কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানকে আলোচনায় বসার আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের: ইসলামাবাদ

ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) নিরাপত্তা পরিষদের এমন বার্তার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান।
এর আগে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কাউন্সিল সদস্যদের কাশ্মীর অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও "ভারতের সম্ভাব্য পদক্ষেপের আসন্ন হুমকি" সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য জানানো হয় বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "তারা (নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা) সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন এবং সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিষয়গুলোর সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।"
পাকিস্তান বলছে, ভারত পদক্ষেপ নিতে পারে; তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি দিল্লি
ইসলামাবাদের অনুরোধে আয়োজিত এই বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর চালানো হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে— দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নাটকীয় অবনতি ঘটে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেছে, হামলায় জড়িত তিন সন্দেহভাজনের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক।
ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ভারতের যেকোনো হামলার জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এরই মধ্যে পাকিস্তান তিন দিনের ব্যবধানে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, আর ভারত মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স মহড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে—যার মধ্যে রয়েছে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো ও জরুরি নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি।
'আন্তর্জাতিককরণের চেষ্টায় ব্যর্থ' পাকিস্তান: ভারতীয় সূত্রের দাবি
বর্তমানে পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হলেও ভারত নয়। তবে সোমবারের বৈঠনের আগে দিল্লি নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ভারতীয় এক সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের অনেক সদস্য দেশ— পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পারমাণবিক হুমকির কৌশলকে "উসকানিমূলক" বলে উল্লেখ করেছে।
সূত্রটি আরও দাবি করেছে, "আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীরের বিষয়টি তুলে ধরার পাকিস্তানের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বরং তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন বিষয়টি ভারত ও পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করে।"
জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কতা: 'সর্বোচ্চ সংযম দরকার'
সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, সামরিক সংঘর্ষ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, "এখনই সময় সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের এবং সংঘর্ষের কিনারা থেকে সরে আসার।"
হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন বাণিজ্য স্থগিত, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি বাতিল, আকাশপথ বন্ধ, এবং কূটনৈতিক কর্মী হ্রাস।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়ছে
এদিকে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ সতর্ক করেছে, চলমান এই উত্তেজনা পাকিস্তানের ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৩ সালে দেশটি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খেলাপির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।
অন্যদিকে, ভারতের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়— দেশটির আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাসের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করবে।