি। অন্যদিকে, রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়ারার চেয়ে ১৭.৩ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে মামদানি ২৮.৫ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
তবে, সোমবার রাতে কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। এই শেষ মুহূর্তের সমর্থন ভোটারদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকার (ডিএসএ) সদস্য মামদানি তার প্রস্তাবিত নীতিগুলোর মাধ্যমে উদারপন্থী ভোটারদের উৎসাহিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য বিনামূল্যে চাইল্ডকেয়ার, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং প্রায় এক মিলিয়ন ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী নিউ ইয়র্কবাসীর জন্য ভাড়া স্থগিত।
নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতি চার বছর অন্তর মেয়র নির্বাচনের আয়োজন হয়, এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বর্তমান মেয়র, ডেমোক্র্যাট এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি চলতি বছরের শুরুতেনিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। তার প্রত্যাহারের পেছনে কয়েকটি বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফেডারেল ফৌজদারি মামলা, যা এপ্রিল মাসে একজন বিচারক বাতিল করেন।
এই বছরের নির্বাচনের বিশেষত্ব হলো তিন-পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যেখানে প্রগ্রেসিভ, এস্টাবলিশমেন্ট এবং কনজার্ভেটিভ শক্তি দেশটির বৃহত্তম শহরে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে।
পোলগুলো কতটা নির্ভুল?
রিয়েলক্লিয়ারপলিটিক্স-এর বিভিন্ন পোল অনুযায়ী, মামদানি কুমোর থেকে ৩ থেকে ২৫ পয়েন্টের মধ্যে এগিয়ে আছেন। এটি নির্দেশ করে যে পোলগুলোর মধ্যে বিভিন্নতা আছে, তাই মামদানি এগিয়ে থাকলেও সঠিক ব্যবধান এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রতিটি পোলেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে। পোলস্টাররা চেষ্টা করেন যাতে নমুনা জনগণকে যথাসম্ভব প্রতিফলিত করে এবং বৃহত্তর ভোটারদের ধারণা দেখায়, তবে তাতেও কিছু ত্রুটির সীমা থাকে। তাই, কোনো প্রার্থীর প্রকৃত সমর্থন রিপোর্ট করা সংখ্যার থেকে কয়েক পয়েন্ট বেশি বা কম হতে পারে। এছাড়াও, প্রতিটি সমীক্ষক প্রায়শই বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করেন, যেমন অনিশ্চিত ভোটারদের কিভাবে গণনা করা হবে তা নিয়ে, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন পোলের ফলাফল একত্রিত করলে পক্ষপাত কমাতে সাহায্য হয়।
তবে, এই বছরের শুরুতে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারির বেশিরভাগ পোলের অনুমান ভুল ছিল, মূলত কুমোকে মামদানীর উপর সহজ জয়ের আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামদানি বৃহৎ ব্যবধানে জয়ী হন।
পোলিং কীভাবে কাজ করে?
এমারসন কলেজ, মারিস্ট কলেজ এবং কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি-এর মতো পোলিং সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে জনমত জরিপ চালায়, যাতে প্রাইমারি এবং সাধারণ নির্বাচনের আগে ভোটারদের মনোভাব বোঝা যায়। জরিপে র্যান্ডম স্যাম্পলিং ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ভোটারদের ফোন, টেক্সট বা অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। ভোটারদের তারা কোন প্রার্থীকে পছন্দ করেন, তাদের ভোটে প্রভাব ফেলা মূল বিষয়গুলো কী ও প্রার্থী বা কর্মকর্তাদের অনুমোদন রেটিংয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়।
পোলের ফলাফলে ত্রুটির সীমারেখা এবং নমুনার আকার উল্লেখ থাকে, যা ফলাফলের নির্ভুলতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়নে সহায়তা করে।
ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া
এ প্রক্রিয়া প্রাইমারির মতো নয়। এখানে র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং ব্যবহৃত হয়েছিল; সাধারণ নির্বাচনে ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট সিস্টেম প্রয়োগ করা হয়, অর্থাৎ যিনি সর্বাধিক ভোট পান, তিনিই জয়ী হন।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, নিউ ইয়র্ক সিটিতে মোট ৫.১ মিলিয়ন নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, ১১ শতাংশ রিপাবলিকান, এবং প্রায় ১.১ মিলিয়ন কোনো দলভুক্ত নয়। গত ২৫ নভেম্বর ভোটার নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে মাত্র ১.১ মিলিয়নের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছিলেন, যা মোট নিবন্ধিত ভোটারের প্রায় ২১ শতাংশ।
ভোটার হতে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের অবশ্যই:
- মার্কিন নাগরিক হতে হবে
- কমপক্ষে ৩০ দিন নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাস করতে হবে
- ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী হতে হবে (১৬ বা ১৭ বছর বয়সে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা যায়, তবে ভোট দিতে পারবেন না ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত)
- কোনও গুরুতর অপরাধের জন্য কারাগারে না থাকা
- আদালত কর্তৃক মানসিকভাবে অযোগ্য বলে বিবেচিত না হওয়া
- অন্য কোথাও ভোটের জন্য নিবন্ধিত থাকা যাবে না
ভোটকেন্দ্র কখন খোলা এবং বন্ধ করা হবে?
৪ নভেম্বর (১১:০০ জিএমটি – ৫ নভেম্বর, ০২:০০ জিএমটি) ভোট কেন্দ্রগুলো স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
শহরের বিভিন্ন স্থানে সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে, ভোট কেন্দ্রগুলো সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে খোলে এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে বন্ধ হয়।
আগাম ভোটদান ২৫ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এবং ২ নভেম্বর শেষ হয়। আগাম ভোটের জন্য খোলা সমস্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা নিউ ইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনসের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
