মরক্কোতে জেন-জি বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩, হাজারের ওপর গ্রেপ্তার
মরক্কোয় দুর্নীতি ও সরকারি ব্যয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলমান 'জেন-জি' বিক্ষোভে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। দেশজুড়ে টানা ছয় রাত ধরে বিক্ষোভ চলছে।
বুধবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আগাদিরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ছোট শহর লেকলিয়াতে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মরক্কোর পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছেন, সরকারি ব্যয়ের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং দুর্নীতি বাড়ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থান আরও উত্তেজনা বাড়াচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার সময় তিনজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য মেলেনি।
এদিকে দেশজুড়ে বিক্ষোভে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। মরোক্কান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যেও বিক্ষোভ থামাতে সংলাপে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখনুশ। বৃহস্পতিবার তিনি এ ঘোষণা দেন।
'জেন-জি ২১২' নামের একটি বেনামি তরুণ সংগঠন অনলাইনে এ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও গেমিং অ্যাপ ডিসকর্ড ব্যবহার করে তারা আন্দোলনের প্রচার চালাচ্ছে।
স্লোগান ও পোস্টারের মাধ্যমে তারা বলছে, ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হলেও স্কুল ও হাসপাতালগুলো তহবিলের অভাবে করুণ অবস্থায় পড়ে আছে।
মরক্কোজুড়ে চলমান বিক্ষোভে সাধারণ মানুষ নতুন করে নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামগুলোর সমালোচনা করেছেন। তাদের স্লোগান—'স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু হাসপাতাল কোথায়?'
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৩টি প্রদেশে সহিংসতায় শত শত গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে ব্যাংক, দোকানপাট ও সরকারি ভবনও।
অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের সংগঠন 'জে-জি ২১২' বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো ধরনের সহিংসতা সমর্থন করে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই, সমস্যাটা কেবল সরকারের সঙ্গেই।
বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় সংগঠনটি জানায়, আজও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তারা জানান, এটি হবে দাবি আদায়ের 'সভ্য ও দায়িত্বশীল প্রকাশ'। সংগঠনটি অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আহ্বান জানায়, যেন কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়ানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংগঠনটি আরও বলে, আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।
আফ্রিকা কাপ অব নেশনস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মরক্কো। সামনে রয়েছে ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনও। এই সময়ে দেশজুড়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য।
মরক্কোয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রায় নিয়মিত ঘটনা। তবে চলতি সপ্তাহে হওয়া বিক্ষোভ ছিল সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস। পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উত্তরাঞ্চলের রিফ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা।
