শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০, জরুরি অবস্থা ঘোষণা
শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় 'দিটওয়াহ'র প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় এখনো দুই শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি দেশটির অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসি'র।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গৃহহীন ১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে সরকারি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানিবিহীন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে একে দেশের ইতিহাসের 'সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ব্যাপক যে পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ 'অকল্পনীয়'।
কেলানি নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় বেশ কিছু এলাকায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মধ্য শ্রীলঙ্কার এক নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার এলাকায় পাথর ও কাদার নিচে প্রায় ১৫টি বাড়ি চাপা পড়েছে। তিনি বলেন, 'ওই বাড়িগুলোর কোনো বাসিন্দাই আর বেঁচে নেই।'
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ক্যান্ডি ও বাদুলায়। সেসব অঞ্চলের অনেক এলাকা এখনো মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
বাদুলা গ্রামের বাসিন্দা সামান কুমারা 'নিউজ সেন্টার' ওয়েবসাইটকে ফোনে বলেন, 'আমরা গ্রামের দুজনকে হারিয়েছি। বাকিরা একটি মন্দির এবং এখনো দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভূমিধসে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা গ্রাম ছেড়ে বের হতে পারছি না, আবার কেউ ভেতরেও আসতে পারছে না। আমাদের খাবার নেই এবং পরিষ্কার পানিও ফুরিয়ে আসছে।'
সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দিটওয়াহ গত শুক্রবার দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে এবং পরবর্তীতে সরে যায়। দেশটিতে বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে, তবে এই মাত্রার চরম বৈরী আবহাওয়া সেখানে বিরল ঘটনা। এর আগে দেশটিতে চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ২০০৩ সালের জুনে, যাতে ২৫৪ জন নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
শ্রীলঙ্কার এই দুর্যোগ এমন এক সময়ে দেখা দিল, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশও গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডজুড়ে বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
