চট্টগ্রামে উড়ালসড়কের নিচ থেকে রেলিং চুরি: নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ উড়ালসড়কগুলোর (ফ্লাইওভার) নিচ থেকে দিনের আলোয় রেলিং চুরির ঘটনা ঘটলেও তা ঠেকাতে কার্যকর তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক প্রকাশ্যেই উড়ালসড়কের নিচ থেকে রেলিং খুলে নিচ্ছে। এ সময় আশপাশে থাকা পথচারীরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও কোথাও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বেলাতেই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। অথচ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এসব চুরির জন্য দায়ী। এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের চুরির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে এরইমধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে। যেকোনো অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অজানা কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, "অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনলে এমন ঘটনা কমে আসবে। পাশাপাশি স্ক্র্যাপের দোকানগুলোতে নজরদারি ও চোরাই মালামাল কেনা নিরুৎসাহিত করতে হবে। এতে এসব চুরি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হবে।"
চট্টগ্রাম নগরবাসীর যাতায়াত সহজ করতে এবং যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীতে চারটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে শোলকবাহার থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া বাটালি স্টেশন থেকে ধনিয়ালাপাড়া পর্যন্ত একটি উড়ালসড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৮ কোটি এবং দেওয়ানহাট উড়ালসড়কের জন্য ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি টাকা।
উড়ালসড়কগুলো নির্মাণ করেছে সিডিএ, তবে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্যায়ন ও মেরামতের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ওপর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট ও আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের নিচের গাছ, রেলিং, লাইটিং কিংবা বিলবোর্ড তদারকির জন্য কেউ নেই। অনেক জায়গা থেকে রেলিং তুলে নেওয়া হয়েছে। বাকি যেসব গাছ রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই শুকিয়ে যাচ্ছে বা মারা যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও এগুলো পানির অভাবে অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দাবি, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের দায়িত্বে ছিল। তবে চুক্তি বাতিল হওয়ায় নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে এলাকাগুলো এখন কার্যত অনিরাপদ ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা অভিযানের মাধ্যমে দোষীদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গতকালই এসব চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল বলেন, "আমরা কেবল কারিগরি বিষয় নিয়ে কাজ করি। উড়ালসড়কে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে আমরা সেখানে যাই। বাকি বিষয়গুলো দেখাশোনা করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।"
সিটি করপোরেশনের বন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী চৌধুরী বলেন, "আমরা সরাসরি এসব বিষয় তদারকি করি না। 'ট্রেড মার্কস' নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসবের দায়িত্বে ছিল, তবে কয়েক মাস আগে তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দায়িত্ব নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা আছে।"
সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর বলেন, "বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি নেই। তাই আমাদের নিজস্ব মালী দিয়েই যতটা সম্ভব দেখভাল করা হচ্ছে। এবার একাধিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কাজ চলছে, আমরা খুব দ্রুতই বিষয়টি সমাধান করব।"