দেশে প্রতি ৪ জনের ১ জন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে বাস করে: প্রতিবেদন

বাংলাদেশে প্রতি চারজন নাগরিকের একজন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ২৪.০৫ শতাংশ বা আনুমানিক ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে বাস করছে। দেশের প্রথম জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আয়-ভিত্তিক দারিদ্র্যের প্রচলিত মাপকাঠির বাইরে গিয়ে এমপিআই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত রূপ প্রদান করে।
২০১৯ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দারিদ্র্যের প্রকট বৈষম্য ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ অঞ্চলে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ২৬.৯৬ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে এই হার ১৩.৪৮ শতাংশ।
তবে লিঙ্গভিত্তিক দারিদ্র্যে খুব বেশি ফারাক নেই। পুরুষপ্রধান পরিবারে এমপিআই স্কোর ০.১০৬ এবং নারীপ্রধান পরিবারে ০.১০৫।
প্রতিবেদনটি অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্যেও তীব্র বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে।
সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৭.৭০ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে বাস করে। পাশাপাশি পাঁচটি জেলা বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলায় এই হার ৪০ শতাংশেরও বেশি।
শিশুরা দারিদ্র্যের সবচেয়ে বেশি শিকার—২৮.৭০ শতাংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্রে বাস করছে, যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার ২১.৪৪ শতাংশ।
ঢাকায় এক মতবিনিময় সেমিনারে আয়-ভিত্তিক পরিমাপের বাইরে গিয়ে দারিদ্র্য নিরূপণের জাতীয় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত এই প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। জিইডি সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আলোচক হিসেবে অংশ নেন পিপিআরসি'র নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক একে এনামুল হক।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার, বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রথম কাউন্সেলর ও ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ইনচার্জ এডউইন কোয়েককোক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ, অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই) এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতায় এই এমপিআই সূচক তৈরি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এমপিআই কাঠামো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ১-এর আলোকে আরও কার্যকর ও লক্ষ্যনির্দিষ্ট উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী এমপিআই-এর ফলাফল জাতীয় নীতিমালা ও পরিকল্পনায় সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে জিইডি সদস্য মনজুর হোসেন নিয়মিতভাবে এমপিআই প্রতিবেদন প্রকাশে জিইডির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে কাজ করবে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করবে।