খরচের দিক থেকে সেরা হলে কেন প্রতিদিন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড চেক করতে হবে: ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ঢাকা মেট্রোরেলের লাইন-৬ তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেট্রো হওয়ার কথা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। এরপরেও কেন প্রতিদিন সকালে বিয়ারিং প্যাড চেক করতে হবে বলে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) মেট্রোরেল প্রকল্প এবং এর পরিচালনার সার্বিক বিষয় নিয়ে উত্তরার ডিএমটিসিএল ভবনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক আহমেদ বলেন, 'মেট্রোরেলের স্থায়িত্ব ১০০ বছর আর বিয়ারিং প্যাডের ৫০ বছর ধরা হলেও এক বছরের মাথায়ই কেন বিয়ারিং প্যাড নিয়ে আতঙ্কিত থাকতে হবে? প্রতিদিন সকালে কেন বিয়ারিং প্যাড চেক করতে হবে?'
তিনি আরও বলেন, 'মেট্রোরেল বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই যারা মেট্রোরেল রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ তাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
স্বাধীন নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, 'আমরা একটি স্বাধীন নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি৷ আমরা উপদেষ্টা পরিষদের কাছে সুপারিশ করেছি, হয়তো ২-৩ মাস লাগবে এটা করতে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এটা করবো।'
তিনি বলেন, 'আমরা এখনও মেট্রোরেলের কাজ বুঝে নেইনি। কিন্তু বুঝে নেওয়ার আগেই মেট্রোরেলের কাজের নানা ত্রুটি ধরা পরছে। প্রকল্পের কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান আগে কাজ বুঝে নিয়ে আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনও আমরা লাইন-৬ এর কাজ বুঝে পাইনি। বুঝে নেবার দায়িত্ব ছিল কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের। অদক্ষতার কারণে হয়তো সেখানে ঘাটতি ছিল।'
মেট্রোরেলের দুর্ঘটনায় ৪ টি কারন থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ফারুক আহমেদ। তবে তিনি তদন্ত রিপোর্ট সম্পন্ন হওয়ার আগে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না।
তিনি বলেন, '২০২৪ এর দুর্ঘটনার পরে আমারা স্বশরীরে ও ড্রোনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। গত দুই মাস আগে আমারা আবারও দেখেছি। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।'
তিনি আরও বলেন, 'মেট্রো আমাদের করতে হবে। আমরা চাই দক্ষ অর্থায়ন করতে, স্থানীয়দের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার চেষ্টা আমাদের আছে। এখানে বিনিয়োগকারীর স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয়ও আছে। আমরা চাই তরুণদের যুক্ত করে ডিএমটিসিএল এর সক্ষমতা বাড়াতে। আমাকে বিয়ারিং প্যাডের ৫০ বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমি তো অনেকটাই অসহায়।'
নকশা প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'নতুন মেট্রোরেল লাইনগুলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নকশা পরিবর্তন করা হবে। আমরা রাজনৈতিক দলসহ যারা পিলারে পোস্টারিং করছেন তাদের সরে আশার আহ্বান করছি। আমরা ফিজিক্যাল ক্র্যাকগুলো এসব থাকলে বুজতে পারব না।'
তিনি বলেন, যারা আগে মেট্রোরেলের কাজ বুঝে নিয়েছে কিংবা যারা দিয়েছে তাদের অবশ্যই অনিয়মের জন্যে আইনের আওতায় আনা উচিত। সরকারের তদন্ত শেষ হলে অবশ্যই সেটা হবে বলে আশা।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গ কাজ বুঝে নেইনি। আমরা তাদের কাছে ৩ মাস ধরে বারবার নোটিশ দিয়েও পাচ্ছি না। আংশিকভাবে বুঝে নিলেও ঠিকাদারের মেজর ভুলগুলোতে কাজ করার কথা দুই থেকে আড়াই বছর। কিন্তু সেটাও হয়নি। এখানে দায় তো নিশ্চই আছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি পিলারের বিয়ারিং চেক করছি এবং যেখানে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব লোকবল নেই দ্রুত এটা শেষ করার, কিন্তু থার্ড পার্টি নিয়োগ দিয়ে করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১২/১৩ টি করে পিলার পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
