চা বাগানের অব্যবহৃত জমিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ইকো-ট্যুরিজম চালুর পরিকল্পনা সরকারের

দেশের চা বাগানগুলোর অনাবাদি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং বিকল্প জ্বালানি উৎস উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প ও ইকো-ট্যুরিজম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)-এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বুধবার (২১ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত '৫ম জাতীয় চা দিবস' উপলক্ষে 'চা দিবসের প্রতিশ্রুতি, চা শিল্পের অগ্রগতি' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, "অনেক চা বাগানের জমি অনাবাদি পড়ে আছে, যেগুলো কাজে লাগাতে হবে। কারণ, চা উৎপাদন অনেক হলেও তা বিক্রি করে খরচ ওঠে না। তাই এসব জমিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, "সরকার চা নীতিতে পরিবর্তন আনছে। যেসব বাগান মালিক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সরকার যদি আর্থিক দায় নেয়, তবে সেই বাগানের মালিকানাও সরকারের হওয়া উচিত।"
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভীর রহমান জানান, দেশের চা বাগানগুলোর প্রায় ৪৫ শতাংশ জমি চা চাষের জন্য উপযোগী নয়। এসব জমির অন্তত ২০ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করলে প্রায় ১৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এতে বাগানের আয় বাড়বে, পাশাপাশি দেশের বিদ্যুৎ সংকটও কমবে।
তিনি আরও বলেন, এসব জমিতে ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তুললে চা বাগানগুলো নতুন আয়ের উৎস পাবে।
কামরান তানভীর রহমান আরও জানান, ২০২২ সালে শ্রমিক ধর্মঘটে চা শিল্পে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যা এখনো পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় চা উন্নয়ন ঋণের জন্য ৪৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃচলনযোগ্য তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
বর্তমানে চায়ের ন্যূনতম অকশন মূল্য ১৬০ টাকা, যা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ইকো-ট্যুরিজম
চা শিল্পের সুষম জমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, "সরকার চা শিল্পের অব্যবহৃত জমি কাজে লাগাতে চায়, যাতে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে, তবে চা উৎপাদনই থাকবে মূল ভিত্তি।"
তিনি চা শিল্পে শুল্ক-করের অরাজকতা দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, "এই অপব্যবস্থাপনাকে রুখতে হবে। খরচ কমিয়ে, উৎপাদন বাড়িয়ে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।"
তিনি বলেন, "চা শিল্পে আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখি। যেসব সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং আমি আশাবাদী, এগুলোর সমাধান হবে।"
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন। বক্তব্য দেন টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ মঈন উদ্দিন হাসান।
অনুষ্ঠানে মোট ৮টি ক্যাটাগরিতে 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৫' প্রদান করা হয়। এবারের পুরস্কারপ্রাপ্ত চা বাগানগুলো হলো—ডিনস্টন, মধুপুর, দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি, মির্জাপুর, কাজী অ্যান্ড কাজী টি, মরগেন টি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সুপ্রিম টি। এছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার পেয়েছেন পঞ্চগড়ের এবিএম আখতারুজ্জামান এবং নেপচুন চা বাগানের শ্রমিক জেসমিন আক্তার।