Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
September 08, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, SEPTEMBER 08, 2025
তেহরান শহরের কাল্পনিক বৃষ্টির গল্প 

ইজেল

হাসনাত শোয়েব
30 June, 2025, 01:45 pm
Last modified: 30 June, 2025, 02:23 pm

Related News

  • অরুন্ধতী রায়: কিছু সাহসী মানুষের কারণে এখনো অন্ধকারে জোনাকির আলো দেখতে পারি 
  • ‘আজাদী’
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ
  • এক শ বছরের লাইকা: যেভাবে বদলে দিল আলোকচিত্রের ইতিহাস
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে

তেহরান শহরের কাল্পনিক বৃষ্টির গল্প 

সেটা ছিল তুমুল বৃষ্টিতে রেইনকোট ও গামবুট পরে ভিজতে ভিজতে তেহরানের রাস্তা ধরে বাসায় ফিরতে থাকা এক লোকের উপাখ্যান, কিন্তু লোকটি কখনোই আর নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি। বৃষ্টির দিনেও তার চোখে থাকত সানগ্লাস। মাথা থেকে গড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ত সানগ্লাসে...
হাসনাত শোয়েব
30 June, 2025, 01:45 pm
Last modified: 30 June, 2025, 02:23 pm
উইন্ড উইল ক্যারি আস

সানা ইজালা ছিল আমার কাল্পনিক বন্ধু। তার সঙ্গে আমি একসময় মনে মনে সারা দিন কথা বলতাম। আমার কল্পনায় সে ছিল ইরান দেশের মেয়ে। যখন ফেসবুক এল, আমরা সারা দিন ফেসবুকে কথা বলতাম। সে আমাকে পারস্য দেশের বৃষ্টির গল্প শোনাত। কীভাবে মোহসেন মাখমলবাফের সিনেমা দেখতে দেখতে পশ্চিমের বালুঝড় উপভোগ করত, সেসব সে বিস্তারিত জানাত। সে আমাকে নিজেদের হারিয়ে ফেলা ইতিহাস আর ঐতিহ্যের কথা বলত। সে বলত, দুপুরগুলোর বিকেলের দিকে গড়িয়ে পড়ার কথাও। এভাবেই একদিন সে শুনিয়েছিল বিষণ্ন এক লোকের গল্প।   

সেটা ছিল তুমুল বৃষ্টিতে রেইনকোট ও গামবুট পরে ভিজতে ভিজতে তেহরানের রাস্তা ধরে বাসায় ফিরতে থাকা এক লোকের উপাখ্যান, কিন্তু লোকটি কখনোই আর নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি। বৃষ্টির দিনেও তার চোখে থাকত সানগ্লাস। মাথা থেকে গড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ত সানগ্লাসে। হাত দিয়ে গ্লাস থেকে তার বৃষ্টি মুছে দেওয়ার দৃশ্য ছিল কবিতার মতোই সুন্দর। এগুলো কিন্তু কিছুই আমি দেখিনি, সব সানা ইজালার কাছ থেকে শোনা। এই একটি গল্প সে প্রতিদিনই শোনাত।

এই গল্পে আনমনে হাঁটতে হাঁটতেই মাঝেমধ্যে ভ্রু কুঁচকে লোকটি এদিক-সেদিক ইতিউতি করতেন। হয়তো মেপে নিতেন নতুন কোনো দৃশ্য। প্রতিদিন এই একই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হতে থাকত। আর একদিন হুট করে চওড়া কপাল ও টাকওয়ালা সেই মধ্যবয়সী মানুষটার বাড়ি ফেরার পথ থেকেই বেরিয়ে আসেন একজন আব্বাস কিয়ারোস্তামি। সেদিনও যথারীতি তেহরান ভেসে যাচ্ছিল ঝুম বৃষ্টিতে। তখন থেকেই বৃষ্টির শব্দ, বৃষ্টির গান, বৃষ্টির ঘ্রাণ সবকিছুই আমাকে মনে করিয়ে দিত একজন কিয়ারোস্তামির কথা। আমি মনে মনে আঁকতাম তেহরান শহরের রাস্তা দিয়ে কিয়ারোস্তামির হেঁটে আসার দৃশ্য। কখনোই সেটা নিখুঁত হতো না। ফলে আমি বারবার আঁকতাম। 

তবে বৃষ্টির কথা বললে যেমন আমার মনে পড়ে কিয়ারোস্তামির কথা, তেমনি চেরির স্বাদের কথা বললেও আমার মনে পড়ে একজন কিয়ারোস্তামির কথা। হলুদ ট্যাক্সিতে চড়ে তেহরানের রাস্তা ধরে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে যিনি পথে পথে ঘুরছেন। এই পরিভ্রমণে আমরাও তার সঙ্গী হই। না দেখেও তেহরানের ধুলোবালি, নির্জন রাস্তা আর বিষণ্নতার প্রেমে পড়ি। সেই বিষণ্নতাকেই আমরা বিহ্বলতা ভেবে জড়িয়ে নিই নিজেদের শরীরে। আর সারা দিন এক কাল্পনিক তেহরানে ঘুরে বেড়াই। 

শুরুতে বলেছিলাম তেহরানের বৃষ্টির কথা। এই লেখায় বারবার আসবে বৃষ্টির কথা। যেমন কাকতালীয়ভাবে কিয়ারোস্তামি যেদিন মারা যান, সেদিন ঢাকাতেও বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরছিলাম। ট্রেনযাত্রা সব সময় আমাকে বিষণ্ন করে দেয়। তবে বৃষ্টি, ট্রেনযাত্রা ও কিয়ারোস্তামির মৃত্যু সব মিলিয়ে বিষণ্নতা সেদিন আমাকে ধসিয়ে দিয়েছিল। পরের কটা দিন আমি পাতা থেকে পাতার দূরত্ব মেপেই কাটিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বারবার মনে পড়ছিল প্রথম কিয়ারোস্তামি আবিষ্কারের কথা। কেমন ছিল অদ্ভুত সেই আবিষ্কার! কিয়ারোস্তামিকে চেনা মানে আমার কাছে ইরানকে চেনা, তেহরানকে ভালোবাসা। তখনো ইরান বিপ্লব, আয়াতুল্লাহ খামেনি, রেজা পাহলভি, ইসলামি শাসনব্যবস্থা কিংবা আলী শরিয়তি সম্পর্কে আমি কিছু জানিনি। কিয়ারোস্তামির চোখ দিয়ে তেহরানকে ভালোবাসতে আমার এসব জানার প্রয়োজনও হয়নি। 

ছবি: আব্বাস কিয়ারোস্তামি

চেনাজানার একপর্যায়ে আমার পরিচয় হয়েছিল বন্ধুর বাড়ি খুঁজতে যাওয়া এক শিশুর সঙ্গে। 'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম'-এর সেই ছেলেটির সঙ্গে কতবার যে আমি ঘুরতে বেরিয়েছি। এমন সারল্য আমি সিনেমায় আগে-পরে আর কখনো দেখিনি। কিয়ারোস্তামির সিনেমার ভেতর দিয়ে এই শিশুরা নিজেদের সারল্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে সবুজ বনাঞ্চলের মতো। সেই দৃশ্যগুলো দিয়েই আমি প্রথম কোকেরকে চিনেছি। জেনেছি তেহরানের বাইরে অন্য রকম ইরান ও তাদের শিশুদের, যারা সবুজ কৌটায় লুকিয়ে রাখত উড়ন্ত সুগন্ধী বিস্কুট। সেই বিস্কুটগুলোর পেছনে ছুটতে ছুটতে একদিন কোথায় যেন হারিয়ে যেত তারা। 

এরপর 'থ্রো দ্য অলিভ ট্রিজ,' 'লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর' এবং 'দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস'–এ-ও এক বিষণ্ন ও জাদুবাস্তব ইরানকে দেখেছি আমি। কোকেরের সেই বনের মধ্য দিয়ে এখনো প্রায় আমি হাঁটতে বের হই। আমি জানি না, অন্যায্য এই আগ্রাসনের পর ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত কোকেরকে আর মানচিত্রে আর খুঁজে পাওয়া যাবে কি না। কিন্তু কিয়ারোস্তামির সিনেমায় কিংবা আমাদের নিজেদের বোধের ভেতর কোকেরের যে অস্তিত্ব, তা অমলিন থেকে যাবে আরও অনেক অনেক দিন পর্যন্ত। যেভাবে আমাদের ভেতর থেকে যাবেন 'ক্লোজ-আপ'-এর হোসেন সাবজিয়ানও। 

সত্যিকারের সেই গল্পে উত্তর তেহরানের এই লোক নিজেকে মোহসেন মাখমলবাফ দাবি করে ধোঁকা দিয়েছিলেন একটি পরিবারকে। পরে ধরাও পড়ে গিয়েছিলেন। সেই বাস্তব ঘটনাকে বাস্তব চরিত্রগুলো দিয়েই অভিনয় করিয়ে ক্যামেরাবন্দী করেন কিয়ারোস্তামি। সিনেমাটা দেখার পর সেই ধোঁকাবাজ সাবজিয়ানকেই কেন জানি আমরা ভালোবেসে ফেলি। তার জন্য আমাদের মধ্যে তৈরি হয় অদ্ভুত এক পক্ষপাত।

এভাবেই আমি গভীরভাবে চিনতে শুরু করি কিয়ারোস্তামিকে। এভাবেই আমি জেনেছি ভিন্ন এক তেহরান, তার পথঘাট আর রাস্তাগুলোকে। আর এই চেনাজানার মধ্য দিয়েই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম কাল্পনিক বন্ধু সানা ইজালাকে কিংবা সে নিজেই হয়তো আমাকে এসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এখন আর সব ঠিকঠাক মনে নেই। কিন্তু এটুকু মনে আছে, বহুদিন একসঙ্গে আমরা তেহরানের বৃষ্টির শব্দ শুনেছি, গন্ধ শুঁকেছি আর ছোট ছোট বোতল ভর্তি করে রেখে জমিয়ে রেখেছি বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। 

কিয়ারোস্তামি আমাকে শুধু বৃষ্টিকেই আলাদা করে চিনতে শেখাননি, কোনো এক মন খারাপ করা বিকেলে তিনি আমাকে 'টেস্ট অব চেরি'র মিস্টার বাদির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম বাদির সঙ্গে সেই অনন্ত যাত্রায় আমিও সঙ্গী হয়েছি। তার সঙ্গে মৃত্যু পরোয়ানা হাতে আমিও নেমে পড়েছি রাস্তায়। অদ্ভুত এক বিষণ্নতা ও ভালো লাগা শরতের বিকেলের মতো চেপে বসেছিল আমার ওপর। আর ঠোঁটের কোণে ভর করেছিল বিহ্বলতা, যা আমি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। ব্যক্তির অস্তিত্বের সংকট ও দেখার আনন্দ দুটোই একসঙ্গে বোধ করেছিলাম সেদিন। 

কিয়ারোস্তামি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল অন্য রকম এক বিমূর্ততার সঙ্গেও। এই বিমূর্ততা একেবারেই ভিন্ন, এটা পারস্যের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এক শুভ্র বিমূর্ততা। যা অনেকটা বাচ্চাদের সুগন্ধী বিস্কুট খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মতোই। তাই কিয়ারোস্তামির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা বিমূর্ততাকে আমি পারস্যের বিমূর্ততা হিসেবেই দেখি। যার স্রষ্টাও তিনি নিজেই। 

কেমন সেই বিমূর্ততা, তা এক সাক্ষাৎকারে কিয়ারোস্তামি নিজেই ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেহেরজাদে ও আরব্য রজনীর মতো করে গল্প বলার যে ধারা, সেটি থেকে বেরিয়ে আসার কথা। কিয়ারোস্তামি বলেন, 'না বোঝাটাই কবিতার সার। আপনি তাকে সেভাবেই মেনে নিয়েছেন। সংগীতের ক্ষেত্রেও তা-ই। সিনেমা কিন্তু আলাদা। কবিতার দিকে আমরা এগোই অনুভূতি দিয়ে, আর সিনেমার দিকে ভাবনা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে। ভালো কবিতা বর্ণনা করার কথা ভাবে না, কিন্তু ভালো সিনেমার ক্ষেত্রে বন্ধুকে ফোনে তার গপ্প না করলে আর কী হলো! আমার ধারণা, সিনেমাকে যদি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম হয়ে উঠতে হয়, তবে না বোঝার এই সম্ভাবনার কথা সিনেমার ক্ষেত্রেও মঞ্জুর করতে হবে।'

ছবি: আব্বাস কিয়ারোস্তামি

নিজের প্রতিটি চলচ্চিত্রে এই সম্ভাবনাকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করেছেন কিয়ারোস্তামি। তবে এই বিমূর্ততা মোটেই গল্পহীন নয়। এমন বিমূর্ত রেখাগুলোর ভেতরেই মহৎ শিল্পীর মতো গল্পকে বসিয়ে দিয়েছেন কিয়ারোস্তামি। ফলে তার গল্প বলার ভঙ্গি হয়ে উঠেছে অভিনব। আর গল্প বলার সেই পদ্ধতিটাই মূলত চেনা ন্যারেটিভকে শুষে নিতে পারে স্পঞ্জের মতো; যে কারণে কিয়ারোস্তামির সিনেমায় গল্প কারও ওপর চেপে বসে না। দেখার সৌন্দর্যটাই বরং আমাদের টেনে নিয়ে যায়। আর সেই সৌন্দর্যই আমাদের সামনে হাজির করে তেহরানের সারল্যকে। আমরা জানি না, আসলেই এই সারল্যের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না। আমরা মূলত বিশ্বাস করি কিয়ারোস্তামি নামের এক জাদুকরকে; যার নিজস্ব আনন্দ ও বিষণ্নতার অনুভূতি নিয়ে আমাদের ওপর ভর করে। 

পাশাপাশি গল্পের যে সুর, সেটিও কোনো না কোনোভাবে আমাদের ভেতর রয়ে যায়। সব মিলিয়ে কিয়ারোস্তামির ছবি যেমন গল্পের বোঝা চাপিয়ে দেয় না, তেমনি এটি শুধুই পোয়েটিক কিংবা দার্শনিক আখ্যান হয়ে থাকে না। বরং বাস্তবতার কাছাকাছি গিয়ে তুলে আনে চরিত্রগুলোর নিরীহ অভিব্যক্তিকে, যা কিয়ারোস্তামির সিনেমার বড় শক্তিও বটে। এই সহজে বয়ে যাওয়ার ভঙ্গিটাই অনন্য করে তুলেছে কিয়ারোস্তামিকে। 

কিয়ারোস্তামি তো আসলে দিন শেষে একজন কবি। কবিতার যে সম্ভাবনা ও রস তাকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেছেন তিনি। আর কিয়ারোস্তামির এই মানস গঠনে ভূমিকা রেখেছে পারস্যের চিরন্তন কাব্যিক মনন। এই মনন ইউনিভার্সাল। এটিই ইরানিয়ানদের আত্মপরিচয়ের অংশ। এই কবিসত্তাকে বাদ দিয়ে ইরানে কেউ শিল্পচর্চার কথা কল্পনাও করতে পারবে না। এটা আসলে সম্ভবও নয়। কীভাবে পার্সিয়ান কবিতার ধারাকে নিজের সিনেমায় ব্যবহার করেছেন, তার একটা দৃষ্টান্তের কথা কিয়ারোস্তামির কাছ থেকেই শোনা যাক, 'টেস্ট অব চেরি' ছবিটার আকার খানিকটা একটা পার্সিয়ান কবিতা থেকে নেওয়া। কবিতাটা এ রকম–'একটা মোমবাতির চারদিকে একটা প্রজাপতি ঘুরছে, ঘুরতে ঘুরতে ক্রমশ আগুনের শিখার কাছে এগিয়ে আসছে, আবার ঘুরে চলে যাচ্ছে, আবার এগিয়ে আসছে–এই করতে করতে একসময় সে আগুনে পুড়ে গেল।'

কোনো কর্তৃত্বপরায়ণতা কিংবা মিসাইল অথবা বোমা এই মননকে ধ্বংস করতে পারেনি, পারবে  না। এটা সহজাত। ইরানের সেই সৃষ্টিশীল সত্তাকেই কিয়ারোস্তামি সব সময় ধরতে চেয়েছেন। সূক্ষ্মভাবে দেখাতে চেয়েছেন এর পেছনে জারি থাকা দীর্ঘ সংগ্রামকেও। ফলে কবিতাকে তিনি খানিকটা প্রসারিত করেছেন। কবিতার সম্ভাবনাকে তিনি সিনেমাতেও টেনে এনেছেন। তবে তার কবিতা ও সিনেমার স্নিগ্ধতা কাছাকাছি হলেও সত্তাজনিত দিক থেকে দুটো একেবারে আলাদা। কিয়ারোস্তামির ক্ষেত্রে তাই একটা শিল্পমাধ্যমকে আরেকটা দিয়ে বিশেষায়িত করা নিষ্প্রয়োজন। যদিও অন্য দিকে তিনি আবার কবিতাকে সবকিছুর ভিত্তি বলে ঘোষণাও দিয়েছেন।   

কবিতার অমিত সম্ভাবনা নিয়ে কিয়ারোস্তামি বলেছেন, 'একবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কবিতাকে আমি কি ইরানি শিল্পের ভিত্তি মনে করি? আমি বলেছিলাম, সমস্ত শিল্পের ভিত্তি হলো কবিতা। শিল্প আসলে প্রকাশের, মেলে ধরার কথা বলে, শিল্প নতুন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান প্রকাশ করে আসলে। সত্যিকারের কবিতাও একইভাবে আমাদের এক বৃহতের কাছে তুলে ধরে।...সাধারণভাবে আমাদের চোখের আড়ালে থাকা এক জগৎকে উন্মোচিত করে, বাস্তবতাকে টপকে ঢুকে পড়ে সত্যের গভীর প্রদেশে। কবিতা আমাদের হাজার ফুট উচ্চতায় তুলে ধরে আর সেখান থেকে নিচে সারা জগৎকে একত্রে দেখার ক্ষমতা প্রদান করে। কবিতা আর কিছু নয়। শিল্প না থাকলে, কবিতা না থাকলে আসে দারিদ্র্য, রিক্ততা।' 

এরপরও বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমাদের শঙ্কা জাগে, এসব কথা আদৌ মন ভোলানো কি না! শত্রুর মিসাইল যখন জীবনের দিকে তাক হয়ে থাকে, বোমারু বিমান যখন মাথার ওপর চক্কর দিতে থাকে, তখন কবিতা কি সত্যি কোনো কাজে লাগে? আমাদের শঙ্কা জাগে, তবু আমরা কিয়ারোস্তামির ওপর আস্থা রাখি। কারণ, এই সম্ভাবনা বা আশাটুকুই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এই আশার প্রতি অবিচল থেকেছিলেন কিয়ারোস্তামি নিজেও। যে কারণে মৃত্যুকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা-ও শিখিয়ে গেছেন তিনি, 'প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা টের পাই, মৃত্যু আমাদের জন্য একই জায়গায় অপেক্ষা করে আছে–রোজ একটু একটু করে, আজকের তুলনায় কালকে, মৃত্যু আরও কাছাকাছি এগিয়ে আসছে। তাই জীবনকে উপভোগ করতে যা দরকার, প্রাণ ভরে করে নাও!' এই উপভোগের মন্ত্রেই হয়তো যুদ্ধবিমান ও বোমার সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ভায়োলিন বাজান। 

কিয়ারোস্তামি মোটাদাগে পার্সিয়ান সংস্কৃতি ও তাদের আত্মপরিচয়ের গল্পটাই আমাদের বলেছেন। সেটা হয়তো হুবহু বা আক্ষরিক কিছু নয়। নিজের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা এবং অমিত প্রতিভার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেই বিমূর্ত শিল্প-ভাষার ভেতর দিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন তিনি; যার টুলস হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্রেম, বিষণ্নতা, নির্জনতা, অস্তিত্ব সংকট এবং দাঁতে দাঁত চেপে টিকে থাকার শক্তিকে। আজ তুমুল বিপর্যয়ের মধ্যেও সেই শক্তির ওপর ভরসা করেই দাঁড়াতে হবে ইরানকে; যার পেছনে কিছুটা নীরবেই হয়তো দাঁড়িয়ে থাকবেন কিয়ারোস্তামি নিজে। 

এই লেখায় আমি মূলত আমার অনুভূতির ও উপলব্ধির কিয়ারোস্তামি কেমন, সেটা বলতে চেয়েছি। আমি বলতে চেয়েছি কিয়ারোস্তামির কালো চশমায় ইরানকে আমি কেমন দেখেছি, সেটা। আমি জানি না, কিয়ারোস্তামির ধীরলয়ে বানানো তেহরান কিংবা কোকেরের ভবিষ্যৎ ছবিটা কেমন হবে। কিন্তু আমি জানি, তেহরান অথবা কোকের তবুও দাঁড়িয়ে থাকবে। শিশুর সারল্য, ভীষণ জঙ্গল কিংবা বিষণ্ন সাবজিয়ানের চোখের পাতায় ভর করে আরও অনেক অনেক দিন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবে ইরান। কিয়ারোস্তামির কবিতার ভাষার মতো সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে আমাদের দিকে।


কিয়ারোস্তামির উদ্ধৃতি সূত্র:
কথাচিত্রকনা: আব্বাস কিয়ারোস্তামির কবিতা: সংকলন ও তর্জমা: আব্দুল কাফি
চেরির স্বাদ: সংকলন ও ভাষান্তর: সন্দীপন ভট্টাচার্য
মাস্টারক্লাসে কিয়ারোস্তামি: সংকলন ও তর্জমা: সায়ন্তন দত্ত

 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / বৃষ্টি / তেহরান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ২২৭ কোটি টাকায় টোটালগ্যাস বাংলাদেশকে কিনে নিল ওমেরা পেট্রোলিয়াম
  • সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সচিব শহীদ খান কারাগারে
  • ঢাকা বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের জন্য দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার আনার ইঙ্গিত উপদেষ্টার
  • প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমাতে চায় সরকার, ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষাও: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
  • কোকা-কোলার পর এবার ড. পেপারের কাছেও ‘সোডা যুদ্ধে' হার পেপসির, সংকটে ভবিষ্যৎ
  • আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশ, তিন বছরে সর্বনিম্ন

Related News

  • অরুন্ধতী রায়: কিছু সাহসী মানুষের কারণে এখনো অন্ধকারে জোনাকির আলো দেখতে পারি 
  • ‘আজাদী’
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ
  • এক শ বছরের লাইকা: যেভাবে বদলে দিল আলোকচিত্রের ইতিহাস
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে

Most Read

1
অর্থনীতি

২২৭ কোটি টাকায় টোটালগ্যাস বাংলাদেশকে কিনে নিল ওমেরা পেট্রোলিয়াম

2
বাংলাদেশ

সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সচিব শহীদ খান কারাগারে

3
বাংলাদেশ

ঢাকা বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের জন্য দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার আনার ইঙ্গিত উপদেষ্টার

4
বাংলাদেশ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমাতে চায় সরকার, ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষাও: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

5
আন্তর্জাতিক

কোকা-কোলার পর এবার ড. পেপারের কাছেও ‘সোডা যুদ্ধে' হার পেপসির, সংকটে ভবিষ্যৎ

6
অর্থনীতি

আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশ, তিন বছরে সর্বনিম্ন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net