ইরান-ইসরায়েল 'যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা', শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেস সদস্য বাডি কার্টার নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্পকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি লেখেন, 'ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটানো এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বিধ্বংসী অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ট্রাম্প এই পুরস্কারের যোগ্য।
কার্টার বলেন, 'একটি দ্রুত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ট্রাম্পের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এমন একটি চুক্তি, যা অনেকেই এক সময় অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এই মুহূর্তে তার নেতৃত্ব নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল আদর্শগুলোকেই প্রতিফলিত করে— সেগুলো হলো শান্তির অনুসন্ধান, যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির উন্নয়ন।'
ট্রাম্পের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'ঐতিহাসিক বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত একটি অঞ্চলে এমন একটি অগ্রগতি অর্জনে প্রয়োজন সাহস ও দূরদৃষ্টি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় গুণই প্রদর্শন করেছেন, যা বিশ্বের সামনে আশার এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে।'
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প সোমবার সন্ধ্যায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন—এবং তিনি প্রস্তাব দেন এই সংঘাতের নাম হোক '১২ দিনের যুদ্ধ'। এর মাত্র দুই দিন আগে তিনি ইসরায়েলি হামলার সমর্থনে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জাতীয় পার্লামেন্টের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ অনেকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি এই পুরস্কার জেতার প্রত্যাশা করেন না।
গত শুক্রবার তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "আমি যা-ই করব, তবুও নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না।" তার প্রশাসন যখন রুয়ান্ডা ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর মধ্যে শান্তি চুক্তি করাতে সেসময় তিনি ওই পোস্ট করেছিলেন।
তার পোস্টে তিনি আরও বলেছিলেন, "এই জন্য আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য পাব না, সার্বিয়া ও কোসোভোর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যও পাব না।"
সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি উল্লেখ করে বলেন, তার প্রশাসন ইসরায়েল ও চার আরব দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
তিনি আরও বলেন, "আমাকে চার বা পাঁচবারই এটি পাওয়া উচিত ছিল… তারা আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয় না কারণ তারা শুধু লিবারালদের দেয়।"
এ পর্যন্ত তিনজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিকান টেডি রুজভেল্ট। ১৯০৬ সালে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তিচুক্তি করানোর জন্য তিনি এ পুরস্কার পান।
অন্য দুই কমান্ডার-ইন-চিফ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন ডেমোক্র্যাট উডরো উইলসন (১৯১৯) ও বারাক ওবামা (২০০৯)। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ৯ মাসের মধ্যে এ পুরস্কার পান।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ওয়েবসাইট বলছে, পুরস্কার দেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে বারাক ওবামাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল তার 'আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জনসমাজের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের অসাধারণ প্রচেষ্টার জন্য'। এছাড়াও পরমাণু অস্ত্রহীন বিশ্বের স্বপ্নকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তার কথা ও কাজ দুটোই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল।
তবে ওবামার পুরস্কারকে সমালোচনাও করা হয়েছিল—যেখানে ট্রাম্প ও অন্যান্য রিপাবলিকানও ছিলেন—কারণ তার প্রশাসনে মার্কিন ড্রোন যুদ্ধ ব্যাপক মাত্রায় পরিচালিত হয়েছিল। এছাড়া লিবিয়া ও সিরিয়ায় রক্তপাতময় উগ্রপন্থী বিদ্রোহীদের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল এবং মার্কিন পরমাণু অস্ত্রাগার পুনর্গঠনের জন্য এক ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ২০০২ সালে "আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য দশকব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টার জন্য" সম্মানিত হয়েছিলেন, আর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ২০০৭ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগ সৃষ্টি করার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছিলেন।