ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের চলমান আন্দোলনের তৃতীয় দিনেও তেমন সাড়া না পেয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তারা বলেছেন, আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে দাবি মেনে না নিলে তারা শাহবাগ অবরোধ করবেন।
এছাড়া যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা, আমরণ অনশনসহ আরো কঠোর কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) 'রোড টু সচিবালয়' কর্মসূচিকালে হাইকোর্টের সামনে পুলিশ শিক্ষক-কর্মচারীদের পদযাত্রা আটকে দেওয়ার পর তারা এ ঘোষণা দেন।
এর আগে আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষক-কর্মচারীরা হাইকোর্ট মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। আজ বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে 'মার্চ টু সচিবালয়' কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, 'আজ রাতে আমরা হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় অবস্থান করব। আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা শাহবাগ অবরোধ করব। পাশাপাশি সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।'
শিক্ষক নেতারা বলেন, তাদের আর পিছু হটার সুযোগ নেই। কারণ, আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সরকারকে আমাদের দাবি মানতেই হবে।
এ আন্দোলনের জেরে সারা দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম গত দুদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। দাবি মানা না হলে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকেরা ।
এর আগে দাবি মেনে নিয়ে আজ বিকেল ৪টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা বা আশ্বাস না পাওয়া তারা সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার প্রস্তুতির সময় অর্থবিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এরই মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য যান।
দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সে সময় বলেছিলেন, 'আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি না, তবে আপাতত স্থগিত রেখেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আমাদের অনুরোধ করেছেন, যাতে আমরা লং মার্চ কর্মসূচি না করি।'
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেয় যে আমাদের তিনটি দাবি মেনে নিয়েছে, তাহলে আমরা সচিবালয়ের দিকে যাব না। প্রজ্ঞাপন তারা যেকোনো সময় দিতে পারে।'
আজীজি বলেন, 'আমি বলেছি, ৪টার মধ্যে আমাকে জানাতে হবে। যদি এর মধ্যে না জানান, আমার শিক্ষক-কর্মচারী ভাইদেরকে কোনো অবস্থাতেই সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা থেকে কেউ বিরত রাখতে পারবে না।'

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো: মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া; চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা ।
জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব দাবিতে কোনো 'দর কষাকষির সুযোগ নেই'। সরকার বিকাল পর্যন্ত দাবি না মানলে শিক্ষকরা সচিবালয়ের উদ্দেশে পদযাত্রা করবেন।
সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, কর্মসূচিতে অংশ নিতে হাজারো শিক্ষক উপস্থিতিত হয়েছেন সেখানে।
সকালে দেলাওয়ার হোসেন আজীজি বলেন, 'দেশের প্রত্যেকটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠাননে কঠোরভাবে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে । এতে অচল ও স্থবির হয়ে পরেছে শিক্ষাঙ্গন । আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারী কোনোরকম শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেছেন। যেকোনো মুহূর্তে আমরা সুসংবাদ পাব আশা করছি। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন কঠোর রূপ ধারণ করবে।'
শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে টানা দুইদিন ধরে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দেশের অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে । এতে টাইফয়েডের টিকার রেজিস্ট্রেশন ও টিকাদান কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

এর আগে গতকাল শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষক কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা আগের দিন প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান । একইসঙ্গে আটককৃত আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন ।
গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ শিক্ষকদের সরাতে গেলে ধস্তাধস্তি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকেই লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
