অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিয়ে আসাই— আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের প্রধান লক্ষ্য হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, বাজেট ব্যয় সীমিত করা এবং বাজেটে ঘাটতি কমানোতে জোর দেওয়া হবে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যাতে ৪ শতাংশের নিচে নেমে না যায় তার চেষ্টা করা হবে।
আজ রোববার (১৮ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, টেকসই বাজেট ব্যবস্থাপনার জন্য এগিয়ে নিতে হলে ঘাটতি বাজেট কমাতে হবে, এবং আগে থেকে যে ঋণের দায় আছে তা কমিয়ে নিয়ে আসা হবে, ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। তবে এটা হঠাৎ করে কমিয়ে আনা সম্ভব না।
ক্রমাগত ঘাটতি বাজেট পূরণ করতে গিয়ে দেশ যাতে ঋণের ফাঁদে পড়ে না যায়— সেদিকে নজর দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ক্রমাগতভাবে ঘাটতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হয়। এতে পরবর্তীতে আবার ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ে। উন্নয়ন বাজেট এবং পরিচালন বাজেট উভয়ের জন্যই এই ঋণ নেওয়া হয়। এতে একটা দুষ্টচক্র তৈরি হয়। এই দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাজস্ব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। যদিও রাতারাতি রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট। দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট হবে না। এখানে এমন ব্যয় থাকবে না যা সাময়িকভাবে মনে হবে জনতুষ্টির, কিন্ত আসলে এর দায় গিয়ে পড়বে পববর্তী বাজেটগুলোর ওপর।
তিনি আরো বলেন, অনেক অনেক ব্যয় আছে, যেমন টাকা ছাপিয়ে যে ব্যয় হয়, তার জন্য মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে পড়ে না। এর প্রভাব পড়ে পরবর্তী বছরগুলোতে। এখন অনেক বেতন বাড়ানো হয়, তার প্রভাবও এখনই পড়বে না। কয়েক মাস পরে গিয়ে পড়বে। এ কারণে বর্তমান সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু করবে না, যার দায় পড়বে পরবর্তী বাজেটগুলোতে।
একই কারণে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প উন্নয়ন বাজেটে নেওয়া হচ্ছে না। নতুন মেগাপ্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। যে দুই-একটা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রক্রিয়া আগে থেকেই চলমান ছিল। যেমন মাতারবাড়ী উন্নয়ন প্রকল্প আমরা অনুমোদন দিয়েছি, সেটাই একমাত্র মেগা প্রকল্প। এটা জাপানের ঋণে হচ্ছে এবং জাপানের ঋণ খুবই দীর্ঘমেয়াদী। ঋণ দায় যাতে না বাড়ে, সেকারণে স্বল্পমেয়াদী এবং উচ্চ সুদে কোনো ঋণ নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আগামী বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা কষ্টকর হলেও ভবিষ্যতে বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করতে বিদেশি ঋণের দায় পরিশোধ করা হচ্ছে। যেমন জ্বালানি খাতের অনেক বকেয়া বিল আমরা পরিশোধ করে দিয়েছি। অর্থ সংকটের মধ্যে আমরা দায় পরিশোধ করেছি। ভবিষ্যতে বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করতেই এটা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, 'যদি বলা হয় এবারের উন্নয়নের কৌশল কী, তাহলে বলতে হবে, কৌশলগত গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ এক বছরে এসে দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অনেক বেশি প্রকল্প নিয়েছে। অনেক বেশি প্রকল্প হওযার কারণে স্বাভাবিক গতিতে প্রকল্পগুলো শেষ করা সম্ভব হয় না। যেটাকে অত্যধিক প্রকল্প বিড়ম্বনা বলে। চলমান এসব প্রকল্প শেষ না করলে সরকারের অপচয় বাড়বে। ফলে চলমান অনেক বেশি প্রকল্প শেষ না করে উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা কঠিন।'
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে পরিচালন ব্যয় এখন হয়তো এত দৃশ্যমান হবে না। তবে আগামী বছরের শেষের দিকে আড়াই হাজার স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দেওয়া হলে এটা বাড়বে। আর শিক্ষা খাতে শিক্ষাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন অবসর ভাতা, কল্যাণ ভাতার মতো জরুরি কিছু ভাতা অনেকদিন ধরে বকেয়া রয়েছে, সেগুলো চালু হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় কম হবে বলেও জানান ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, 'সরকার যাছাই-বাছাই করে অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করেছে। আগের সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছ, যাতে অপচয় কমানো যায়। আবার অনেক ঠিকাদার চলে গেছে, নতুন করে যদিও আবার কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণেও বাস্তবায়ন কমবে।'
উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, বৈষম্য তৈরি হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। এ কারণে প্রতিদিন আন্দোলন হচ্ছে। এবং আন্দোলনকারীরা এই সরকারের কাছে এখনই দাবি বাস্তবায়ন চায়। সব দাবির সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত থাকে। যে কারণে এই সরকারের পক্ষে দাবি পূরণ করে বৈষম্য দূর সম্ভব হয় না। এই সরকার এসেছে কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে। দাবি মানা সংস্কার নয়। কেন সবার দাবি এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকেই পূরণ করতে হবে, সেই প্রশ্ন রাখেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।