Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
July 20, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JULY 20, 2025
ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা

ফিচার

সালেহ শফিক
10 April, 2025, 06:55 pm
Last modified: 10 April, 2025, 07:02 pm

Related News

  • ‘বাইসাইকেল থিভস’ চলচ্চিত্রের সেই শিশু অভিনেতা এনজো স্তাইওলা মারা গেছেন
  • আগাথার একই উপন্যাস থেকে শোয়ার্জনেগার ও স্ট্যালনের অ্যাকশন সিনেমা—দুটোই ফ্লপ
  • ৭৮তম কান উৎসবে ‘স্পেশাল মেনশন‘ পেলো বাংলাদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’
  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • বিদেশি সিনেমার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা

১৯৮৬ সালে আরমান ফাইট ডিরেক্টর হন। তার ডিরেকশন দেখে মুগ্ধ হতেন জসিম নিজেও। বলতেন, ‘তুমি আমার বন্ধু, শাগরেদ, ওস্তাদও বটে। তোমার কম্পোজিশন দেখে আমিও শিখছি।’
সালেহ শফিক
10 April, 2025, 06:55 pm
Last modified: 10 April, 2025, 07:02 pm
কোলাজ: টিবিএস

'ঢাকাই অ্যাকশন ছবির যৌবনকাল হলো আশির দশক। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে গ্রামীণ পটভূমির ছবি অনেক নির্মিত হয়েছে, তারপর হয়েছে ফোক ফ্যান্টাসি, তারপর রাজা-বাদশার ছবি। এসব দেখতে দেখতে দর্শক বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল, তাদের কাছে ওসব ছবি তখন পানসে। তাই আশির দশকে একের পর এক অ্যাকশন ছবি নির্মিত হতে থাকল আর প্রায় সবই সুপারহিট।'

এফডিসির শিল্পী সমিতির অফিসে বসে কথাগুলো বলছিলেন ফাইট ডিরেক্টর আরমান।

কিন্তু চাইলেই তো অ্যাকশন ছবি তৈরি হয়ে যায় না। এর জন্য চর্চা লাগে, অস্ত্রশস্ত্র লাগে, স্টান্টম্যান লাগে, প্রশিক্ষক লাগে। ঢাকাই ছবিতে মডার্ন অ্যাকশন ছবির যুগ চলে এসেছিল 'দোস্ত দুশমন' ছবির মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে। পরের বছরই নির্মিত হয় এজে মিন্টুর 'মিন্টু আমার নাম'। দুটি ছবিই মুম্বাইয়ের দুই ছবি 'শোলে' ও 'জনি মেরা' নামের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল।

সে অর্থে বলা যায় সত্তর দশকের শেষার্ধেই অ্যাকশন ছবির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর আশির দশকে যখন ভিসিআর চলে এল তখন থেকে অ্যাকশন ছবির ঢল নামল। চলচ্চিত্র পরিচালক ও গবেষক শাহীন মাহমুদের দারুণ পর্যবেক্ষণ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।

দেওয়ান নজরুল পরিচালিত 'দোস্ত দুশমন' ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

'অ্যাকশন মানে জসিম'

শাহীন মাহমুদ বললেন, '"দোস্ত দুশমন" ও "মিন্টু আমার নাম" দুটি ছবিতেই [নায়ক] জসিম ছিলেন। অ্যাকশন মানে জসিম। দোস্ত দুশমন যখন তৈরি হয়েছিল তখনো ভিসিআর আসেনি। বিদেশি অ্যাকশন ছবি দেখার সুযোগ ছিল কেবল সিনেমা হলে। সেসব দেখে জসিম নিজের উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের উপযোগী অ্যাকশন সিন তৈরি করতেন।

'সে সময় আমাদের এখানে বড়জোর ডুয়েল (দ্বৈত) অ্যাকশন ছবি তৈরি করা যেত। ভিসিআর আসার পর জসিম অ্যাকশন কম্পোজ করা শুরু করেন। একাধিক ছবির একাধিক অ্যাকশন দৃশ্য ব্লেন্ড করেও জসিম একটি অ্যাকশন দৃশ্য তৈরি করতেন।'

চলচ্চিত্রে আসার আগে জসিম ছিলেন কুস্তিগীর। পুরানো ঢাকায় তার লড়াই দেখেছিলেন নায়ক আজিম। কাজে লাগবে ভেবে নিয়ে আসেন এফডিসিতে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নির্মাতাদের সঙ্গে। প্রথম ছবিতে খুব ছোট্ট একটি রোলে অভিনয় করেন জসিম।

মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতায় জসিম মার্শাল আর্ট ও ফাইটিংয়ের কিছু কৌশল শিখেছিলেন থাইল্যান্ডের এক ওস্তাদের কাছে। ১৯৭৩ সালে 'রংবাজ' ছবিতে কিছু কৌশল শেখানোর সুযোগ পান, যেগুলো ছিল বাস্তবের অনেকটাই কাছে।

রোমান্টিক ঘরানার ছবি 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'-এ স্নাইপার রাইফেলের ব্যবহার আছে। ছবি: সংগৃহীত

শাহীন মাহমুদ মনে করেন, দেশের প্রথম অ্যাকশন ছবির তকমা 'রংবাজ'-এ পাওয়া ঠিক নয়, বাবুল চৌধুরী পরিচালিত 'প্রতিশোধ' (১৯৭২) প্রথম অ্যাকশন ছবির মর্যাদা লাভের দাবিদার।

ইবনে মিজানের 'জিঘাংসা' ছবিটিরও এ মর্যাদা পাওয়ার আবেদন রাখতে পারে। এটি ছিল লেডি অ্যাকশন টাইপ ছবি। এটি মডার্ন অ্যাকশন ঘরানার একটি শাখা। এতে নায়িকা থাকেন মূল চরিত্রে। 'জিঘাংসা'য় জবা চৌধুরী প্রধান চরিত্র রুপায়ন করেছিলেন।

তিনি বললেন নূরুর কথা

সত্তর দশকের শেষ দিকে এ জে মিন্টু নির্মাণ করেছিলেন 'মিন্টু আমার নাম', সুপার ডুপার হিট হয়েছিল ছবিটি। এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ছটকু আহমেদ। সংশ্লিষ্টজনের মত, 'জনি মেরা নাম'-এর বাংলাকরণ খুব খারাপ হয়নি। দু-এক জায়গায় কেবল টাল খেয়েছিল।

ছটকু আহমেদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কী কী অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল ছবিটিতে। তিনি রিভলবার, বন্দুক, স্টেনগানের কথা মনে করতে পারলেন। জানতে চাইলাম, কোথায় তখন অস্ত্র মিলত? তিনি বললেন নূরুর কথা।

'বদলা' ছবিতে বুলেট-বেল্ট পরিহিত সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

সে ছিল তখনকার এক বিস্ময় বালক যার কথা পরে এফ.আই. মানিকও বলেছেন — 'তাকে যা দেওয়া হতো তার হুবহু নকল সে বানিয়ে ফেলতে পারত। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের অনেকের লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল, সেগুলো দেখাতাম অথবা ফটোগ্রাফ দেখাতাম আর বলতাম তাড়াতাড়ি করে দিও নূরু। ব্যস এরপর যতক্ষণ না সে কাজটি শেষ করতে পারছে ততক্ষণ তার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ।'

নূরু এগুলো তৈরি করত কি দিয়ে? ছটকু আহমেদ বলেছিলেন, 'প্রথম দিকে মাটি দিয়েও কিছু অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেগুলোর ওপর রং দিয়ে আসলের মতো দেখানোর চেষ্টা ছিল। পরের দিকে কাঠ, লোহা, স্টিলের পাত ব্যবহার করা হয়েছে।'

এফ আই মানিক যোগ করেন, 'জসিম অ্যাকশনে আসার পর সিঙ্গাপুর থেকে কিছু অস্ত্র আনিয়েছিলেন, যেগুলো আমরা অবাক হয়ে দেখেছিলাম কারণ সেগুলো দেখতে একদম আসলের মতো ছিল।'

দেশের প্রথম ফাইটিং টিম গড়ে উঠেছিল জসিমের নেতৃত্বে। নাম ছিল জ্যাম্বস। চারজনের দলের অন্য তিন জনের নাম এনামুল করিম আমান, মাহবুব খান গুই ও রুহুল আমিন বাবুল। চারজনের নামের আদ্যাক্ষর এবং শেষে 'এস' যোগ করে তৈরি হয়েছিল জ্যাম্বস।

মেগাস্টার উজ্জ্বলের সঙ্গে শাহীন মাহমুদ। ছবি: মীর শামসুল আলম বাবু

দিনে দিনে জ্যাম্বস মুভিজ, জ্যাম্বস প্রোডাকশনস, জ্যাম্বস গ্রুপও তৈরি হয়েছিল। 'দোস্ত দুশমন' দিয়ে জ্যাম্বস মুভিজের যাত্রা শুরু। তারপর 'বারুদ', 'জনি', 'ওস্তাদ শাগরেদ', 'আক্রোশ', 'হিরো', 'কালিয়া', 'ভাইজান', 'মাস্তান রাজা', 'কাজের বেটি রহিমা'সহ ১২টি ছবি প্রযোজনা করেছে জ্যাম্বস মুভিজ।

২০০ শিষ্য রেখে গেছেন

এফডিসিতে জসিমকে ডাকা হতো ওস্তাদ বলে। আরমান ছিলেন জসিমের সহকারী। ১৯৭৭ সালে তিনি জসিমের সহকারী হন। তিনি ছিলেন জাঁদরেল স্টান্টম্যান। পরপর আটটি কাচের দেওয়াল ভেদ করার উদাহরণও তিনি তৈরি করেছিলেন।

কলকাতা, নেপাল, ব্যাংককেও তিনি সমাদর পেয়েছিলেন। ঢাকা-কলকাতা তিনি যাওয়া আসার মধ্যেই থাকতেন। হাসতে হাসতে বলছিলেন, 'কলকাতায় ওরা ফাইট করতে আসত স্যান্ডেল আর পাজামা পরে। পরে আমরা বকাঝকা দিয়ে পোশাক-আশাক, চলা-ফেরা শিখিয়েছি।'

১৯৮৬ সালে আরমান ফাইট ডিরেক্টর হন। তার ডিরেকশন দেখে মুগ্ধ হতেন জসিম নিজেও। বলতেন, 'তুমি আমার বন্ধু, শাগরেদ, ওস্তাদও বটে। তোমার কম্পোজিশন দেখে আমিও শিখছি।'

অ্যাকশনই ছিল জসিমের ধ্যান-জ্ঞান। ছবি: সংগৃহীত

আরমানকে নিজের একটি ছবির ফাইট ডিরেক্টর হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জসিম। কিন্তু আরমান কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না, বলেছিলেন, 'ওস্তাদ, আপনার সামনে দাঁড়ানোর সাহসই আমার নেই। আমি কীভাবে আপনাকে ডিরেকশন দেব?'

আরমান নিজের ঘরে জসিমের একটি ছবি ঝুলিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বের হওয়ার সময় তাকে সালাম করে বের হন। জসিমের ছাত্রদের মধ্যে আরো যারা খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে মোসলেম, কামাল, আমির, বুলেট, পারভেজ গাঙ্গুয়া, নূর ইসলাম, আওলাদ অন্যতম।

আটানব্বই সালে মারা যাওয়ার আগে জসিম প্রায় ২০০ শিষ্য রেখে যান।

আরমানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অস্ত্র ধরা, লাফিয়ে পড়া, মার ঠেকানো, মার দেওয়া কি আপনারা নায়ক-নায়িকাদের শিখিয়ে দেন? আরমান উত্তর দিলেন, 'শুধু শেখাই না, বার বার মনিটর করি। বকা-ঝকা আর মারধরও করি।'

তিনি বললেন, 'এটা ওস্তাদের কাছেই শেখা। তিনি বলেছিলেন, কাজের সময় ছোট বড় কিছুই মানবি না। কাজটি ঠিকমতো না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনোদিকে খেয়ালও করবি না। এই যেমন নায়ক মান্নাকে টিপ্পনী কাটতাম, ইশশ এই বকের মতো ঠ্যাং নিয়ে নায়ক হতে আসছে।'

আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারই পোস্টারের প্রধান আকর্ষণ। ছবি: সংগৃহীত

নায়ক-নায়িকারাও বকাঝকা মেনে নিত কারণ তারা জানত এগুলো তাদের ভালোর জন্যই বলা হচ্ছে।

ভিসিআর আসার পর

কথা হচ্ছিল, আশির দশক কী কারণে অ্যাকশন ছবির স্বর্ণযুগ হয়ে উঠল। শাহীন মাহমুদের মতে ভিসিআরই প্রধান কারণ।

জসিম অবশ্যই এখানে অনুঘটক। তার ধ্যান-খেয়াল সবই ছিল অ্যাকশন ঘিরে। ভিসিআর আসার পর ঢাকাই ছবিতে একাধিক আর্টিস্টের সম্মিলিত অ্যাকশন দেখানোর সুযোগ তৈরি হলো। সহজ উঠল ব্লকিং বা কম্পোজিশন তৈরি করা।

আশির দশকেও কিন্তু ফোক ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক বা গ্রামীণ পটভূমির ছবি হয়েছে। তবে অ্যাকশন ছবির সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। আর টুকটাক অ্যাকশন তো সব সামাজিক, রোমান্টিক সব ছবিতেই থাকত।

সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির কথা এখানে উদাহরণ হিসাবে আসতে পারে। নায়ককে খুন করার জন্য নায়িকার বাবা এক খুনীকে পাঠিয়েছিলেন।

'লড়াকু' ছবিতে মার্শাল আর্টের ব্যাপক প্রকাশ ঘটেছিল। ছবি: সংগৃহীত

নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে খুনী একটি ব্যাগের চেইন খুলে তা থেকে অস্ত্রের (মেইড বাই নূরু) বিভিন্ন অংশ বের করে একটির সঙ্গে আরেকটি জুড়ে দিয়ে তৈরি করলেন স্নাইপার রাইফেল। তারপর ভিউফাইন্ডার (স্কোপ) দিয়ে খুঁজতে থাকলেন নায়ককে।

অ্যাকশনের প্রকারভেদ

লাঠি ফাইট, সোর্ড ফাইট এবং হ্যান্ড ফাইটকে বলা হতো ওল্ড অ্যাকশন। তার জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে তৈরি হলো মডার্ন অ্যাকশন। 'দোস্ত দুশমন'-এর পরিচালক দেওয়ান নজরুল ১৯৭৮ সালে 'বারুদ' আনলেন। তারপর 'জনি', 'কুরবানি', 'ধর্ম আমার মা', 'আসমান জমিন', 'মাটির দুর্গ' উপহার দিলেন দর্শককে।

অ্যাকশন ছবিতে দর্শক তখন এমনই বুঁদ যে, 'ধর্ম আমার মা' ছবিতে দেওয়ান নজরুল সুচরিতা, জুলিয়া, নতুন সবার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। লেডি অ্যাকশন ছবির দারুণ নমুনা হয়ে সেটি আজও দর্শক মনে বিরাজমান।

আশির দশকেই এ জে মিন্টু, এফ কবীর চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, মমতাজ আলী সুপার-ডুপার সব অ্যাকশন মুভি উপহার দিয়েছেন। মমতাজ আলীর 'নসিব'-এর কথা এখানে উল্লেখযোগ্য, যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন মেগাস্টার।

ঢাকাই ছবিতে অ্যাকশন মানে জসিম। ছবি: সংগৃহীত

ছিয়াশিতে মমতাজ আলী আরেকবার পর্দা কাঁপালেন 'উসিলা' ছবি দিয়ে। সে বছর অ্যাকশন বা সোশ্যাল অ্যাকশন ঘরানায় আরো নির্মিত হয়েছে, যেমন মোতালেব হোসেনের 'আক্রোশ', মালেক আফসারীর 'গোলমাল' ও 'রাস্তার রাজা', অশোক ঘোষের 'নিশান' বা এ জে মিন্টুর 'অশান্তি'।

যেভাবে গুলি ফুটত

সে আমলে গুলি চালানো, শব্দ তৈরি, রক্ত বের হওয়ার কারিগরি কৌশলেরও বিস্তৃত বর্ণনা দিলেন শাহীন মাহমুদ। আগ্নেয়াস্ত্র যার হাতে থাকত, তাকে লম্বা হাতে জামা পরতে হতো। একটি তার জামা ও প্যান্টের ভিতর দিয়ে চলে গিয়ে সংযুক্ত হতো দূরে থাকা ইলেকট্রিক বোর্ডের সঙ্গে।

অগ্নেয়াস্ত্রের মুখে টেপ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হতো চার বা পাঁচটি পটকা। নায়ক বা নায়িকা গুলি ছোড়ার ভঙ্গি করার সঙ্গে সঙ্গে ফাইট ডিরেক্টরের একজন সহকারী বোর্ডে থাকা সুইচগুলোয় চাপ দিতেন, এবং পটকা পরপর ফুটে গিয়ে ঢ্যা ঢ্যা ঢ্যা আওয়াজ হতো।

অন্যদিকে যার গায়ে গুলি লাগত, তার গায়েও পটকা জুড়ে দেওয়া হতো। পটকা ফুটলে সঙ্গে থাকা বেলুন ফুটে গিয়ে রুহ আফজা ও গ্লিসারিনের মিশেলে বেরিয়ে আসত এক প্রকারের তরল পদার্থ, যা রক্তের মতো দেখা যেত। মজার ব্যাপার হল, নূরু আগ্নেয়াস্ত্রের উপকরণ হিসাবে যেসব জিনিস ব্যবহার করত, তার মধ্যে ছিটকিনিও ছিল। এটাকে তিনি ট্রিগার বা লোডার হিসেবে ব্যবহার করতেন।

স্টাইলিস্ট জসিম। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ছবিতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছিল কোন ছবি থেকে? উত্তরে শাহীন মাহমুদ বললেন, একদম প্রথম ছবি মানে 'মুখ ও মুখোশ' থেকে। ছবির শেষ দৃশ্যে নায়িকা ডাকাত দলের সর্দারকে গুলি করে।

তারপর জহির রায়হান পরিচালিত প্রথম রঙিন ছবি 'সঙ্গম'-এও গোলাগুলি আছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবির প্রায় শেষ দৃশ্যে নবাবের সহচর মোহনলালকে (খান আতা যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন) পিস্তল দিয়ে গুলি করে লর্ড ক্লাইভ।

স্বাধীনতার পরপর চাষী নজরুল ইসলামের 'ওরা ১১ জন' ছবিতে আদত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। যুদ্ধফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তারা অস্ত্র চালনায় পারদর্শী ছিলেন এবং গোলাগুলিও হয়েছিল বাস্তবসম্মতভাবে।

চালান আটকে গিয়েছিল বিমান বন্দরে

হুবহু ডামি আগ্নেয়াস্ত্রের একটি চালান বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। সম্ভবত এটিই ছিল আমাদের এখানে একমাত্র উদ্যোগ, আর সেটিও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

দুটি ডামি আগ্নেয়াস্ত্র, সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জাদুঘরে। ছবি: সংগৃহীত

'দি রেইন' ছবিখ্যাত পরিচালক এসএম শফি 'মাসুদ রানা টু' নামে একটি ছবি নির্মাণ করছিলেন তখন। সে ছবিটির জন্যই তিনি আনাচ্ছিলেন অস্ত্রগুলো। কয়েকটি দেশে ছবিটির শুটিং হয়, এমনকি জাপানের পাতাল রেলেও।

কিন্তু অর্ধেক শুটিং হওয়ার পর এটি আর্থিক সংকটের কারণে স্থগিত থাকে। তারপর আর অর্থের সংস্থান হয়নি। কিছুকাল পরে শফি সাহেবও মারা যান। ছবিটি আর কখনোই সমাপ্ত হয়নি।

চাইনিজ কুড়ালের আমল

মার্শাল আর্ট নামে অ্যাকশন ঘরানার আরেক টাইপের ছবির কথাও মনে করিয়ে দিলেন শাহীন মাহমুদ। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে সোহেল রানার 'শরীফ বদমাশ' দিয়ে। তবে পরিপূর্ণ একটি মার্শাল আর্ট ছবির কৃতিত্ব দিতে হয় 'লড়াকু'-কে।

শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত এবং রুবেল অভিনীত ছবিটি নির্মিত হয় ১৯৮৬ সালে।

এ ছবিতেই ঢাকার দর্শক ভালোভাবে চাইনিজ কুড়াল, সামুরাই ও নান চাকুর ব্যবহার দেখতে পেল। ততদিনে কিন্তু ভিসিআর ভাড়া করে হংকংয়ের ছবি দেখার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন ব্রুস লির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন অনেকে।

ছটকু আহমেদ পরিচালিত 'লেডি অ্যাকশন' ঘরানার ছবি 'অত্যাচার'। ছবি: সংগৃহীত

'লড়াকু'র পর থেকে শহীদুল ইসলাম খোকন যত ছবি করেছেন, কোনোটাই ফ্লপ হয়নি। সব কটিতেই মার্শাল আর্ট ব্যবহৃত হয়েছে। মার্শাল আর্টভিত্তিক ছবির সাফল্যের জন্য ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভূমিকা আছে।

ওস্তাদ জাহাঙ্গীরের জন্ম উখিয়ায়, তবে প্রশিক্ষিত হয়েছেন বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার)। চট্টগ্রামে তিনি একটি স্কুল খোলার চেষ্টা করছিলেন। সে সময় মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানার নজরে পড়েন।

মাসুদ পারভেজ তাকে নিয়ে আসেন এফডিসিতে। সোহেল রানা, রুবেল, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কোবরাসহ অনেকে তার কাছে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

যৌথ প্রযোজনার আমলে

এফ.আই. মানিক জানালেন, একটা সময়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার অনেক ছবি হয়েছে। এসব ছবির কলাকুশলীরা এপারে-ওপারে যাতায়াত করতেন হরদম।

'নায়িকা ঋতুপর্ণাকে নিয়ে এসেও অ্যাকশন ছবি করিয়েছি। দক্ষিণ ভারতের কিছু ফাইট ডিরেক্টরও আমরা আনিয়েছিলাম। তারা প্রপসের সঙ্গে কিছু উন্নতমানের ডামি অস্ত্র নিয়ে আসতেন। কাজ শেষ হওয়ার পর কিছু কিছু আমাদের উপহারও দিয়ে গেছেন,' বলেন তিনি।

আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই দর্শক আকৃষ্ট করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে 'নীতিবান' ছবির পোস্টারে। ছবি: সংগৃহীত

'আমার পরিচালিত প্রথম ছবি "বিস্ফোরণ"কে অ্যাকশননির্ভর ছবি বলা ভুল হবে না। খুব আনন্দের সঙ্গে প্রাণ খুলে একটি অ্যাকশন ছবি করেছি, যার নাম "সুলতান"।'

আরমানের কাছে জানলাম, ছবির সমাপ্তি বা ক্লাইম্যাক্স অ্যাকশন সবচেয়ে দীর্ঘ হয়। একটি দীর্ঘ অ্যাকশন ছবির শুরুতেও থাকে। ছবির মাঝখানে থাকে খণ্ড খণ্ড অ্যাকশন।

'শান্ত কেন মাস্তান' ছবির ক্লাইম্যাক্স অ্যাকশনের শুটিং হয়েছিল ১৭ দিন ধরে, যার পর্দা স্থায়িত্ব প্রায় ৭ মিনিট। রাজ্জাক, হুমায়ুন ফরিদী, মিশা সওদাগর, মান্না, শাহনাজসহ ২৫ জন আর্টিস্ট এতে অংশ নিয়েছিলেন। গান ফাইট, সোর্ড ফাইট আর শেষে হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কমব্যাটও ছিল।

কে কত নম্বর পায়

আরমান দেশের এক নম্বর অ্যাকশন আর্টিস্ট হিসেবে জসিমকে ধরেন। তারপর সোহেল রানা ও আলমগীর। এই সময়ে এসে শাকিব খানের অ্যাকশনও তার ভালো লাগে।

সত্তরের দশকের শেষার্ধে সুপার-ডুপার হিট হয়েছিল 'মিন্টু আমার নাম'। ছবি: সংগৃহীত

নায়িকাদের মধ্যে রোজিনা, শাবানা, দিতি, মুনমুন, অঞ্জু ঘোষকে আরমান ভালো নম্বর দেন। শাহীন মাহমুদের বিবেচনায় অবশ্য অঞ্জনা ছিলেন নায়িকাদের মধ্যে সেরা অ্যাকশন আর্টিস্ট। জুলিয়া এবং নতুনও খুব ভালো অ্যাকশন জানতেন।

একজন অদ্ভুত অ্যাকশন আর্টিস্টের কথা মনে পড়ে জনাব মাহমুদের। গান ফাইটের চেয়ে তিনি সোর্ড ফাইট করেছেন বেশি। তবে গান ফাইটেও মানাত ভালো।

তার নাম বাবুল গোমেজ (মতান্তরে বাবুলাল গোমেজ) ওরফে জাম্বু। শোনা যায়, তিনি ছিলেন বিমানবন্দরের ক্লিনার। তারপর কোনো একজন পরিচালক বা অভিনয়শিল্পীর নজরে পড়ে চলচ্চিত্রে আসেন।

টাক মাথার বিশালবপুর মানুষটির সঙ্গে তুলনীয় দ্বিতীয় কেউ ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে। মাথায় কাউবয় হ্যাট তুলে নিয়ে যখন বুট পরে জিপ থেকে নামতেন, তা ছিল দেখার মতো দৃশ্য।

নূরুর মতো তার জন্যও বেদনাবোধ করেন শাহীন মাহমুদ। দুজনের কেউই আর ইহজগতে নেই।

মারামারির দৃশ্যে জসিম ও জাম্বু। ছবি: বাংলা মুভি ডেটাবেজ

অ্যাকশনের বিবর্তন

যখন নায়ক এবং ভিলেন দুজনেই হতেন অপরাধ জগতের, তখন অ্যাকশনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেত নিঃসন্দেহে।

এমন 'টোটাল অ্যাকশন' বা 'ফুল অ্যাকশন' ঘরানার ছবিও কম হয়নি। শাহীন মাহমুদ মনে করেন, রুবেল, মান্নার পরে অ্যাকশন ছবিতে ডিপজল একটি অন্যতম চরিত্র। ভয়াল দর্শন, অবাস্তবিক সব অস্ত্র তার হাতে, কাঁধে শোভা পেত স্বচ্ছন্দ্যে।

এ লেখায় মূলত অ্যানালগ পিরিয়ডের অ্যাকশন ছবির কথা বলা হলো। এখনকার ডিজিটাল পিরিয়ডের দৃশ্যপট পুরো আলাদা।

তবে তার জন্য আরেকটা লেখা তৈরি করতে হবে। তাই আপাতত ঢ্যা ঢ্যা ঢ্যা ঢিসুম ঢিসুম সমাপ্ত।

Related Topics

ঢাকাই সিনেমা / ঢালিউড / চলচ্চিত্র / বাংলাদেশি চলচ্চিত্র / বাংলা সিনেমা / অ্যাকশন সিনেমা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ক্লিক, অপেক্ষা, আবার ক্লিক: প্রতিশ্রুত স্বস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডিজিটাল ভূমি সেবা
  • যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারীদের জন্য ২৫০ ডলারের নতুন ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ চালু, নেই মওকুফের সুযোগ
  • গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতরা কারা ছিলেন?
  • বাংলাদেশে চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের মিশন, চুক্তি সই
  • ৫০ বছর আগের ভীতিকর স্মৃতি: ভারত সরকার ৮০ লাখ পুরুষকে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ করায়
  • ‘তারা হয় পরকীয়া করছেন নাহলে লাজুক?’: কোল্ডপ্লে-র কনসার্টে ‘সহকর্মীকে’ আলিঙ্গনের ভিডিও ভাইরাল, ছুটিতে সেই সিইও

Related News

  • ‘বাইসাইকেল থিভস’ চলচ্চিত্রের সেই শিশু অভিনেতা এনজো স্তাইওলা মারা গেছেন
  • আগাথার একই উপন্যাস থেকে শোয়ার্জনেগার ও স্ট্যালনের অ্যাকশন সিনেমা—দুটোই ফ্লপ
  • ৭৮তম কান উৎসবে ‘স্পেশাল মেনশন‘ পেলো বাংলাদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’
  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • বিদেশি সিনেমার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

Most Read

1
বাংলাদেশ

ক্লিক, অপেক্ষা, আবার ক্লিক: প্রতিশ্রুত স্বস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডিজিটাল ভূমি সেবা

2
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারীদের জন্য ২৫০ ডলারের নতুন ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ চালু, নেই মওকুফের সুযোগ

3
বাংলাদেশ

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতরা কারা ছিলেন?

4
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের মিশন, চুক্তি সই

5
আন্তর্জাতিক

৫০ বছর আগের ভীতিকর স্মৃতি: ভারত সরকার ৮০ লাখ পুরুষকে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ করায়

6
আন্তর্জাতিক

‘তারা হয় পরকীয়া করছেন নাহলে লাজুক?’: কোল্ডপ্লে-র কনসার্টে ‘সহকর্মীকে’ আলিঙ্গনের ভিডিও ভাইরাল, ছুটিতে সেই সিইও

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net