তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি: এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে এলেও ক্লাস নিচ্ছেন না

বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। ধর্মঘটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না। কেউ কেউ এলে শিক্ষকরা তাদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বগুড়া, নওগাঁ, খুলনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। শিক্ষকরা বলছেন, কর্মবিরতি শেষে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি জেনে গেছে।
নওগাঁ সদরের ভীমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জহুরা মিষ্টি বলেন, 'আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা আছেন। গত পরশু দিন স্কুলে গিয়েছিলাম। স্যারেরা জানালেন, ঢাকায় আমাদের শিক্ষকদের উপর হামলা হয়েছে, তাদের মারধর করা হয়েছে। এগুলো সমাধান না হলে আপাতত স্কুলের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না। আপাতত সব বন্ধ। শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান হলে এলাকায় মাইকিং করে তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে- কবে থেকে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।'
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. খাদিজা খাতুন জানান, গত দুইদিন ধরে স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী আসছে না। স্কুলের পাশেই তার বাড়ি, তাই প্রতিদিন সকালে গিয়ে খোঁজ নেন কেউ এসেছে কিনা।
তিনি বলেন, 'স্কুলে শিক্ষকরা থাকলেও ক্লাস করাচ্ছেন না। শিক্ষকদের যদি কোনো সমস্যা থাকে, সরকার সেটার সমাধান করুক। আমরা ক্লাস করতে চাই।'
বগুড়া সচেতন শিক্ষক সমাজের সদস্য সচিব ও বগুড়া ফয়েজুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সাজেদুর রহমান বলেন, 'বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মবিরতি চলছে। আমি স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় শুধু স্বাক্ষর করছি। দু-চারজন শিক্ষার্থী আসলে তাদের বুঝিয়ে বলছি, বাবা আমাদের কর্মবিরতি চলছে। স্কুলে ক্লাস শুরু হলে তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।'
তিন দফা দাবিতে সারাদেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। এর ফলে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এর ফলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। জেলার প্রায় ৪০০ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বুধবার দুপুরে জেলা শহরের কয়েকটি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এলেও আন্দোলনের খবর শুনে বাড়ি ফিরে গেছেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে দুইদিন ধরে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে স্কুলে এসে ফেরত যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আন্দোলনরত শিক্ষকদের তিন দফা দাবির সবগুলোই যৌক্তিক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।'