সিডনিতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষের পদযাত্রা

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে একটি পরিকল্পিত ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের একদিন পরই অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেটিকে আয়োজকেরা 'ঐতিহাসিক' সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসির।
রোববার প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও 'মার্চ ফর হিউম্যানিটি' নামের এই কর্মসূচিতে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। অনেকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
এই বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায় উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ-কে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল এমপি এড হুসিক এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক প্রিমিয়ার বব কার।
সিডনি হারবার ব্রিজ সর্বশেষ ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড প্রাইড উপলক্ষ্যে জনসমাবেশের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ব্রিজ পার হয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, 'শেম শেম ইসরায়েল, শেম শেম আমেরিকা', এবং 'আমরা কী চাই? যুদ্ধবিরতি। কখন চাই? এখনই।'
শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে অংশ নিতে ব্রিজে হাজির হয় অনেক পরিবার, তাদের সঙ্গে ছোট ছোট শিশু এবং নবজাতকও ছিল। তাদের পাশে সেতুর বিভিন্ন অংশে দাঙ্গা দমনকারী পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
অ্যালেক বেভিল নামের এক বাবা বলেন, 'আমি জানি, এটা আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরের একটি ঘটনা, কিন্তু এটি এখানকার ওপরেও গভীর প্রভাব ফেলছে।' তিনি গাজার শিশুদের সঙ্গে নিজের তিন বছর বয়সী ছেলে ফ্র্যাঙ্কি'র তুলনা করে বলেন, 'আমরা আরও অনেক বেশি সাহায্য পাঠাতে পারতাম।'
জারা উইলিয়ামস, যিনি তার শিশু অ্যাভেরিকে কোলের স্লিংয়ে নিয়ে অংশ নেন, বলেন, 'আমাদের সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আমরা (অস্ট্রেলিয়া) পুরো একটি জনগোষ্ঠীর উপর জোরপূর্বক দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়ার সময় চুপচাপ বসে থাকতে পারি না।'
মার্চ শুরুর দুই ঘণ্টা পর, অংশগ্রহণকারীরা নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের একটি টেক্সট বার্তা পান, যাতে লেখা ছিল, 'আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, জননিরাপত্তার কারণে মার্চ থামাতে হবে। পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন।'
বার্তায় সেতুতে থাকা সকলকে উত্তরের দিকে হাঁটা বন্ধ করে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে শহরের দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পুলিশের অনুমান অনুযায়ী, রোববারের এই মার্চে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ অংশ নেন।
এদিকে, ট্রান্সপোর্ট ফর এনএসডব্লিউ মোটরচালকদের শহর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয় এবং জানায় যে, বিক্ষোভের কারণে সিডনির সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিলম্ব ও বিঘ্ন ঘটছে।
সিডনিভিত্তিক অ্যাকটিভিস্ট সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ গাজায় সংঘটিত 'নৃশংসতার' প্রতিবাদে সিডনি হারবার ব্রিজে বিক্ষোভের জন্য গত রোববার একটি আবেদন দাখিল করে।
তবে পুলিশ আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে, কারণ তাদের মতে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল না, এবং ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল।
পরদিন এক বিবৃতিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস বলেন, 'সিডনিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না', এবং এ ধরনের 'আকার ও প্রকৃতির' কোনো বিক্ষোভ ব্রিজে অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে সমর্থন দেওয়া সম্ভব নয়।
এনএসডব্লিউ পুলিশ এই কর্মসূচিকে নিষিদ্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে একটি নিষেধাজ্ঞা আদেশের আবেদন করে, তবে বিক্ষোভের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (এবিসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচারক বেলিন্ডা রিগ বলেন, মার্চ ঘিরে নিরাপত্তা সংশয়গুলো যুক্তিসংগত, তবে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের সংগঠক জোশ লিস আদালতে 'জোরালোভাবে' ব্যাখ্যা করেন কেন গাজায় মানবিক সংকটের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জরুরি।
বিচারক আরও বলেন, মার্চ নিষিদ্ধ করলে জননিরাপত্তা বাড়বে—এমন কোনো প্রমাণ আদালতের সামনে আসেনি।
এরপর তিনি নির্দেশ দেন, সিডনি হারবার ব্রিজ যানবাহনের জন্য বন্ধ রাখা হবে, এবং প্রস্তাবিত রুট ঘিরে থাকা আশপাশের সড়কগুলোও বন্ধ রাখা হবে, যাতে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
শেষ মুহূর্তে আদালতের অনুমোদনের ফলে, অংশগ্রহণকারীরা এখন সামারি অফেন্স অ্যাক্ট-এর আওতায় আইনি সুরক্ষা পাচ্ছেন।
এর ফলে, যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি বা সার্বজনীন সমাবেশ সংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা যাবে না।
নিউ সাউথ ওয়েলসের জিউইশ বোর্ড অব ডেপুটিজ ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে 'হতাশ'।
এদিকে, ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য যদি শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে অস্ট্রেলিয়ার ওপরও একই রকম স্বীকৃতি দেওয়ার চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবিসি'র '৭.৩০ প্রোগ্রাম'-এ কথা বলার সময়, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়—এমন শর্ত পূরণ না হলে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দেশের চাপের মুখে পড়ে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না।