ঘুমের সমস্যার সমাধান কি 'বিস্ময়কর খনিজ' ম্যাগনেসিয়ামেই লুকিয়ে আছে?
এই মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচিত খনিজগুলির মধ্যে একটি হলো ম্যাগনেসিয়াম। ঘুম ভালো করা, হজমের সমস্যা মেটানো, বা মানসিক শান্তি আনা – এমন নানা কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি গ্রহণ করছেন। সাপ্লিমেন্টের জগতে এখন ম্যাগনেসিয়ামের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
বিশ্বজুড়ে এর বাজার প্রায় ৩ বিলিয়ন পাউন্ডের, এবং আগামী দশকে তা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের একটি ছোট কারখানায় এর উৎপাদন চলছে পুরোদমে, যেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট পাঠানো হচ্ছে।
কেন এত জনপ্রিয়তা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জনপ্রিয়তার পেছনে সামাজিক মাধ্যম এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের বড় ভূমিকা রয়েছে। পুষ্টিবিদ কার্স্টেন জ্যাকসন একে 'চতুর বিপণন কৌশল' বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, মানুষ ঘুম, হজম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক, আর ম্যাগনেসিয়ামকে এই সবকিছুর সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
ম্যাগনেসিয়াম কী এবং কেন প্রয়োজন?
ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ, যা ৩০০-এর বেশি শারীরিক প্রক্রিয়ায় জড়িত। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা এবং হৃদস্পন্দন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম এবং মহিলার ২৭০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আমাদের শরীরে প্রায় ২৫ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম সঞ্চিত থাকে, যার বেশিরভাগই হাড় এবং কোষের মধ্যে থাকে।
সাপ্লিমেন্ট কি সত্যিই কাজ করে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট তখনই কার্যকর হবে, যখন শরীরে এর ঘাটতি থাকবে। তবে এই ঘাটতি নির্ণয় করা বেশ কঠিন, কারণ রক্ত পরীক্ষায় এর সঠিক মাত্রা বোঝা যায় না।
অনেকেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়ার কথা বলেন। কেটি কুরান নামের একজন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জানান, তিনি ঘুমের সমস্যায় ভুগছিলেন। ম্যাগনেসিয়াম গ্লাইসিনেট সাপ্লিমেন্ট নেওয়া শুরু করার দুই সপ্তাহ পর থেকে তাঁর ঘুম ভালো হতে শুরু করে এবং তিনি সতেজ অনুভব করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এই সময়ে তাঁর জীবনে অন্যান্য পরিবর্তনও এসেছিল, তাই শুধুমাত্র সাপ্লিমেন্টকেই এর কারণ বলা কঠিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, কিন্তু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেই যে ঘুম ভালো হবে, তার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। পুষ্টিবিদ ক্রিস্টেন স্টাভরিডিস জানান, এই বিষয়ে পরস্পরবিরোধী গবেষণা রয়েছে। কিছু গবেষণায় এর উপকারিতার কথা বলা হলেও, অনেক উচ্চ মানের পরীক্ষায় তেমন কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি।
ঝুঁকি এবং সতর্কতা
স্বাস্থ্যবান মানুষ প্রয়োজনের বেশি ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে, কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের করে দেয়। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নিলে ডায়রিয়া, বমি এবং বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা হতে পারে।
বিশেষত যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। এর ফলে হাইপারম্যাগনেসিমিয়া হতে পারে, যা একটি জীবনহানিকর অবস্থা এবং এর কারণে রোগী কোমা বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কী?
পুষ্টিবিদরা একমত যে, সাপ্লিমেন্টের আগে খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া উচিত। বীজ, বাদাম, শস্য-জাতীয় খাবার, সবুজ শাক-সবজি এবং ফলের মতো খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
তাঁদের মতে, যারা এই ধরনের খাবার নিয়মিত খান না, তাঁদের শরীরে সম্ভবত ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং ফাইবারের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিরও অভাব রয়েছে। শুধুমাত্র একটি ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এই সমস্ত ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। তাই যেকোনো সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
