২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পার্টিকল বোর্ডের বাজারে প্রবেশ করল আরএফএল

দেশের পার্টিকেল বোর্ড বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে। শিল্পখাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে নিজস্ব নতুন ব্র্যান্ড 'প্লাইম্যাক্স' নিয়ে এই বাজারে প্রবেশ করছে। ব্র্যান্ডটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামীকাল।
নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রতিষ্ঠানটির স্থাপিত কারখানায় উৎপাদিত হবে প্লাইম্যাক্স বোর্ড। প্রাথমিকভাবে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে ১৩ লাখ বোর্ড। আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন এই উদ্যোগে শুরুতে প্রায় ৫০০ জনের কর্মসংস্থান হবে, যা পরবর্তীতে দেড় হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।
আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পল বলেন, 'বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্ড উড পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।' তিনি বলেন, 'আমরা প্লাইম্যাক্স বাজারে এনেছি যাতে ফার্নিচার, দরজা ও ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের জন্য উচ্চমানের এবং সাশ্রয়ী বিকল্প পণ্য নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, যা আমাদের বিদ্যমান ব্যবসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, প্লাইম্যাক্স শিগগিরই গ্রাহকদের মধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য নাম হয়ে উঠবে।'

প্লাইম্যাক্সের উদ্বোধন আরএফএলের পণ্যের পরিসর বৈচিত্র্যময় করার সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক্স, নির্মাণ সামগ্রী এবং গৃহস্থালির পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে কার্যক্রম পরিচালনা করা এই গ্রুপ দেশের সর্বত্র বিস্তৃত বিতরণ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে খুচরা ও শিল্পখাতের গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশে পার্টিকেল বোর্ড শিল্পের মোট মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতি বছর আনুমানিক ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় উৎপাদকরা বাজারের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ সরবরাহ করে, বাকি ২৫-৩০ শতাংশ মূলত ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি হয়।
যদিও এই খাতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি রয়েছে, তবুও বর্তমানে বাজারে নেতৃত্বে রয়েছে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড মিলস (আকিজ বোর্ড)। আকিজ বোর্ড বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর রয়েছে সুপার বোর্ড, যা প্রায় ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, এবং পারটেক্স (স্টার/পারটেক্স গ্রুপ), যা প্রায় ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বাকি অংশটি ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আকিজ বশির গ্রুপের আওতাধীন আকিজ বোর্ড ময়মনসিংহের ত্রিশালে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বোর্ড কারখানা পরিচালনা করছে। কারখানাটি জার্মান প্রযুক্তি 'সিম্পেলকাম্প কনটিরোল' ব্যবহার করে বোর্ড উৎপাদন করে। এই শিল্পে আকিজের পাশাপাশি পারটেক্স স্টার/স্টার পার্টিকল বোর্ডও তাদের শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের বহুমুখী কোম্পানি কাঠামোর সমর্থনে এই সফলতা অর্জন করেছে।
দেশের অন্যান্য কোম্পানি যেমন অ্যাম্বার বোর্ডস, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ, উডল্যান্ড এবং আহমেদ বোর্ডস এই খাতে প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে। এর ফলে প্রযুক্তির উন্নয়ন, বাজারে বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাড়ির ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, ফার্নিচার উৎপাদন বেড়ে যাওয়া এবং বাড়ির অভ্যন্তরীন সাজসজ্জার প্রতি চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকার কারণে বাংলাদেশে পার্টিকেল বোর্ডের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফার্নিচার, আলমারি, দরজা এবং ফ্লোর টাইলসের জন্য প্রাকৃতিক কাঠের তুলনায় এই বোর্ডগুলো সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আরএফএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্লাইম্যাক্স বোর্ডে পানিরোধী প্যারাফিন মোম এবং নির্গমন-মুক্ত আঠা ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। এই পণ্যটি দেশের সর্বত্র অনুমোদিত ডিলার, খুচরা বিক্রেতা এবং জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম 'অথবা ডট কম' (othoba.com)-এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। প্রতি বোর্ডের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য রাখা হয়েছে ১,৯৬০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্লাইম্যাক্স-এর মাধ্যমে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে একটি ব্র্যান্ডেড ও উচ্চ-মানের বিকল্প দিয়ে বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করতে চায়। তারা মূলত আসবাবপত্র, ঘরের সাজসজ্জা (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) এবং বাড়ি মেরামতের কাজকে লক্ষ্য করছে।