তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলে সংসদের ক্ষমতা খর্ব হবে কি না: প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়, তাহলে সেটি সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কি না- এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বুধবার (২২ অক্টোবর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে আপিল বিভাগে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
এদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের আবেদনকারী সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে তার আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
তিনি আপিল বিভাগকে বলেন, 'হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত মোট ১২ জন বিচারপতি এ মামলাটি শুনেছেন। এর মধ্যে ৮ জন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ চারজন তা বাতিলের পক্ষে ছিলেন।'
এ সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী জানতে চান, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো হয়, তবে তা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে?'
এর জবাবে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আপিল বিভাগ একটি গাইডলাইন নির্ধারণ করে দিতে পারেন।'
শুনানির সময় এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক মামলার আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলার আপিল শুনানি হবে না।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ইতিহাসে ফিরে দেখা যায়- ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ব্যবস্থা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ রিটটি খারিজ করে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ২০০৫ সালে রিট আবেদনকারীরা আপিল করেন।
এরপর ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেন। ওই রায়ের পর ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। একই বছরের ৩ জুলাই সংশোধনীর গেজেট প্রকাশিত হয়।
পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হলেন- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।
এরপর গত ১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এসব রিভিউ আবেদনগুলোর ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে আপিল বিভাগ পুনরায় পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানির নির্দেশ দেন।