কাশ্মীর সংকটে উত্তেজনা নয়, দুই দেশের যৌথ সমাধানই একমাত্র পথ

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর মঙ্গলবারের সশস্ত্র হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি আবারো টালমাটাল হয়ে উঠেছে।
এ ঘটনায় ২৫ জনের বেশি নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার একপ্রকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব 'সন্ত্রাসী হামলার পেছনে সীমান্ত পারাপারের সংযোগ' থাকার কথা তুলে ধরে পাকিস্তানের নাম জড়িয়েছেন।
পাশাপাশি, নয়াদিল্লি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে—যে চুক্তি যুদ্ধকালীন সময়েও টিকে ছিল। সীমান্তের অ্যাটারি চেকপোস্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও নিচে নেমে এসেছে।
পাকিস্তান হামলার পরপরই উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী আজ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন, যেখানে পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ হামলার দায় স্বীকার করেছে 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' নামের এক অপরিচিত গোষ্ঠী। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, তারা কাশ্মীরে 'জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের' বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে।
গত ২৫ বছরে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এ ঘটনাকে 'ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন' বা সাজানো হামলা বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তবে হামলার নিন্দা করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোনও কারণেই নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা ন্যায্য হতে পারে না।
একই সঙ্গে ভারতেরও নিজেদের দিকে তাকানো প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দীর্ঘদিনের দমননীতির ফলেই চরম ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বন্ধ করে দিলে সেখানে অস্ত্রধারীর সংখ্যা বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক।
২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে বিজেপি সরকার 'সব কিছু ঠিক আছে' এমন ভাব দেখালেও বাস্তবতা ভিন্ন। ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী পর্যন্ত বলেছেন, সরকার যেন 'শান্তির ফাঁকা বুলি' আওড়ানো বন্ধ করে বাস্তবতা দেখে।
কাশ্মীর ও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকৃত শান্তি আসবে তখনই, যখন দীর্ঘ প্রায় আট দশকের পুরনো এই বিরোধ কাশ্মীরিদের মতামতের ভিত্তিতে, ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ অংশগ্রহণে সমাধান হবে। যদি বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার মনে করে, তারা শুধু শক্তি প্রদর্শন করে স্বাধীনতার শান্তিপূর্ণ দাবি দমন করতে পারবে—তাহলে এমন রক্তাক্ত ঘটনা চলতেই থাকবে।
পহেলগামের মর্মান্তিক হামলা ভারতের জন্য একটি বার্তা হওয়া উচিত। কাশ্মীর ও উপমহাদেশে শান্তি চাইলে, কাশ্মীর সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। সেই আলোচনায় কাশ্মীরিদের পাশাপাশি পাকিস্তানকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।
এ অবস্থায় পাকিস্তানের উচিত হবে ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে ভারতের অভিযোগ ও হুমকির জবাব প্রস্তুত করা। উত্তেজনা কমানোর পথই সর্বোত্তম, তবে ভারতের কোনো ধরনের আগ্রাসনের জবাব কঠোরভাবেই দেওয়া হবে—এটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া দরকার।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন