২০২৫ সালের নোবেল বিজয়ীদের আইকনিক প্রতিকৃতি আঁকা কে এই নিকোলাস এলমেহেদ?

প্রতি বছর অক্টোবর মাসে যখন বিশ্বজুড়ে মানুষ নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে, তখন তাদের চোখে সবার আগে যে ছবি ধরা পড়ে তা কোনো ফটোগ্রাফ নয়, বরং মনোমুগ্ধকর সোনালি-কালো কালিতে আঁকা প্রতিকৃতি। এই অনন্য চিত্রগুলোর পেছনের কারিগর হলেন নিকলাস এলমেহেদ। তিনি স্টকহোমভিত্তিক ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও নোবেল মিডিয়া এবি-এর আর্ট ডিরেক্টর।
ক্লাসিক প্রতিকৃতি-শৈলীকে আধুনিক ইলাস্ট্রেশনের সঙ্গে মিশিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত এলমেহেদ। ২০১২ সাল থেকে নোবেল বিজয়ীদের সরকারি প্রতিকৃতি আঁকছেন তিনি এবং বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ঘোষণাকে রূপ দিচ্ছেন এক অনন্য উপস্থাপনায়।
কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে কাজ করে তিনি। বিজয়ীদের নাম জানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিটি প্রতিকৃতি হাতে আঁকা শেষ করেন তিনি, যাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এসব ছবি সারা বিশ্বের দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায়।
নোবেল পুরস্কারের প্রতিকৃতি আঁকায় নিকলাস এলমেহেদের যাত্রা
এলমেহেদ সুইডেনে ফাইন আর্টস বা চারুকলা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং ডিজিটাল ও প্রিন্ট ডিজাইনে তার বিস্তৃত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাংবাদিকতা, ইতিহাস ও চারুকলার সমন্বয়ে তার কাজ গড়ে উঠেছে, যেখানে তিনি বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শান্তির পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিদের অর্জনকে একটি প্রতীকী ছবিতে তুলে ধরেন।
নোবেল মিডিয়া এবি-এর আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে তিনি নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় যাবতীয় ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের তত্ত্বাবধান করেন। নিখুঁততা, গল্প বলার ক্ষমতা এবং নান্দনিকতার সমন্বয়ে তিনি এমন প্রতিকৃতি তৈরি করেন যা একদিকে মর্যাদাকে ফুটিয়ে তোলে, অন্যদিকে তাৎক্ষণিকতার আবহও ধরে রাখে।
এলমেহেডের আগে নোবেল বিজয়ীদের ঘোষণায় প্রায়শই ব্যবহৃত হতো কমমানের ফটোগ্রাফ, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হত। এলমেহেদ হাতের তৈরি প্রতিকৃতি প্রবর্তন করেন, যেখানে সাদা পটভূমিতে কালো আউটলাইন এবং ঝকঝকে সোনালি ফয়েল ব্যবহার করা হয়। এই ডিজাইনটি নোবেল পুরস্কারের ২০১৭ সালের গ্রাফিক্যাল রিব্র্যান্ডিংয়ের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এই শৈলী প্রতিকৃতিগুলোকে কালজয়ী ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেয়, নোবেলের ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে এবং প্রতিটি বিজয়ীর জন্য একটি অনন্য ভিজ্যুয়াল পরিচয় সৃষ্টি করে।
পর্দার পেছনের কাহিনি
গোপনীয়তা এলমেহেদের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি নোবেল কমিটির বাইরে খুব অল্প সংখ্যক মানুষদের মধ্যে একজন, যিনি আগে থেকেই বিজয়ীদের নাম জানতে পারেন।
কঠোর সময়সীমার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তিনি দ্রুত আঁকেন, তবুও বিস্তারিত এবং মানের কোনো ক্ষতি হয় না। প্রতিকৃতিগুলো ঠিক সময়মতো সম্পন্ন হয়, যাতে বিশ্বের মিডিয়া তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতীকী চিত্রগুলো খবরের সঙ্গে প্রদর্শন করতে পারে।
২০২৫ সালে এলমেহেদ 'দ্য গোল্ডেন ওয়াল' উন্মোচন করেন, যেখানে স্টকহোমের নোবেল সদর দপ্তরে বছরের সকল নোবেল প্রতিকৃতি প্রদর্শিত হয়। এ বছরের প্রতিকৃতিগুলোর মধ্যে আছেন মেডিসিনের বিজয়ী মেরি ব্রানকো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাকাগুচি, এবং এগুলো নোবেলের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নোবেল পুরস্কারের বাইরে এলমেহেদ আন্তর্জাতিকভাবে তার কাজ উপস্থাপন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, টেডএক্স প্যাট্রাস ২০২৫-এ তিনি চেহারার মাধ্যমে গল্প বলার ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ওসাকায় ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫-এর নর্ডিক প্যাভিলিয়নে একটি লাইভ পেইন্টিং পারফরম্যান্সও করেন।
এলমেহেদের জন্য প্রতিটি প্রতিকৃতি কেবল শিল্পকর্ম নয়; এটি একটি দৃশ্যমান গল্প বলার মাধ্যম। তিনি এমন কাজ তৈরি করতে চান যা তাৎক্ষণিক খবরের জরুরি ভাবকে প্রতিফলিত করে, একই সঙ্গে বিজয়ীদের ন্যায্যতা ও স্বচ্ছন্দতার সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে উপস্থাপন করে।
তার লক্ষ্য হলো প্রতিটি প্রতিকৃতিকে শক্তিশালী ও অনন্য ভিজ্যুয়াল ছাপ দেওয়া, বিশ্বের সেরা মেধাবী ব্যক্তিদের এমন একটি শৈলীতে ধারণ করা যা একবার দেখলেই সহজেই চিনতে পারা যায় এবং চিরকাল তা মনে থাকবে।