দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের, স্বাস্থ্যখাতে প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের গড় পারিশ্রমিক সবচেয়ে কম। শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, উন্নত দেশের তুলনায় এই পারিশ্রমিক প্রায় ৩০ গুণ কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বৈষম্য স্বাস্থ্যসেবার মান এবং জনবল ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে 'স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি জনবলের বেতন নীতি: বর্তমান বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ' শীর্ষক আলোচনা থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। সভার আয়োজন করে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশ। এতে নীতিনির্ধাপক, শিক্ষাবিদ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন।
অধ্যাপক হোসেন জানান, বাংলাদেশে একজন চিকিৎসকের গড় বার্ষিক বেতন মাত্র ৩ লাখ টাকা। তুলনায় যুক্তরাজ্যে এটি ৯৮ লাখ টাকা, আর সিঙ্গাপুরে ১১ লাখ টাকা।
নার্সদের ক্ষেত্রেও বেতনের ব্যবধান চোখে পড়ার মতো। প্রতিবেশী ভারতের চিকিৎসক গড়ে ১৬ লাখ টাকা পান, আর নার্সদের বেতন ৬ লাখ টাকা; যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। নেপালেও তুলনামূলকভাবে বেতন বেশি।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের বেতন বৈষম্য শুধু পেশাগত উৎসাহ কমায় না, অনেক দক্ষ চিকিৎসক বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অধ্যাপক হোসেন বলেন, 'চিকিৎসক-নার্সদের বেতন বৃদ্ধি করলে স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী হবে এবং দক্ষ জনবলের দেশত্যাগ কমবে। সরকার ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।'
সভায় বক্তারা স্বতন্ত্র বেতন নীতি প্রণয়নের এবং চিকিৎসা পেশাজীবীদের জন্য আলাদা পে কমিশন গঠনের দাবি জানান। তারা বলেন, বেতন ও ভাতা যৌক্তিকীকরণ করা উচিত এবং প্রতি তিন বছর পরপর হালনাগাদ করতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, 'স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। বর্তমান বেতন কাঠামো স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তিকে দুর্বল করছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের বেতনের বৈষম্য শুধু দক্ষতা ও কর্মপ্রেরণায় নয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক মানেও প্রভাব ফেলছে।'
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পে কমিশনের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, শ্রম ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অধ্যাপক ডা. শাহিনা সোবহান মিতু, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল এবং এনডিএফ-এর সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন।