ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নোয়াখালীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকেও দুই জেলার বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে, যার ফলে শত শত গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে এবং হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ফেনীর চার উপজেলার শতাধিক গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর ছাগলনাইয়াতে পুরান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে। ফলে যান চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।
অন্যদিকে, নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতার কবলে পৌর এলাকাসহ পাঁচ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

ফেনীর বাসিন্দা সোলাইমান হাজারী জানিয়েছেন, 'নদীর পানি কিছুটা কমে গেলেও বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। একটার পর একটা গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফেনীর শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।'
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। সেনাবাহিনী নৌকা থেকে শুরু করে শুকনো খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল জানিয়েছেন, তাদের ১৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ৫০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ৮ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফেনীর ছয়টি উপজেলার সবগুলোতেই কমবেশি পানি প্রবেশ করেছে। তবে চার জেলার পরিস্থিতি বেশি অবনতির দিকে যাচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, 'সকাল ৯টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বাঁধ ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'পানি কমার পর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।'
নোয়াখালীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৫ মিলি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে বেলা পাচঁটা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি চলছিল।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জেলায় এক দিনে পানি বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার। পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচরে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অনেকের বসতঘরে পনি ঢুকেছে।
এছাড়া, চারটি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, রামপুর ও চর এলাহী ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী ও বামনী নদীর তীরবর্তী এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মুছারপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ সড়ক ডুবে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
অপরদিকে, জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে ঢুবে গেছে। পাড়া-মহল্লায় বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নোয়াখালী পৌর শহরের স্টেডিয়াম পাড়া, ডিসি সড়ক, জেলখানা সড়ক এলাকা, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিংসহ বেশিরভাগ এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুর কাছাকাছি পানি উঠে পড়েছে।
এছাড়া, এসব এলাকার নিচতলা ও কাঁচা ঘরগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
চলতি বর্ষায় শহরের বেশিরভাগ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় সড়কগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে পানি বাড়তে থাকায় নোয়াখালী জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১০ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।
তবে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানান, 'টানা বৃষ্টিপাতই পানির উচ্চতা বৃদ্ধির মূল কারণ।'
তিনি বলেন, 'বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি নির্ভর করছে রাতের বৃষ্টির পরিমাণের ওপর।'

এদিকে, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইস্তিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, 'বন্যা ও জলাবদ্ধতার অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা মাঠে কাজ করছেন।'
জানা যায়, ৯ জুলাই জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভা থেকে আগামী ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা হবে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলায় পানি বেড়েছে। টানা বৃষ্টিই পানি বাড়ার মূল কারণ। বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বুধবার রাতের বৃষ্টির ওপর পরিস্থিতি নির্ভর করবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, জলাবদ্ধতা ও বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছে।