কেন বাংলাদেশ থেকে স্যামসাংয়ের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ফিরে গিয়েছিল, জানালেন বিডা চেয়ারম্যান

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি স্যামসাং বাংলাদেশে ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চাইলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি জানান, স্যামসাং চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল। তবে জমির মিউটেশন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় তারা বাংলাদেশ থেকে সরে গিয়ে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে। তার মতে, তৎকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বিনিয়োগটি বাংলাদেশেই থেকে যেত।
সোমবার (৭ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে 'বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫'-এর প্রথম দিনের আয়োজন ও কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "বিগত সরকার যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারায় স্যামসাংসহ অনেক বড় বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে।"
"তারা [সরকার] মনে করেছিল, জমিটি কোরিয়ান ইপিজেডকে দেওয়া যাবে না। অথচ বর্তমান সরকার মাত্র দুই মাসে এ সমস্যার সমাধান করেছে — যেটা গত ১০ বছরেও সম্ভব হয়নি, সেটা সদিচ্ছা থাকায় এখন হয়েছে।"
চৌধুরী আশিক জানান, ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া কোরিয়ান কোম্পানি ইয়াংওয়ান গ্রুপ চট্টগ্রামে কেইপিজেড গড়ে তোলে।
বিডায় দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে কোরিয়ান উদ্যোক্তা এবং ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
চৌধুরী আশিকের ভাষ্যে, তখন কিহাক বলেছিলেন, "আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি এবং এখানে ব্যবসা করি, কিন্তু জমির কাগজপত্র সংক্রান্ত সমস্যার কারণে স্যামসাং ফিরে গেছে। কারণ তাদেরকে জানানো সম্ভব হয়নি, জমির কাগজ কবে ঠিক হবে।"
তিনি বলেন, "আমরা বিডায় 'প্রজেক্ট অ্যাম্বাসেডর' নামে একটি টিম গঠন করি, যেখানে আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ের সমন্বয় করেছি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও সমন্বয় হয়েছে। যে কাজ উনারা ১০ বছরে করতে পারেননি, আমরা মাত্র দুই মাসে কাজটি সম্পন্ন করেছি।"
আশিক আরও জানান, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাক সাং প্রায় ৩০ জন কোরিয়ান বিনিয়োগকারী নিয়ে এসেছেন, যাদের তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
চৌধুরী আশিক বলেন, "সরকারের পক্ষ থেকে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সমস্যা দূর করতে কাজ করছি।"
স্টার্টআপ বিষয়েও আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা স্টার্টআপদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি। সবাইকে সহায়তা করতে চাই।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ তুলনামূলক কম। পানির দাম, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জমির মূল্য—সব মিলিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খরচ সমান হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে খরচ কম। তাছাড়া, আমাদের কর্মীরা সহজেই নতুন কিছু শিখতে পারে।"
বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে ধারাবাহিক যোগাযোগ রাখা হবে জানিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, "বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত একদিনে হয় না। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমাদের লক্ষ্য—তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।"