পানির নিচে বিশ্বের প্রথম ডেটা সেন্টার বসাবে চীন, প্রাকৃতিকভাবেই ঠান্ডা থাকবে সার্ভার, কমবে বিদ্যুৎ খরচ

ভাবুন তো, পুরো ইন্টারনেট জগৎটা যদি সংরক্ষণ করা হতো সাগরের অতল গভীরে? শুনতে কল্পবিজ্ঞানের মতো মনে হলেও, এমন এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ—প্রচণ্ড বিদ্যুৎ খেকো ডেটা সেন্টারের সমাধান খুঁজছে দেশটি। এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাংহাই উপকূলে সাগরের নিচে সার্ভার ডুবিয়ে দিয়ে বিশাল কুলিং খরচ কমানোর আশা করছে প্রকল্পটি।
সাংহাইয়ের কাছের একটি জেটিতে কর্মীরা এখন একটি বড় হলুদ ক্যাপসুলের শেষ মুহূর্তের কাজ সারছেন। সমুদ্র সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাইল্যান্ডার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত নির্মাণ সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ক্যাপসুলটি বিকল্প প্রযুক্তি অবকাঠামোর দিকে অন্যতম একটি পদক্ষেপ।
ভূমিতে থাকা ডেটা সেন্টারগুলো যেখানে বিদ্যুৎ-নির্ভর এয়ার কুলিং বা পানি বাষ্পীভবন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে সমুদ্রের নিচের সার্ভারগুলো প্রাকৃতিকভাবেই ঠান্ডা সমুদ্রস্রোত ব্যবহার করে নিজেদের শীতল রাখবে।
এর আগে মাইক্রোসফট ২০১৮ সালে স্কটল্যান্ড উপকূলে একই ধরনের একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল, কিন্তু তারা এটিকে বাণিজ্যিকভাবে আর এগিয়ে নেয়নি। এর বিপরীতে, সাংহাইয়ের প্রকল্পটি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সাগরে স্থাপন করা হবে এবং এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক সাবমেরিন ডেটা সেন্টার।
চায়না টেলিকম এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থার মতো বড় গ্রাহকদের পরিষেবা দেবে এই কেন্দ্রটি, যা ডেটা অবকাঠামোর কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টারই প্রতিফলন।
মাইক্রোসফটের প্রকল্পটি মূলত এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ছিল। ২০২০ সালে পরিচালিত সেই পরীক্ষায় প্রযুক্তিগত সাফল্য মিললেও নির্মাণ ও পরিচালনায় নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
চীনে এ ধরনের উদ্যোগে সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। হাইল্যান্ডার ২০২২ সালে হাইনান প্রদেশের একটি প্রকল্পের জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউয়ান (৫ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার) ভর্তুকি পেয়েছিল, যা এখনও চালু রয়েছে।
সাংহাইয়ের এই ক্যাপসুলটি উপকূলে বিভিন্ন অংশে তৈরি করে সমুদ্রে স্থাপন করা হবে। এর বিদ্যুতের মূল উৎস হবে কাছের অফশোর উইন্ড ফার্ম বা বায়ুকল। হাইল্যান্ডার জানিয়েছে, এর ৯৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে।
তবে লবণাক্ত পানির ক্ষয় থেকে সার্ভারগুলোকে বাঁচানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্টিলের ক্যাপসুলের ওপর কাচের গুঁড়োযুক্ত একটি প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণ ব্যবহার করেছে।
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পানির ওপরে থাকা একটি অংশের সঙ্গে ডুবন্ত ক্যাপসুলটির সংযোগ স্থাপন করেছে একটি লিফট। এ ছাড়া, ভূমির সার্ভারের চেয়ে পানির নিচে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করাও বেশ জটিল বলে এএফপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সামুদ্রিক বাস্তুবিদরা এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রু ওয়ান্টের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানির নিচের ডেটা সেন্টার থেকে নির্গত তাপ কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতিকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে। এর জবাবে হাইল্যান্ডার জানিয়েছে, ঝুহাইয়ের কাছে তাদের পরীক্ষামূলক প্রকল্পের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পানির তাপমাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যেই ছিল।
নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা সমুদ্রের নিচের ডেটা সেন্টারকে স্থলভাগের অবকাঠামোর প্রতিস্থাপক হিসেবে না দেখে বরং পরিপূরক হিসেবেই দেখছেন। সাংহাইয়ের এই পরীক্ষা সফল হলে, তা ডিজিটাল বিশ্বকে শক্তি জোগানোর জন্য আরও বেশি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী এবং সমুদ্র-ভিত্তিক একটি পদ্ধতির আভাস দিতে পারে।