মাদাগাস্কারে অবৈধভাবে ও জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে: প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার কার্যালয়

মাদাগাস্কারে অবৈধভাবে ও জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার কার্যালয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্যাপস্যাট বলে পরিচিত একটি বিদ্রোহী সেনা ইউনিট দাবি করেছে, তারা সামরিক কমান্ডের নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, স্থল, বিমান ও নৌসহ সবগুলো বাহিনী এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। খবর বিবিসি'র।
২০০৯ সালে এই সেনা ইউনিটটিই মালাগাসির রাজনৈতিক সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এর মধ্য দিয়েই আন্দ্রি রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী 'জেন-জি' আন্দোলনে উত্তাল মাদাগাস্কার। ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। পরে তা বেকারত্ব, দুর্নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে রাজোয়েলিনার সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর অসন্তোষে রূপ নেয়।
রাজোয়েলিনা বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।'
তিনি এই প্রচেষ্টাকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেন এবং কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ করেন। একই সঙ্গে জাতির সব শক্তিকে সংবিধান ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ক্যাপস্যাট জানিয়েছে, তারা নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল ডেমোস্থেন পিকুলাসকে নিয়োগ দিয়েছে। সংস্থার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এএফপি জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী মানান্তসোয়া দেরামাসিনজাকা রাকোতোআরিভেলো এই নিয়োগ মেনে নিয়েছেন। নিয়োগ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, 'আমি তাকে আশীর্বাদ দিচ্ছি।'
এদিকে, বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা পুরো সরকারকে ভেঙে দিলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং রাজধানী আন্তানানারিভোর রাজপথ এখন 'রাজোয়েলিনা হটাও' স্লোগানে মুখর। গত শনিবার (১১ অক্টোবর) আন্দোলনকারীরা রাজধানী আনতানানারিভোর ঐতিহাসিক 'মে ১৩' চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করে।
একজন আন্দোলনকারী বিবিসিকে বলেছেন, তারা 'অবশেষে মে ১৩ চত্বর—গণতন্ত্রের চত্বর জয় করেছেন'। তিনি আরও বলেন, 'আমরা খুশি এবং স্বস্তি বোধ করছি। এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়। প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম থামাব না।'
শনিবার ক্যাপস্যাটের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার পর থেকেই আন্দোলনে সফলতা পেতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ক্যাপস্যাটের বেশ কয়েকজন সৈন্য ব্যারাক ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন। অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর বিক্ষোভ দমনের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ক্যাপস্যাট।
ফ্রান্স জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তারা অন্তত মঙ্গলবার পর্যন্ত আনতানানারিভোর ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন মাদাগাস্কারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং উভয় পক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
মাদাগাস্কারের সংকট শুরু হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। রাজধানী আন্তানানারিভোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দেওয়ায় দুই শীর্ষ রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনাই অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢেলে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহকারী সংস্থার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবন আগে থেকেই বিপর্যস্ত ছিল।
গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। 'জেন-জি মাডা' নামে তরুণদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দ্রুতই এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে। যা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে রাজধানী ছাড়িয়ে দ্বীপের আরও আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণে ব্যর্থ এবং এর পেছনে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি।
সরকারি পরিষেবার সংকট নিয়ে শুরু হলেও বিক্ষোভটি এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো ইশতেহার না থাকলেও তাদের মূল দাবি প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ।
অনিরাপদ ভবিষ্যৎ ও স্বল্প বেতনের চাকরিতে থাকা তরুণেরা দেশের দুরবস্থার জন্য প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করছেন। 'জেন-জি মাডা'-র একজন মুখপাত্র বলেন, তারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পাশাপাশি 'জাতীয় পরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত' করতে চান। এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের দায়ভার প্রেসিডেন্টকে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।
বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে দেশটির বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনসহ একাধিক ইউনিয়ন। বিরোধীদলীয় নেতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্টও এক যৌথ বিবৃতিতে বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা প্রেসিডেন্টের সরকারে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবকে জনগণের সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' বলে আখ্যা দিয়েছেন।