শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, বিক্ষোভে উত্তাল কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসের একটি পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুকে রহস্যজনক দাবি করে দ্রুত তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মরদেহের নাক-মুখে রক্ত এবং দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এতে শিক্ষার্থীদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
সাজিদ আব্দুল্লাহ ছিলেন ইবির আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আজ শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সাজিদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সহপাঠী, শিক্ষক, ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন, এবং দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবন ত্যাগ করতে দেখা যায়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা "আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে", "জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস", "তুমি কে, আমি কে—সাজিদ সাজিদ", "প্রশাসন প্রশাসন, ধৈঞ্চা ধৈঞ্চা"—ইত্যাদি স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। তারা বলেন, "প্রশাসনের ভূমিকা সন্দেহজনক। যদি দ্রুত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।"
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে: সাজিদের মৃত্যুর দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ।
শিক্ষার্থীদের এসব দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে উল্লেখ করে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
সাজিদের বাবা ও সহপাঠীরাও এ ঘটনায় গভীর সন্দেহ প্রকাশ করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।