সাভারে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

সাভারে বকেয়া বেতন, চলতি মাসের বেতনের অর্ধেক ও ঈদ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
রবিবার (২৫ মে) বিকালে হেমায়েতপুরের বসুন্ধরা গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে জানান, বিকাল ৪টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, 'কারখানার শ্রমিকদের আজ বকেয়া বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তা পরিশোধ না হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে।'
শ্রমিকরা জানান, গত দুই মাস ধরে মালিকপক্ষ বারবার কারখানা লে-অফ ঘোষণা করছে। সর্বশেষ ১৭ মে দেওয়া এক নোটিশে ১৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লে-অফ ঘোষণা করা হয়। সেই নোটিশ অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের বেতন ২৫ মে দুপুর ৩টায় পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকরা কারখানায় এসে দেখেন, মালিকপক্ষ বা কর্মকর্তারা উপস্থিত নন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন।
একজন সুইং অপারেটর নাম প্রকাশ না করার শর্তে 'দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, 'আজ আমাদের এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। ৩টার আগেই আমরা কারখানায় এসেছি, কিন্তু কেউ আসেনি। সামনে ঈদ, আমাদেরও সংসার আছে। বেতন না পেলে চলবো কী করে? চলতি মাসের বেতন, ঈদ বোনাস—কোনো কিছু নিয়েই কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দাবি, এপ্রিল মাসের বেতনের সঙ্গে ঈদের আগে চলতি মাসের অর্ধেক বেতন এবং ঈদ বোনাস দিতে হবে।'
কারখানার আরেকজন শ্রমিক জানান, 'গত দুই মাসে কয়েকবার লে-অফ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এপ্রিল মাসের বেতন আজও দেইনি। কারখানা চালাতে না পারলে আমাদের সব পাওনা বুঝিয়ে দিক।'
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, 'ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিকরা কীভাবে সংসার চালাবে? এপ্রিল মাসের বেতন এখনও দেওয়া হয়নি। আমরা চাই অবিলম্বে শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ করা হোক।'
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৭ মে শহিদুল্লাহর স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, 'শ্রমিক অসন্তোষের কারণে নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট সম্ভব হয়নি। বিলম্বে শিপমেন্ট ও আকাশপথে পণ্য পরিবহনের কারণে ব্যাংকের দায়দেনা বেড়ে গেছে। ফলে নতুন কোনো ক্রয় আদেশ বা কাঁচামাল না থাকায় কারখানায় কাজ দেওয়া সম্ভব নয়।'
এতে ১৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শ্রম আইন ২০০৬-এর ১২ ধারা অনুযায়ী কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করা হয়। নোটিশে আরও জানানো হয়, এপ্রিল মাসের বেতন ২৫ মে দুপুর ৩টায় কারখানায় দেওয়া হবে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিকাল ৫টার দিকে শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিলেন। কারখানাটিতে প্রায় ৮৫০ জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।