বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তানে 'অতি উচ্চ' বন্যা সতর্কতা জারি

পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের দুটি বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কারণে এই বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরও।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই তীব্র মৌসুমি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত। ভারতের বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার ফলে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আরও বড় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এই প্রদেশে দেশটির মোট ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন।
পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান গত মে মাসে সংক্ষিপ্ত সংঘাতের পর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এখন বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করলে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারত রাভি নদীর উপর থেইন বাঁধের সব কপাট খুলে দিয়েছে। তবে ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এই ঘোষণা আসে ভারতের দ্বিতীয় সতর্কবার্তা পাওয়ার একদিন পর। তাতে বলা হয়েছিল, দ্রুত ভরে ওঠা মাধোপুর বাঁধ থেকেও পানি ছাড়া হবে। দুটি বাঁধই রাভি নদীর ওপর, যা ভারতীয় পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত।
পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ইরফান আলি কাঠিয়া বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। আগামী ৪৮ ঘণ্টা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে থেইন বাঁধ ৯৭ শতাংশ পূর্ণ। যে কোনো সময় পানি ছাড়া হতে পারে।
ভারত বাঁধে অতিরিক্ত পানি জমলে নিয়মিত তা ছেড়ে দেয়, যা পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় পাঞ্জাব প্রদেশ দুই দেশে বিভক্ত হয়েছিল।
দিনের শুরুতে ভারত সরকারের এক সূত্র জানায়, তারা কোনো নির্দিষ্ট বাঁধের নাম উল্লেখ করেনি। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে টানা দুই দিনে দ্বিতীয় সতর্কবার্তা পাকিস্তানকে কূটনৈতিক চ্যানেলে পাঠানো হয়েছে। আরও সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে সূত্রটি জানায়, তা সম্ভব।
অন্য এক ভারতীয় সূত্র বলেন, মানবিক কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করা হচ্ছে, যাতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যায়। কারণ প্রবল বর্ষণে ভারতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার থেকে পাকিস্তানে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, পাঞ্জাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ ১৪ আগস্টের পর স্বেচ্ছায় সরে গেছেন।
রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদীর তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম থেকে লোকজনকে সরানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছে। তিন নদীতেই মাঝারি থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় পাঞ্জাব ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আরও ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত সীমান্তঘেঁষা পশরুর শহর ঘুরে এসে ডেপুটি কমিশনার সাবা আসগর আলি জানান, বর্তমানে ১৬টি গ্রাম বন্যার ঝুঁকিতে আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ শিবিরে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পাঞ্জাব প্রদেশের সেচমন্ত্রী কাজিম রেজা পিরজাদা বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলোতে আগের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।'
জুনের শেষদিকে মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে বন্যায় ৮০২ জন মারা গেছেন, যার অর্ধেকই এ মাসে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এ মাসে মারা গেছেন অন্তত ৬৮ জন।
এদিকে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল গিলগিট-বালতিস্তানে হিমবাহ দ্রুত গলছে। দক্ষিণের করাচি শহরের বড় অংশও গত সপ্তাহে প্লাবিত হয়েছিল।