বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারতকে দায়ী করল পাকিস্তান

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যা আরও তীব্র হয়েছে। এজন্য তারা নয়াদিল্লির নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং ভারতের একটি ব্যারেজের গেট ভেঙে পড়াকে দায়ী করেছেন।
এই সপ্তাহে টানা মৌসুমি বর্ষণে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সপ্তাহজুড়ে আরও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানে বন্যার পানি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরের উপকণ্ঠে পৌঁছায়। পাশাপাশি বড় শহর ঝাং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ অঞ্চল গত প্রায় চল্লিশ বছরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি।
ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত হওয়া কয়েকটি নদীর পানি দীর্ঘ ছয় দশকের বেশি সময় ধরে 'সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি'-এর আওতায় নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল। এ বছর সেই চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এর আগে নয়াদিল্লি অভিযোগ করে, ইসলামাবাদ সমর্থিত জঙ্গিদের হামলায় ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ২৬ জন নিহত হন। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে যে পানিপ্রবাহের তথ্য নিয়মিত আসার কথা ছিল, তা সময়মতো কিংবা যথেষ্ট বিস্তারিত পাকিস্তান পায়নি।

তিনি বলেন, 'আমাদের হাতে যদি সঠিক তথ্য থাকত, আমরা আরও ভালোভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারতাম। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকর থাকলে আমরা ক্ষতি অনেকটা কমাতে পারতাম।'
এদিকে ভারতের রাভি নদীর ওপর মাধোপুর ব্যারেজের মাঝের অংশ প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে গেছে বলে বৃহস্পতিবার ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, ব্যারেজের ওই ক্ষতিতে নিয়ন্ত্রণহীন পানিপ্রবাহ সৃষ্টি হয়ে শুক্রবার লাহোরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ভারতের এক সরকারি সূত্র অবশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তান প্লাবিত করার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, মাধোপুর ব্যারাজের দুটি গেট ভেঙে গেছে—এটাই মূল কারণ।
ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাভি নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে, যদিও ব্যারাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানে রণজিৎ সাগর বাঁধ থেকে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র বলেছে, 'ভারত যা করার আছে তা-ই করছে এবং সব তথ্যই পাঠানো হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণেই এই বন্যা।'

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জলসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, রোববার থেকে ভারত চারবার বন্যা সতর্কতা পাঠিয়েছে, যার মধ্যে শুক্রবারের সতর্কতাও রয়েছে। নয়াদিল্লি সতর্কবার্তা পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে, তবে বিস্তারিত জানায়নি।
১৯৬০ সালের চুক্তি কার্যত স্থগিত করার পর দুই দেশের পানি বিভাগের মধ্যে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই সপ্তাহে সতর্কতা পাঠানো হয়েছে ইসলামাবাদে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালের নিজ জেলা নরোয়াল (ভারত সীমান্তের কাছে) ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা আর আগে থেকে অনুমান করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নয়, এটি মানবতার সঙ্গে সম্পর্কিত।'
শুক্রবার চেনাব নদীর কারণে জঙ্গ শহর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ আংশিক বাঁধ ভেঙে পানি পার্শ্ববর্তী জমিতে সরিয়ে দেয়।
পূর্ব পাকিস্তানে এ সপ্তাহে তিনটি ভারতীয় নদীর পানি ঢুকে পড়ায় এক কোটি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বর্ষায় এখন পর্যন্ত ৮২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ বসবাস করে এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। বন্যার কারণে সেখানে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।