চালক ছাড়াই ভাড়ায় মিলবে গাড়ি, সিলেটে ৪ তরুণের উদ্যোগে ‘ইউড্রাইভ’-এর যাত্রা শুরু

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের পিনাক দে যুক্তরাজ্য প্রবাসী। মাসখানেকের জন্য তিনি দেশে এসেছেন। দেশে এসে তাকে গাড়ি নিয়ে পড়তে হয়েছে ঝামেলায়।
প্রথমে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়েছিলেন পিনাক। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই প্রাইভেটকার চালকের নানা আবদার-আপত্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। চালকের আপত্তির কারণে ইচ্ছেমতো সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতেও পারেন না। তাছাড়া গাড়ির একটি সিটও থাকে চালকের দখলে।
এই ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে, দিন পনেরো দিন আগে একটি নতুন প্রাইভেট কার কিনেই ফেলেন পিনাক। তিনি বলেন, 'ঝামেলা এড়াতে গাড়ি কিনে ফেলেছি। যাওয়ার সময় এটি বিক্রি করে দেব। তবে এতে লাখ তিনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে।'
প্রবাসীদের শহর হিসেবে পরিচিত সিলেটে ভ্রমণ বা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে অনেকেই যানবাহন নিয়ে এমন বিপাকে পড়েন। আবার সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও চান গাড়ি নিয়ে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে।
প্রবাসী আর পর্যটকদের এমন চাওয়া পূরণে এগিয়ে এসেছেন সিলেটের চার তরুণ—আফজাল হোসেন চৌধুরী, এনামুল হাসান, ইফতেখার ইরাদ এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিব্বির আহমেদ। তারা গড়ে তুলেছেন 'ইউড্রাইভ' নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে চালক ছাড়াই শুধু গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে।
এ সেবার আওতায় ভাড়া নেওয়া যাবে মার্সিডিজ, করোলা, অ্যালিয়নসহ বিভিন্ন মডেলের প্রাইভেটকার। নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন ও ভেরিফিকেশন শেষ করলেই মিলবে এই সুবিধা। ভাড়াও তুলনামূলকভাবে কম—১২ ঘণ্টার জন্য ন্যূনতম ২,৫০০ টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া ইউড্রাইভ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ৫০০টির বেশি ট্রিপ। নিয়মিত গাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন অন্তত ৭০ জন গ্রাহক। বুধবার (২৩ জুলাই) প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।
ইউড্রাইভের সহ-উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন চৌধুরী জানান, পর্যটক ও প্রবাসীদের অনেকে গাড়ি নিয়ে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে চান। চালকের ঝামেলা পোহাতে চান না। আবার চালক গাড়ির একটি সিট দখল করে ফেলার কারণেও বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়ে চালকবিহীন গাড়ি ভাড়া প্রদানের এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যে কেউ ভাড়া নিতে পারেন সেলফ ড্রাইভ কার।'

বর্তমানে ইউড্রাইভের গাড়ির সংখ্যা ১৬টি। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, বছরের শেষে তা বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং ১০ হাজার ট্রিপ সম্পন্ন করা।
উদ্যোক্তাদের আরেকজন ইফতেখার ইরাদ জানান, প্রবাসীরা দেশের বাইরে থেকেই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি ভাড়া নিতে পারবেন। তারা দেশে আসার সময়ই বিমানবন্দরে প্রস্তুত থাকবে গাড়ি।
তিনি বলেন, 'সিলেটের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করার কথা ভাবছি আমরা।'
ইউড্রাইভের কাছ থেকে নিয়মিত গাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন পর্যটকদের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান 'ট্রাভেলার অব গ্রেটার সিলেট'-এর কর্ণধার শেখ রাফি। তিনি বলেন, 'অনেক পর্যটক নিজের মতো করে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চান। তাদের জন্য এটি ভালো উদ্যোগ। বাইরের দেশগুলোতে এমন সুযোগ রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'পর্যটকদের গাড়ি প্রদানের ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা প্রয়োজন। কারণ, তারা ঘুরতেই আসেন সামান্য সময়ের জন্য।'
'ইউড্রাইভ'-এর আরেক সেবাগ্রহীতা ইসমাইল হোসেন বলেন, 'আমরা বাইরের দেশে গেলে এই সার্ভিস পাই। কিন্তু সিলেটে এতদিন এ সুযোগ ছিল না। ইউড্রাইভের কাছ থেকে চালক ছাড়াই গাড়ি ভাড়া নিয়ে আমার প্রবাসী স্বজনরা খুবই সন্তুষ্ট।'