Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
July 08, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JULY 08, 2025
বাগনদীর ধারা

ইজেল

সাগুফতা শারমীন তানিয়া
07 July, 2025, 12:05 pm
Last modified: 07 July, 2025, 12:11 pm

Related News

  • রাহবারের ছবি, ক্ষেপণাস্ত্র আর ডাক্তারসহ ইরানের দিনগুলো
  • তেহরান শহরের কাল্পনিক বৃষ্টির গল্প 
  • ঐ তে ঐরাবত 
  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ

বাগনদীর ধারা

ইংরেজিতে কেল্লা ফতে বোঝাতে বলা হয়–‘বব’স ইয়োর আঙ্কল।’ এই ববটা কে? ‘অ্যাকিলিসেজ হিল’, ‘মাইডাস টাচ’, ‘প্যান্ডোরাজ বক্স’ আর ‘অ্যাডামস অ্যাপল’ না হয় বোঝা গেল, মিথলজিতে ব্যাখ্যা আছে। সবচেয়ে ছোটটিকে যে ‘বেনজামিন অব দ্য ফ্যামিলি’ বলা হয়–তা কেন? চোখের পলকে বোঝাতে বলা হয়–‘বিফোর ইউ ক্যান সে জ্যাক রবিনসন’, এই ‘জ্যাক রবিনসন’টাই বা কে? আবার করিতকর্মা লোককে ডাকা হয়–‘জ্যাক অব অল ট্রেডস’, লক্কাপায়রা গোছের পুরুষ, যারা ইতিউতি মুখ দিয়ে বেড়ায়, তারাই কেন ‘জ্যাক দ্য ল্যাড’, জ্যাক ইংরেজি ভাষার কী ক্ষতি করেছে যে তাকে এতবার ডাকতে হবে?
সাগুফতা শারমীন তানিয়া
07 July, 2025, 12:05 pm
Last modified: 07 July, 2025, 12:11 pm

আমড়াগাছি 

এই যে বাংলা বাগধারায় 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে' চাপানো হয় চিরদিন, এই উদো আর বুধো কে বা কাহারা? (উদয়চাঁদ কৈবর্ত্য আর বুধুইচাঁদ সদগোপ চাষি) 'হাঁদা গঙ্গারাম'-এর গঙ্গারামটি কে? 'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'-এর গৌরী সেন (যিনি দেনার দায় থেকে মানুষকে উদ্ধার করতেন) কি অদ্যাবধি জীবিত থাকতে পারতেন না? 'আ–লো সোনাভানের মা–কথার পুঁটুলি জানো, কাম জানো না'...এই সোনাভানের মা কে ছিলেন? 'নেপোয় মারে দই'য়ের নেপো? (জেনেছি সে নেপো নামের এক ধোপা, রাজার কাপড় কাচত।) তারপর ধরুন, 'খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল কল্লে এঁড়ে গরু কিনে'...এই তাঁতিটা কে? ছোটবেলায় কল্পনা করতে চেষ্টা করতাম তাঁতির আপনা-বুদ্ধিতে বিরক্ত-তিক্ত-অতিষ্ট চেহারাখানা, আর খুঁটেয় বাঁধা তৎপর-অসহিষ্ণু-আকাইম্যা গরুটার চেহারা। 

বহুকাল পর মনে হয়েছিল, তাঁতিটা আসলে আমি, স্থাপত্য ছেড়ে পুরোপুরি লেখালিখি করতে এসেছি। শুধু দেশের বাকি লোকে জানে না বাগধারার এই তাঁতিটা আমি, ওটা চাপা থাক। বরং যেসব মহাপুরুষ বাগধারায়-ছড়ায়-লোকবুলিতে স্বনামসিদ্ধ, আপন গুণে চিরপ্রচারিত, আজ তাঁদের নিয়ে একটু কথা বলব। এঁরা কেউ কেউ ঐতিহাসিক চরিত্র, কেউ ভুলে যাওয়া মানুষ, কেউ ছাপাখানা চালু হবার আগ থেকেই ফোক-চরিত, কেউ রূপকথায় আছেন, আবার তাঁদের সমাধিও খুঁজে পাওয়া যায় (যেমন টম থাম্ব), কেউ আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষ। নীতি উপদেশ তো বাগধারাতে থাকেই, কখনো সোচ্চার হয়ে কখনো নীরবে। থাকে সদবুদ্ধি, সমাজচিন্তা, মোক্ষম হিউমার আর অতিশয়োক্তি। আলাপ করতে গিয়ে গল্পের গরু গাছে উঠলে ক্ষমা করে দেবেন। 

যারে দিয়ে রামের মা  

বাগধারায় 'ভানুমতীর খেল'–শুনি, ইনি ভোজরাজ কন্যা, রাজা বিক্রমাদিত্যের স্ত্রী, ঐন্দ্রজালিক বিষয়ে পারদর্শিনী। আমরা 'শকুনি মামা', 'কংস মামা' বা 'শিখণ্ডী' এইসব মহাভারতীয় চরিত্রকে বাগধারায় উল্লেখ করি–কারণ, এঁদের চারিত্র সর্বজনবিদিত। শকুনি কুমন্ত্রণাদাতা সর্বনাশকর আত্মীয়, কংস সর্বনাশা পরমাত্মীয়। 'যত দোষ নন্দ ঘোষ' (শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতা) তো হবেই, কৃষ্ণ ভারী দুষ্টু, বালকদল দোষ করলেই নন্দ ঘোষের কাছে নালিশ আসত কৃষ্ণের নামে। 'না বিইয়ে কানাইয়ের মা'-ও কি সন্তানবাৎসল্যপূর্ণা যশোদা? সাত মণ তেল পুড়িয়ে রাধিকা নেচেছিলেন কি না, তা নিয়ে ঢের মাথা ঘামাতাম, পরে পড়েছি এই রাধা আসলে বাবুবিলাসের যুগের এক নর্তকী–রাধারানী। জানি না হরিদাস হালদার তাঁর বইটি (গোবর গণেশের গবেষণা) লিখবার কত আগ থেকে 'গোবর গণেশ' শব্দটা চালু ছিল। 

আমরা যখন বলি 'কেষ্টা ব্যাটাই চোর' (পুরাতন ভৃত্য) বা আক্ষেপ করি–'তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে' (দুই বিঘা জমি), বা 'মরিয়া প্রমাণ করি যে মরি নাই' (জীবিত ও মৃত), তখন ভুলে যাই বাংলায় অনেক বাগধারা/বুলিগুলোর পেছনে আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। আছেন বঙ্কিমচন্দ্র–'পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না', 'বসন্তের কোকিল', 'মাতাল তাহার মাতাল বন্ধুকে...'

'যারে দেয় না মওলা, কী করবে তার আসফ্দ্দৗলা'–এই আসফ্দ্দৗলা অযোধ্যার নবাব। বরুণ চক্রবর্ত্তীর প্রবাদসংক্রান্ত পুস্তকে পাই–বাগধারার পেছনে রাজশাহীর দীননাথ সিংহ নামে দয়ালু মোক্তার ('অন্যের প্রতি দীননাথ, অভাগার কপালে সিংহ'), রাজনগরের যুবরাজ আলিনকী খাঁ ('এক ঘড়িমে লুঠ লিয়া কলকেত্তা বাজার'), পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংহ, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অন্যতম সভাসদ কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী (রসসাগর), আহিরিটোলার জয় মিত্র ('ধরা পড়েছে জয় মিত্তির') এঁরা প্রত্যেকে ঐতিহাসিক চরিত্র। ছোট্ট গল্প জুড়ে দিচ্ছি এখানে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর সভাসদ কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'যার ধন তার ধন নয়কো নেপোয় মারে দৈ' কথাটা কী রকম, রসসাগর? রসসাগর ছড়া কেটে উত্তর দিলেন, 'আয়ান ঘোষ বিয়ে কল্লেন রাজকন্যা রাধা/ নন্দের বেটা কৃষ্ণ তাতে ভাগ বসালেন আধা/ আর শুনেছ দুঃখের কথা আর শুনেছ সৈ/ যার ধন তার ধন নয়কো নেপায় মারে দৈ।' 

সুবলচন্দ্র মিত্র তাঁর পাদটীকাময় অভিধানে জানিয়েছেন, 'হরি ঘোষের গোয়াল'-এর হরি ঘোষ সত্যিকারের মানুষ, কলকাতার লোকহিতব্রতী দেওয়ান, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় ত্রাণকাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। 'ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার'-এ নিধিরাম বর্ধমানের কোনো গ্রামের কীর্তনীয়া, দরিদ্রের সেবা করত, গ্রামে ডাকাত পড়লে সে নিষ্ক্রিয় রইল–অজুহাত দিল ঢাল-তলোয়ার না থাকলে কি আর ডাকাত ঠেকানো যায়! 

একই সুরের বাগধারা 'ধান নাই চাল নাই, আন্দিরাম মহাজন'-এর আন্দিরাম বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষ। 'ভবি ভোলে না'র ভবি বা ভবানী ছিল জেদে অটল কন্যাশিশু, কিছুতেই আবদার ভুলত না। 'লোহার কার্ত্তিক' আসলে নদীয়ার ভয়ংকর ডাকাত কার্ত্তিক দুলে, সেকালে দুর্বৃত্তদের নিজ গ্রামে সর্বসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হতো, কার্ত্তিকের ফাঁসির পর তার মা কেঁদে বলেছিলেন, 'আমার লোহার কার্ত্তিক কোথায় গেল!' শোনা যায়, প্যারিচরণের ফার্স্টবুকের সেই 'আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি, যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি'র যদু মাস্টার রেলের চাকরি করত, দুষ্টু ছাত্ররা বলে এই যদু নাকি স্যার যদুনাথ সরকার। 

ইংরেজিতে 'টম থাম্ব' পড়বার আগে জেনেছিলাম একাঙ্গুইল্যার গল্প, একটি মানুষ এক আঙ্গুলের সমান বা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সমান দীর্ঘ, অবনীন্দ্রনাথের 'বুড়ো আঙলা' গল্পের 'রিদয়' ছোকরাটা যেমন। একাঙ্গুইল্যার কোনো ইতিহাস স্কুলজীবনের পর খুঁজে পাইনি। আমাদের ইতিহাস মূলত কথ্য ইতিহাস–প্রকৃতি ক্ষয়কারী-পাড় ভাঙে-পুস্তিকা ভিজে ওঠে আর্দ্রতায়-পাথর ধুলো হয়-জোয়ারভাটা খেলে-মানুষ মুখের কথাটুকু শুনবার ধৈর্য রাখে মাত্র। 

এই মৌখিক চালাচালিতে বহু ইতিহাস চাপা পড়ে যায়। মান্না দে কাগজে-পাথরে নাম না লিখে হৃদয়ে লিখতে সদুপদেশ দিয়ে গেছেন, তিনি জানতেন না আমাদের হৃদয়ও আমাদের প্রকৃতির মতো দোলাচলময়। ইংরেজ কিন্তু তা করে না, সে খুঁজে বের করে মধ্যযুগে লিংকনশায়ারে সত্যিই টি থাম্ব নামের এক লোক শতবর্ষী হয়েছিলেন, রাজা আর্থারের সভায় একটি টম থাম্ব নামের বামন ছিলেন ইত্যাদি। 

হৃদয় খুঁড়ে আমরা বেদনা জাগাতে ভালোবাসি না, কিন্তু ইংরেজ হৃদয়-সমাধি-প্রত্ন-পুঁথি সব খুঁড়ে দেখতে সিদ্ধহস্ত, সে খুঁড়ে বের করে, নথিবদ্ধ করে, জগৎসভায় যখন কোনো একটি বস্তুর হদিস খুঁজে পাওয়া যাবে না, তখন ইংরেজের খুঁট থেকে বের হয় সেই শুষ্ক নথি। ভাববেন না প্রশস্তি গাইছি। 

অজানা শিল্পীর আঁকা গৌরি সেন।

১৮৩০ সালে প্রথম কবি সারা যোসেফা হেইল প্রকাশ করলেন ছড়া–'ম্যারি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব, ইটস ফ্লিস ওয়াজ হোয়াইট অ্যাজ স্নো'...পঞ্চাশ বছর পর আবিষ্কৃত হলো, এই ম্যারি আসলে ম্যারি সয়্যার নাম্নী এক মহিলা, যিনি শৈশবে একটি মাতৃহীন মেষশাবককে হাতে করে খাইয়ে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। একদিন ছোট্ট ম্যারি এই খুদে ভেড়ার ছানাটিকে ঝুড়িতে করে স্কুলে নিয়ে গেছিল, যতক্ষণ না ছানাটি প্রাণান্তকর ভ্যাঁ-ধ্বনি দিয়ে উঠেছে–শিক্ষক জানতেই পারেনি শ্রেণিতে একটি ভেড়াশাবক উপস্থিত। স্কুলের পোড়োরা এতে খুব আমোদ পেয়েছিল। ম্যারি সয়্যারের স্মৃতিকথায় প্রকাশ–এই ভেড়াটি বড় হয়ে উঠেছে, নিজের বাচ্চাকাচ্চাও হয়েছে তার। 

তবে হ্যাঁ, পশুরা বাগধারায়-বুলিতে-ছড়ায় এলেও তাদের আলাদা ইতিহাস নেই; কারণ, তারা বাগধারায় মানুষের স্বভাবের স্মারক। কোনো শকুন আদতে গরু মরবার দোয়া করেছিল কি না, জানা যায় না, যেমন জানা যায় না ছুঁচো কোনোকালে সত্যি আতর মেখেছিল নাকি ('ছুঁচোয় যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে')। তা হোক, যে কোনো পিঁপড়েই (লাভের) গুড় খায়। 'আপনা গাঁয়ে শেয়াল রাজা'–এ শেয়াল যেকোনো শেয়াল, 'ছাতার বলে গাঁ আমার'–এ যে কোনো ছাতারে পাখি, পাখিকুলে একদা নিকৃষ্ট। 'কুত্তার পেটে ঘি সয় না'–যেকোনো কুকুর। 'ঝাঁকের কই'–যেকোনো কইমাছ। 'বাড়ির গরু ঘাটের ঘাস খায় না'–যেকোনো নির্বুদ্ধি জেদি গরু। 'কাজির গাই কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই'–যেকোনো সরকারের বেলায়ই সত্য। 

কোথাকার জল কোথায় মরে  

আমরা যখন বলি 'কেষ্টা ব্যাটাই চোর' (পুরাতন ভৃত্য) বা আক্ষেপ করি–'তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে' (দুই বিঘা জমি), বা 'মরিয়া প্রমাণ করি যে মরি নাই' (জীবিত ও মৃত), তখন ভুলে যাই বাংলায় অনেক বাগধারা/বুলিগুলোর পেছনে আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। আছেন বঙ্কিমচন্দ্র–'পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না', 'বসন্তের কোকিল', 'মাতাল তাহার মাতাল বন্ধুকে...' (কমলাকান্তের দপ্তর)। 'বাঙালির হাসির গল্প সংগ্রহ'-তে জসীমউদ্দীন বাগধারা শিখিয়েছেন শিশুদের–'আমাদেরটিই তো পথ দেখাইল', 'মুসাফির পুতা লইয়া যাও', 'কত রবি জ্বলে রে, কে বা আঁখি মেলে রে', 'ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখোনি', 'প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ' ইত্যাদি। হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো তাঁর দ্বিতীয় কন্যাকে কোলে করে বেড়াবার সময় মুখে মুখে ছড়া বেঁধেছিলেন–'দেয়ার ওয়াজ আ লিটল গার্ল, হু হ্যাড আ লিটল কার্ল'...হুঁহুঁ বাবা যখন সেই কোঁকড়াচুলো মেয়েটা শিষ্ট, তখন সে খুবই ভালো, আর যখন সে দুষ্টু, তখন তার জুড়ি মেলা ভার! (লংফেলোর পুত্র আর্নেস্ট ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলোর 'র‍্যান্ডম মেমরিজ' স্মৃতিকথায় উল্লেখ) এই ছড়ার কারণে শৈশবে কোঁকড়া চুল নিয়ে অন্তরটিপুনি শুনেছি। পরে রবীন্দ্রনাথের 'ঝাঁকড়া চুলের মেয়ের কথা কাউকে বলিনি',...পড়ে আমার মনে হয়েছে কোথায় যেন দুয়েতে মিল আছে। লংফেলোতে কেবল হাসি-মজা, রবীন্দ্রনাথে হাসিতে লুকোনো অশ্রু। 

'মূলা চোরের ফাঁসি' প্রবাদের আড়ালে ইতিহাসটুকু সত্যি, ১৮০৬ সালে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত এক চোরকে মূলা চুরির দায়ে ফাঁসির হুকুম দিয়েছিল–চোর অজ্ঞাতনামা রয়ে গেছে, সে সাধারণ মানুষ।

যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন 

একই অর্থের বহু বাগধারা আছে, যেমন 'আমিও ফকির হলেম, দেশেও আকাল এল' আর 'আমিও রাঁড়ি/বিধবা হইলাম, রংবেরঙের শাড়িও বাজারে আইল'...অর্থ একই। আবার একই লোকজ ছড়ার ভিন্ন ইতিহাস বহাল। লুইস ক্যারল 'অ্যালিসেজ অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড'-এর সিক্যুয়েল লিখলেন 'থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস, অ্যান্ড হোয়াট অ্যালিস ফাউন্ড দেয়ার'। এই বইটির কারণে শিশুকিশোররা ভাবল 'হাম্পটি ডাম্পটি' আসলে একখানা নিটোল ডিম, দেয়াল থেকে পড়ে গিয়ে ডিমখানা চৌচির। অথচ কেউ বলে–আসল হাম্পটি ডাম্পটি একটি শরাবের নাম, কেউ বলে, এটা পনেরো শতকীয় রিচার্ড দ্য থার্ডের অন্যায় দখলদারির ইতিহাস; কেউ বলে, এ ষোড়শ শতকে কলচেস্টার অবরোধে ব্যবহৃত কামানের নাম; আবার কেউ বলে, উনিশ শতকীয় মেয়েশিশুদের ফ্রকের আড়ালে পা গুটিয়ে ডিগবাজি খেলার নাম ছিল হাম্পটি ডাম্পটি, শিশু ডিগবাজি খাবে তবু তার পা ফ্রকের আড়াল হতে দৃশ্যমান হবে না। 

জাতে জাতে প্রচলিত প্রবাদ সমভাবাপন্ন, হিন্দুতে বলে, 'তিলক কাটলেই বৈষ্ণব হয় না।' রোমান ক্যাথলিকে একই সুরে বলে, 'কাউলস ডোন্ট মেক মঙ্কস।' বাহ্যিক আড়ম্বরে ধার্মিক হয় না লোকে, নিষ্ঠা আবশ্যক। ইংরেজ বলে, 'টু কিল টু বার্ডস উইথ ওয়ান স্টোন', বাঙালি বলে, 'রথ দেখা কলা বেচা'। বাঙালি বলে, 'বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর', ইংরেজ বলে, 'হোয়েন দ্য ক্যাট ইজ আওয়ে, দ্য মাইস আর অ্যাট প্লে'। 'ছুঁচ বলে চালুনি তোর পিছে কেন ছ্যাঁদা', ইংরেজিতে 'দ্য পট কলস দ্য কেটল ব্ল্যাক'। 

টম থাম্ব প্রজাপতির পিঠে।

ভাত খাই কাঁসি বাজাই, রগড়ের ধার ধারি না  

ছেলেভোলানো ছড়া-কবিতা-বুলিতে সরল রূপের পেছনে আছে প্রগাঢ় অন্ধকার ইতিহাস, সেটা বাংলায় হোক বা ইংরেজিতে। দেশে দেশে রূপকথাতেও আছে এমন গাঢ় ছায়া–সেসব ছায়ায়-ছায়ায় মিল নিয়ে বিলেতে ন্যাশনাল সেন্টার ফর রাইটিংয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলাম, এ নিয়ে অন্যত্র সবিস্তারে লিখব। সাধারণ মানুষের জবান হতে উঠে এসেছে বহু বাগধারা। নৌকার মাঝি কবে বলেছিল সে 'হালে পানি পায় না', সেটা ভাষ্যে এসে যোগ হয়েছে। পাশা-খেলুড়িরা এনেছে 'পোয়া বারো', তাস খেলোয়াড় এনেছে 'হাতের পাঁচ'। একটি দার্শনিক মুহূর্তে কোনো চোর এই 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই' বাগধারাটার আবিষ্কর্তা হয়েছে নিশ্চয়ই? সাধারণ মানুষ চিরকাল জেনে এসেছে, 'রাজার আঙ্গুল মোটা মোটা, তাই দেয় ফোঁটা ফোঁটা!' প্রজার আছে অশ্রুসিক্ত ইতিহাস। 

সে 'খুদের জাউ পায় না, ক্ষীরের জন্য কাঁদে!' তার 'পান্তা ভাতে নুন জোটে না, বেগুন পোড়ায় বিষ্ণুতেল'। মাঝে মাঝে সে টের পায়–অদৃষ্ট বদলায় না, 'জাতও গেল, পেটও ভরিল না!' মেদিনীপুরের প্রজারা সহজে খাজনা দিত না বলে জুতোর বাড়ি খেত–বাগধারায় এল 'জুতোর বাড়ি মেরেছে, অপমান তো করতে পারে নাই'। বাংলায় আমাদের 'খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গি এল দেশে'তে বর্গিদের গ্রাম-জ্বালানো ইতিহাস আছে। চিরদিন ভাত দিতে অপারগ কিল মারতে ওস্তাদ গোঁসাই, বাগদীদের ছেলে সে আমলেও জাল মুড়ি দিয়ে ঘুমাত, সর্বস্বান্ত মানুষের নির্জন ভিটেয় ঘুঘু চরত। 'কাঙালি মেরে কাছারি গরম'-এর কাঙালি আজকের সমাজেও বিরল নন, কাছারি গরম করতেই তাঁরা মোসাহেবদের হাতে মরেন। 

'মূলা চোরের ফাঁসি' প্রবাদের আড়ালে ইতিহাসটুকু সত্যি, ১৮০৬ সালে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত এক চোরকে মূলা চুরির দায়ে ফাঁসির হুকুম দিয়েছিল–চোর অজ্ঞাতনামা রয়ে গেছে, সে সাধারণ মানুষ। পশুরা যেমন বাগধারার ইতিহাসে শুভনাম বহাল রেখে যেতে পারেনি, বাংলার চাষি-রাখাল-বাগাল-মুনিষ-জন-জোলা-তাঁতিরাও তেমনি অনামা, দুই দিনের যোগীরাও তেমনি, মাছিমারা কেরানিরাও তেমনি, সাঁকো নাড়াতে মানা করা পাগলরাও তেমনি। তাদের উল্লেখ আছে, আলাদা করে নাম নেই। তবে হ্যাঁ, 'নিত্য চাষার ঝি, বেগুনখেত দেখে বলে এ আবার কী'–নিত্য নামের চাষির মেয়েটির নাম না জানলেও বাপটির নাম তো জেনেছি আমরা (অন্যত্র, 'পুঁড়র মেয়ে বেগুন চেনে না')।

তুমি কোটো চালতা, আমি কুটি লাউ 

মেয়েদের কথা যখন উঠল, বাংলা ভাষার অনামা নায়িকাদের নিয়ে কয়টা প্রবচন-বুলি-ছড়া বলি। জন্মমাত্রে সে অপ্রয়োজনীয়া–'পুতের মুখে কড়ি, মেয়ের গলায় দড়ি।' মেয়েমানুষের যৌবন চাই, আজীবন–'আম শুকালে আমসী, যৌবন ফুরালে কাঁদতে বসি', সে 'কুড়ি হলেই বুড়ি' (সাধে আর আমাদের সিনেমার গানে এখনো 'কিশোরী কিশোরী' আর্তনাদ করেন নায়কেরা)। তার কপালে 'পিরিত যখন জোটে, ফুটকলাই ফোটে/ পিরিত যখন ছোটে, ঢেঁকিতে ফেলে কোটে!' 

"'একবরে" ভাতারের মাগ চিংড়িমাছের খোসা,  "দোজবরে" ভাতারের মাগ নিত্যি করেন গোঁসা,  "তেজবরে" ভাতারের মাগ সঙ্গে বসে খায়,  "চারবরে" ভাতারের মাগ কাঁধে চড়ে যায়।' 

মেয়ে কুরূপা হলে দুর্ভোগের অন্ত নেই–'একি মোর জ্বালা, মেয়ে চামকাটা ডালা, কানে দুটা ঘুরঘুরে গলায় মোতির মালা।' সে সাজলেও ভারি দোষের কথা–'খাঁদা নাকে নথ আর গোদা পায়ে মল/আলতা'! আবার মেয়ের অতিশয় রূপগুণেও ঝামেলা আছে–'অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর।' 

পুরুষের মন খানিকটা এমন–'যার হাতে খাইনি, সে বড় রাঁধুনী, যার সাথে ঘর করিনি, সে বড় ঘরণী!' 'আম ফলে থোলো থোলো, তেঁতুল ফলে বাঁকা, ছাওয়াল শুদ্ধাই বিয়া করে, মায়ের ঝোলায় টাকা।' কনের বাপের বাড়ি দূরে থাকা চাই–'বাজার করবি ঘুরে ঘুরে/ শ্বশুর করবি দূরে দূরে।' মুসলমানের ঘরে যদিও বাঁধা বুলি–'চাচা আপন, চাচি পর। চাচির মেয়ে বিয়ে কর।' মেয়েটিরও এদিকে একান্ত আশা একটি 'নিষ্কণ্টক' সংসার– 

'একলা ঘরের গিন্নি হব, 

চাবিকাটি ঝুলিয়ে নাইতে যাব।'

(সতীন দূরে থাক, সংসারে শাশুড়ি-ননদও থাকবে না, আঁচলে চাবিটি বাঁধা থাকবে।) যদি দোজবরে ভাতার হয়, তখন? 'অভিমানী দুয়ো, নেটি পেটি সুয়ো'। 'আন সতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে'। 'নিম তিতা নিশিন্দা তিতা, তিতা মাকাল ফল, তাহার চেয়ে তিতা কন্যা বোন সতীনের ঘর'। তবে হ্যাঁ, স্বামীটির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে কথা শুনতে দেরি হবে না–'ছেঁড়া কচুর পাত, এক মাগকে ভাত দেয় না আবার মাগের সাধ।' যদি সতীন সংখ্যা চারখানা হয়? 

"'একবরে" ভাতারের মাগ চিংড়িমাছের খোসা, 
"দোজবরে" ভাতারের মাগ নিত্যি করেন গোঁসা, 
"তেজবরে" ভাতারের মাগ সঙ্গে বসে খায়, 
"চারবরে" ভাতারের মাগ কাঁধে চড়ে যায়।' 

সতীনের হাড়জ্বালানো আত্মীয়স্বজন আছে না? 'খোরা খোরা খোরা/ সতীনের মাকে ধরে যেন নেয় তিন মিনসে গোরা।' কিংবা 'জ্বালা দিতে নাই ঠাঁই, জ্বালা দেয় সতীনের ভাই।' 

'বউ জব্দ কিলে, হলুদ জব্দ শিলে'–আজও। সে যেন খাইখাই না করে–'অলক্ষ্মীর দ্বিগুণ ক্ষুধা'। 

'ছোট সরাটি ভেঙে গেছে, বড় সরাটি আছে। নাচো কোঁদো কেন বৌ, আমার হাতের আটকাল আছে।'

(শাশুড়ি ছোট্ট সরায় করে বউকে ভাত দিত, সেটা ভেঙে ফেলে বউ ভেবেছে আজ থেকে বড় সরার মাপে ভাত পাব। শাশুড়ি বলছে–বৃথাই আনন্দ তোমার, আমার হাতের আন্দাজ তো আছে, যে পরিমাণে ভাত পেতে, সেটুকুই পাবে।) চাষার বউ তাকে জুড়ানো পান্তা দিয়ে নিজে তপ্ত ভাত খাচ্ছে, আর অজুহাত দিচ্ছে–

'পান পান্তা ভক্ষণ, ঐ তো পুরুষের লক্ষণ; 
আমি অভাগী তপ্ত খাই, কোন দিন বা মরে যাই।'

পোড়াকপালী তো বটেই, কত বুদ্ধি-কসরত করে তাকে থালায় গরম ভাত জোটাতে হচ্ছে। 'বউয়ের রাগ বিড়ালের ওপর, বিড়ালের রাগ বেড়ার ওপর', বিড়াল মাছ খেয়ে যায় বলে বউকে তিরস্কার সইতে হয়, এদিকে বেড়া আছে বলে বিড়াল মাছ খেয়ে দ্রুত পালাতে পারে না–মার খেতে হয় তাকে। এদিকে বউয়ের কাজের দিকে সহস্রচক্ষু হয়ে চেয়ে আছে সমাজ–'অকেজো বউ লাউ কুটতে দড়'। ধীরগতি কর্মী নারীকে গঞ্জনা সইতে হয়–'ছেলে নিল শেয়ালে, কাজকম্মো সেরে নিই কাঁদব বসে বিকালে।' নারী কিন্তু তার কর্মক্ষমতা আর শক্তি সম্পর্কে সজাগ–'এক কলসী জল তুলে কাঁকালে দিলে হাত, এই মুখে খাবে তুমি বাগদিনীর ভাত?' 

রাম-রাবণের যুদ্ধের সময় কুম্ভকুর্ণের ঘুম ভাঙানোর প্রাণান্ত চেষ্টা।

মা হতে হবে কৈশোরেই–'ষোলোতে না হলে পুত, হা পুত যো পুত'। কেন অত পুত্রের খাঁই? কারণ–'পোর নামে পোয়াতি বর্তায়।' কারণ, 'কানা পুতে পোষে, রাজার বউ শোষে' (নেহাত অকর্মণ্য ছেলেও মা-বাপকে পুষবে, আর মেয়ে রাজবধূ হলেও বাপ-মায়ের সম্পদ চুষে খেতে আসবে!) যে নারী দুর্ভাগা, সন্তানভাগ্যেও তার ভাগ্য খোলে না–'অভাগিনীর দুটো পুত, একটা দানা (দৈত্য) একটা ভূত'। আর মায়ের দৃষ্টি কেমন? 'আপনার ছেলেটি খায় এতটি বেড়ায় যেন লাটিমটি, পরের ছেলেটা খায় এতটা বেড়ায় যেন বাঁদরটা।' 'বউ গিন্নী হলে তার বড় ফরফরানি, মেঘভাঙা রোদ্দুর হলে বড় চড়চড়ানি।' ছেলের মায়েরও লাঞ্ছনা জোটে, 'গিন্নীর হাতে রাঙা পলা, বউয়ের হাতে সোনার বালা' হয় তখন। যদি সে নিজে অকালে মরে, তবে? 'অভাগার গরু/ঘোড়া মরে, ভাগ্যবানের মাগ'। সমাজ বেজায় খুশি। 

অত্যন্ত লাগসই একটি আধুনিক বুলি পড়লাম গুরুচণ্ডালীর সাইটে–

'আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ।
বাংলা সোপে, একটা ছেলের দুটো করে বৌ।'

সাধারণ মানুষ বোঝাতে বলা হয়–'টম, ডিক অ্যান্ড হ্যারি', এঁরা ছাড়া কি আর কেউ জনতার অংশ নন! টমের কপাল খুব খারাপ, অন্যের বাড়ির দিকে চুরিয়ে তাকিয়ে থাকা লোককে কিনা ডাকা হয় 'পিপিং টম'। অবশ্য বাংলার 'লেইট লতিফ' বা 'খয়ের খাঁ' কী দোষ করেছিলেন! 

কেঁচো খুঁড়তে সাপ 

ইংরেজিতে কেল্লা ফতে বোঝাতে বলা হয়–'বব'স ইয়োর আঙ্কল।' এই ববটা কে? 'অ্যাকিলিসেজ হিল', 'মাইডাস টাচ', 'প্যান্ডোরাজ বক্স' আর 'অ্যাডামস অ্যাপল' না হয় বোঝা গেল, মিথলজিতে ব্যাখ্যা আছে। সবচেয়ে ছোটটিকে যে 'বেনজামিন অব দ্য ফ্যামিলি' বলা হয়–তা কেন? চোখের পলকে বোঝাতে বলা হয়–'বিফোর ইউ ক্যান সে জ্যাক রবিনসন', এই 'জ্যাক রবিনসন'টাই বা কে? আবার করিতকর্মা লোককে ডাকা হয়–'জ্যাক অব অল ট্রেডস', লক্কাপায়রা গোছের পুরুষ, যারা ইতিউতি মুখ দিয়ে বেড়ায়, তারাই কেন 'জ্যাক দ্য ল্যাড', জ্যাক ইংরেজি ভাষার কী ক্ষতি করেছে যে তাকে এতবার ডাকতে হবে? চালিয়াত ছোকরাকে ডাকা হয়, 'স্মার্ট অ্যালেক'। দোহাই দেবার সময় বলা হয়, 'ফর পিটস সেইক', এই পিট কে? 'হেভেনস টু বেটসি'র এই বেটসি? 'নার্ভাস নেলি'র এই নেলি? 'নেকেড অ্যাজ জে বার্ড' না হয় বোঝা গেল, যে জে বার্ড নামের পাখিগুলো ছাড়া আর কোনো নাঙ্গা পাখি নেই–সব শালা জামা পরে আছে, কিন্তু এই যে 'হ্যাপি অ্যাজ ল্যারি' বলা হয়, ল্যারি ছাড়া কি আর কেউ সুখী নয়? 

সাধারণ মানুষ বোঝাতে বলা হয়–'টম, ডিক অ্যান্ড হ্যারি', এঁরা ছাড়া কি আর কেউ জনতার অংশ নন! টমের কপাল খুব খারাপ, অন্যের বাড়ির দিকে চুরিয়ে তাকিয়ে থাকা লোককে কিনা ডাকা হয় 'পিপিং টম'। অবশ্য বাংলার 'লেইট লতিফ' বা 'খয়ের খাঁ' কী দোষ করেছিলেন! 

ছড়ার বইয়ের সেই 'সলোমন গ্রান্ডি' যে সোমবারে জন্মে রবিবার নাগাদ সমাধিস্থ হয়ে যায় বা 'সিম্পল সায়মন মেট আ পাইম্যান'-এর সেই সিম্পল সায়মন কি কারও আদলে গড়া? ড্রুরি লেনের 'মাফিন ম্যান'? 

সপ্তদশ শতকের সফদার-ডাক্তার গোছের এক চিকিৎসক থমাস মাফেট নিজের সৎ মেয়েকে মাকড় গিলিয়ে চিকিৎসা করতেন, সেই মেয়েটি নাকি 'লিটল মিস মাফেট'? 'লিটল জ্যাক হর্নার' যেমন টিউডর যুগের থমাস হর্নার? 'গ্র্যান্ড ওল্ড ডিউক অব ইয়র্ক' যেমন প্রিন্স ফ্রেডরিক, 'জর্জি পর্জি পুডিং অ্যান্ড পাই, কিস দ্য গার্লস অ্যান্ড মেক দেম ক্রাই'–শিশ্নোদরপরায়ণ প্রিন্স রিজেন্ট জর্জ ফোর্থ, 'ওল্ড মাদার হাব্বার্ড' অষ্টম হেনরির দোসর কার্ডিনাল উলজি। অনেকে বলে 'থ্রি ব্লাইন্ড মাইস' আসলে ব্লাডি মেরির শাসনামলের স্মারক, তিনটে অন্ধ ইঁদুর তিনজন প্রোটেস্ট্যান্ট বিশপের রূপক, হিউ লাটিমার, নিকোলাস র‍্যাডলি, আর আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি–থমাস ক্র্যানমার।

ইংরেজি শিশুতোষ/মেয়েলি ছড়াতে আছে বহু নামহীনের ইতিহাস। দরিদ্রের জীবন সেকালেও দুর্বহ ('পপ গোউজ দ্য উইজল')। লোকে বলে–'রিং আরাউন্ড দ্য রোজি/আ পকেট ফুল অব পোজিস' আসলে ব্ল্যাক ডেথের সময়কার বিবরণ (শেষের 'উই অল ফল ডাউন' লক্ষ্য করুন), যদিও ফোকলোরিস্ট ফিলিপ হিজকক লিখেছিলেন–উনিশ শতকের বৃটেন ও উত্তর আমেরিকায় ধর্মীয় কারণে নাচ নিষিদ্ধ করার পর এমন চক্রাকারে নাচের (সংগীতবিহীন) উদ্ভব ঘটে, এটা সেই নাচের ছড়া। 

'হিয়ার উই গো রাউন্ড দ্য মালবেরি বুশ/ ব্র্যাম্বল বুশ'...এ মেয়েলি ছড়ার জন্ম হয়েছিল চার শ ত্রিশ বছরের পুরোনো ওয়েকফিল্ড জেলখানায়। সেখানে সত্যিই একটি বিশালকায় তুঁতগাছ ছিল, ভিক্টোরীয় মহিলা কয়েদিরা নিজ শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য ছড়া বাঁধত, গাছের চারদিকে ঘুরে নাচত। এই তুঁতগাছটা ২০১৭ সালে মরে যায়, ইংরেজ ইতিহাস নিয়ে শুধু আগ্রহী নয়–সে ইতিহাসমত্ত (যদিও নিজ কলমে সে ইতিহাস বিকৃত করেছে দেশে-বিদেশে), তাই সেই ঐতিহাসিক তুঁতগাছের কলম করে সেখানে আরেকটি তুঁতগাছ রোপণ করা হয়েছে। 'জ্যাক অ্যান্ড জিল' নাকি সমারসেটের পাহাড়ে লুকিয়ে মিলিত হওয়া অবিবাহিত যুগল! 'হিকরি ডিকরি ডক, দ্য মাউস র‍্যান আপ দ্য ক্লক'...এই ঘড়ি নাকি এক্সেটার ক্যাথেড্রালের বিশাল ঘড়িখানা, পশুর চর্বিতে ঘড়ির সরঞ্জাম লুব্রিকেট করা হতো বলে ঘড়িঘরে প্রচুর ইঁদুর হতো সেকালে। আমি অত্যন্ত বিচলিতবোধ করেছি যখন লেখক ক্রিস রবার্টস মারফত জেনেছি, 'রাবা-ডাব-ডাব থ্রি মেন ইন আ টাব' আসলে যুবতীদের পিপ শো নিয়ে ছড়া। ছড়ার বুচার, বেকার, ক্যান্ডলস্টিকমেকার...অর্থাৎ নানান পেশার লোক সমবেত হয়েছে টাবে নগ্ন যুবতীদের দেখতে। তবে 'বা বা ব্ল্যাক শিপ'-এর সঙ্গে দাসব্যবসার সম্বন্ধের কোনো ঐতিহাসিক যোগ পাওয়া যায়নি।

টম থাম্বের সমাধি

যুগীর গীতে ভণিতা নাই  

তাঁতির গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। সে প্রসঙ্গেই আবার একটু ফিরে যাই, হেসে বিদায় নিই। কথায় বলে–'অতি লোভে তাঁতি ডোবে।' তাঁতিরা বেজায় অলস, মোড়ল তাদের পরামর্শ দিল–তিল চাষ করো, তিলে লক্ষ্মী। যেই কথা, সেই কাজ। তাঁতিরা তিল বুনল, তিল ধরল, সেই সুরভিতে উন্মনা স্বর্গহস্তি ঐরাবত এক রাতে নেমে এল তিল খেতে। বেঙ্গু তাঁতি তিলখেতে লুকিয়ে ছিল (তাঁতিদের একজনের অন্তত নাম আছে), সে ঐরাবতের লেজ চেপে ধরল, হস্তির পিছু পিছু সে স্বর্গে গিয়ে উপস্থিত। পরদিন কেউ তাকে খুঁজে পায় না–কোথায় সে। 

অবশেষে বেঙ্গু ফিরে এল, তাঁতিদের কাছে গল্প করল–স্বর্গে সবচেয়ে সস্তা নাড়ু। মুফতে নাড়ু এনে নাড়ুর ব্যবসা করলে ভালোই হয় ভেবে পরের রাতে তাঁতির দল তিলখেতে লুকিয়ে রইল। ঐরাবত এসে মনের সুখে তিল খাচ্ছে–মোড়ল তার তাঁতির দলসমেত একে একে ঐরাবতের লেজ চেপে ধরল। বেঙ্গু সব্বার সামনে। তা সব্বাই মিলে স্বর্গে চলেছে, ওপরে আলোকময় ঊর্ধ্বাকাশ আর নিচে সমুদ্র, মোড়ল হঠাৎ জিজ্ঞেস করল–'স্বর্গের নাড়ু কত বড়?' বেঙ্গু তেরিয়া হয়ে জবাব করল–'গেলেই দেখতে পাবে।' উত্তরটা মোড়লের পছন্দ হলো না, শত হলেও সে মোড়ল। মোড়লের সঙ্গে বাদানুবাদের একপর্যায়ে বেঙ্গু দুহাত প্রসারিত করে দেখাতে গেল–স্বর্গের নাড়ু কত বড়, ব্যাস! লেজ ছেড়ে সব তাঁতি অগাধ সমুদ্রে পড়ে গেল। 

এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, শেষটায় এমন গল্প কেন শোনালেন? বলব, গল্প শোনানোর কারণ তো বিবিধ। ইতিহাস বিজিতের জন্য চুকচুক শব্দটিও করে না, সে বিজেতার হাত ধরে বদলায়, চমকায়, ভাঙে, ফাটে, সোনা গলিয়ে ফাটল আটকায়। কিন্তু লোকমুখে গল্পটা-বুলিটা-বাগধারাটা থাকে, সে সত্যদ্রষ্টা, সে নির্মোহ, সে ক্রীতদাস কথকের মুখের মিচকে হাসি। স্বাধীন। 
 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / বাগধারা / প্রবাদ প্রবচন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নদী দখল ও দূষণকারী কারখানা পেল 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড'
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপি ৩৯%, জামায়াত ২১%, এনসিপি ১৬% ভোট পাবে মনে করে তরুণরা: সানেম জরিপ
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ কেন সফল হয়নি?
  • বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প
  • বিশ্বের প্রথম দুই আসনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০এস আনল চীন
  • রাজধানীর জন্য বৈদ্যুতিক বাস: দুই বছরে ব্যয় হবে ২,৫০০ কোটি টাকা

Related News

  • রাহবারের ছবি, ক্ষেপণাস্ত্র আর ডাক্তারসহ ইরানের দিনগুলো
  • তেহরান শহরের কাল্পনিক বৃষ্টির গল্প 
  • ঐ তে ঐরাবত 
  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ

Most Read

1
বাংলাদেশ

নদী দখল ও দূষণকারী কারখানা পেল 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড'

2
বাংলাদেশ

আগামী নির্বাচনে বিএনপি ৩৯%, জামায়াত ২১%, এনসিপি ১৬% ভোট পাবে মনে করে তরুণরা: সানেম জরিপ

3
অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ কেন সফল হয়নি?

4
বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

5
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের প্রথম দুই আসনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০এস আনল চীন

6
বাংলাদেশ

রাজধানীর জন্য বৈদ্যুতিক বাস: দুই বছরে ব্যয় হবে ২,৫০০ কোটি টাকা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net