ইস্তাম্বুলে পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকেই আগ্রহী জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুধুমাত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতেই সম্মত হবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রধান উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'জেলেনস্কি ইস্তাম্বুলে পুতিন ছাড়া অন্য কোনো রুশ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন না।'
ইউক্রেনের এই অবস্থান রাশিয়ার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এটি মস্কোর কাছে ইউক্রেনে শান্তি চাওয়ার আন্তরিকতার প্রমাণ দেওয়ার আহ্বানও বটে।
চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে সম্ভাব্য একটি বৈঠকের প্রস্তাবকে ঘিরেই তৎপরতা বেড়েছে। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বৈঠকে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে পুতিন এখনো এ বিষয়ে কোনো অবস্থান জানাননি।
রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয় পক্ষ নিজেদেরকে এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট রূপরেখায় সম্মত হতে পারেনি তারা।
গত রোববার ইউক্রেনের ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে পুতিন সরাসরি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেন। এরপর ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে আলোচনায় যেতে বলেন।
জেলেনস্কির দপ্তরের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, 'তুরস্ক সফর করেই আমরা দেখিয়েছি, আলোচনার জন্য কিয়েভ প্রস্তুত। তবে যুদ্ধবিরতির আগেই আলোচনায় বসা আমাদের নীতিগত অবস্থানের পরিপন্থী।'
তিনি ডেনমার্ক সফরের সময় আরও বলেন, 'আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট ও কঠোর।'
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি যে পুতিন তুরস্ক সফর করবেন কি না। তবে সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'আমরা দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' তবে ইস্তাম্বুলে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে আর কিছু জানাননি তিনি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করেন পুতিন। এই যুদ্ধে দুই পক্ষ মিলিয়ে কয়েক লাখ সেনা নিহত হয়েছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া সমর্থন নিচ্ছে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে।
এদিকে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আলোচনায় অগ্রগতি না হলে তিনি শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবেন।
তুরস্কে ট্রাম্পের সম্ভাব্য যাত্রা
যদি সত্যিই জেলেনস্কি ও পুতিন বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হন, তাহলে এটি হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর তাদের প্রথম সরাসরি বৈঠক। ট্রাম্প এই সপ্তাহে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফরে যাচ্ছেন। তবে হঠাৎ করেই সোমবার তিনি ইস্তাম্বুলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ট্রাম্প বলেন, 'আমি আসলে [ইস্তাম্বুলে] যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। ইতিবাচক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি হয়তো যাব। তবে, আমাদের এটা শেষ করতেই হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'তুরস্কে বৃহস্পতিবারের ঘটনাকে [রাশিয়া-ইউক্রেন বৈঠক] হালকাভাবে দেখবেন না।'
রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন পুতিন। তবে মস্কো তখন জানিয়ে দেয়, তারা কোনো বড় ধরনের ভূখণ্ড ছাড় দিতে রাজি নয় এবং কিয়েভকে ন্যাটোয় যোগদানের ইচ্ছা ত্যাগ করতে হবে।
ইউক্রেনের অবস্থান বরাবরই, আগে যুদ্ধবিরতি, পরে আলোচনা। ইউরোপীয় মিত্ররাও এই অবস্থানকে সমর্থন করছে।
কিয়েভ বলছে, যেকোনো শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তারা জোরদার নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় এবং রাশিয়ার প্রস্তাবিত সামরিক বাহিনীর আকার নিয়ে বিধিনিষেধ মানতে রাজি নয়। ভূখণ্ড সংক্রান্ত আলোচনায় যেতে হলে আগে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
পুতিন একাধিকবার ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পরপরই প্রস্তাবিত এক চুক্তির কথা বলেছেন, যেটি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। সেই খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে হবে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে হবে।