জামায়াত-বিএনপির বাইরে আলাদা জোট গঠনের পরিকল্পনা এনসিপির

দলীয় সূত্রমতে, জামায়াত ও বিএনপির বাইরে পৃথকভাবে নতুন রাজনৈতিক জোট গড়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যদিও জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত এনসিপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসছে।
এনসিপি গঠনের আগে ও পরে জামায়াত দলটির বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিয়েছে, অংশও নিয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে জামায়াত সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ করে।
এমনকি এনসিপির নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিকের দাবিতেও জামায়াত সমর্থন করে। যদিও এসব দাবিতে বিএনপি তখন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে।
তবে আট মাস বয়সি দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও সম্প্রতি জামায়াতের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিতে দলটির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবে এনসিপি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণ অধিকার পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে জুলাই সনদ ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল পিআরসহ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করে। প্রথমে এই কর্মসূচিতে এনসিপির অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পরে তারা সরে আসে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংস্কার প্রশ্নে অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নৈকট্য হয়েছে। জামায়াতের নিজস্ব রাজনীতি আছে, আমাদেরও স্বতন্ত্র রাজনীতি আছে। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তির সাথে নৈকট্য অনুভব করি। জামায়াতের সাথে আলাদাভাবে সুসম্পর্ক, বিষয়টি সেরকম না।'
জামায়াতের চলমান কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, 'জামায়াত আমাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য আলোচনা করেছিল। কিন্তু নিম্নকক্ষে পিআরের পক্ষে আমরা না। এছাড়া আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের কথা বলেছি। সেখানে জামায়াত সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছে। তারা গণভোটের দাবি থেকেও পিছিয়ে এসেছে। সেজন্য সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে আমাদের পৃথক কর্মসূচি দেশব্যাপী চলমান আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিচার ও সংস্কার নিয়ে এখনও আমাদের চিন্তায় অনেক নৈকট্য আছে। সেসবের প্রেক্ষিতে একসাথে কাজের সুযোগ থাকলে থাকতে পারে।'
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তরুণদের নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র জোটের ইঙ্গিত করে আদীব বলেন, 'বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে আমরা ইতিমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের সাথে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। জুলাই সনদের ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।'
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জামায়াটের নেতৃত্বে যে যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে, তার সাথে এনসিপি নেই। 'আমরা অংশগ্রহণ করছি না। কারণ নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না। নিম্নকক্ষে পিআরের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি,' বলেন তিনি।
এনসিপির সমন্বয় সভায় নাহিদ বলেন, 'এই মুহূর্তেই আমরা কোনো জোটভিত্তিক চিন্তাভাবনা করছি না বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। নাগরিক পার্টি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আগাবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে।'
জুলাই সনদকে সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং সেই অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন—জামায়াতের এমন দাবির বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, তারা এই সরকারের অধীনেই সনদের বাস্তবায়ন চান। 'এক্ষেত্রে সর্বোত্তম পথ হলো গণপরিষদ, যা একইসঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে।'
অন্যদিকে এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার টিবিএসকে বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও অন্যান্য ব্যাপারে বিভিন্ন দলের সাথে আমাদের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক চলমান আছে। পিআরের দাবিতে আমাদের আন্দোলনে আরও শক্তিশালী করতে দ্বিতীয় দফায় দলগুলোর সাথে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করি ভালো কিছুই হবে।'
এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনি জোট, চলমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, 'তাদের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে এখনও সময় আছে। সামনে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সামনে নানা সমীকরণ ও মেরুকরণ হতে পারে। আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।'
বদলে যাওয়া জোট ও মেরুকরণের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'এখনও তো তফসিল ঘোষণা হয়নি। তার আগে নানা রকমের মেরুকরণ হবে। প্রত্যেকটি দল তার কৌশলগত অবস্থান ঠিক রাখতে তৎপরতা চালাবে। এনসিপির মতো ছোট দলগুলো বোঝার চেষ্টা করবে জামায়াত না বিএনপি কোন দলের সাথে থাকলে সঠিক রাজনীতি হবে। আবার বড় দলগুলো ভাববে কাদেরকে সাথে নিলে ক্ষতি নেই, লাভ আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখনও চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি। দেশের রাজনৈতিক ও সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন যত নিকটে আসবে, সমীকরণ তত বদলাবে।'