কারাগারের সেলে দুতার্তের প্রথম রাত আইসিসির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত

হংকং থেকে দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আসিসি) আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সমর্থকরা কারাগারের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। তাকে কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় পতাকা হাতে সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে 'তাকে ফিরিয়ে দিন' বলে স্লোগান দিয়েছেন। খবর বিবিসির
এর আগে, দুতার্তের 'মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি।
তবে ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তে নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার আগ মুহূর্তেও তার 'মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'- শীর্ষক অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে যান।
অন্যদিকে, আইসিসি ওই অভিযানের দায়ে দুতার্তের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাদের 'উপযুক্ত কারণ' খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করেছেন।
মাদক কারবারি, ব্যবহারকারী এবং সংশ্লিষ্টদের বিনা বিচারে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুতার্তে মেয়র এবং দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
সরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ছয় হাজারের মতো। অবশ্য সচেতনমহল দাবি করে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
দুতার্তে বলেন, দেশে অপরাধের লাগাম টানতে তিনি মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
অধিকারকর্মীদের দাবি, এ অভিযানে শহুরে দরিদ্র তরুণদের লক্ষ্য করে ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছে পুলিশ।
সমালোচকরা জানান, ওই 'মাদকবিরোধী যুদ্ধে' ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ এবং সেসময় বহু সন্দেহভাজনকে তাড়াহুড়ো করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সন্দেহভাজন মাদক অপরাধীদের নিশানা করতে অর্থ বা পুরস্কারের বিনিময়ে কাজ করা ছায়া 'ডেথ স্কোয়াডও' ছিল বলে ফিলিপিন্সের পার্লামেন্টের করা তদন্তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
তবে দুতার্তে বরাবর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুতার্তে এশিয়া মহাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি আইসিসি কর্তৃক অভিযুক্ত হলেন। এছাড়া তিনি তিন বছরের মধ্যে দ্য হেগ শহরে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি।
সে হিসেবে রদ্রিগো দুতার্তের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
রদ্রিগো দুতার্তে কীভাবে গ্রেপ্তার হলেন?
রদ্রিগো দুতার্তের গ্রেপ্তার ও নির্বাসন ছিল একটি নজিরবিহীন ঘটনার ফলাফল।
তার সমর্থকদের অভিযোগ, আইসিসিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস।
২০২২ সালেও দুতার্তেকে আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি করতে পারাটা অকল্পনীয় বলে মনে হতো। সেসময় তার মেয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে, মার্কোসের সঙ্গে শক্তিশালী 'একতামে' জোট গঠন করেন। ওই বছর তাদের জোট সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল।
কয়েক মাস আগে পর্যন্ত মার্কোস আইসিসিকে তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। কিন্তু যে গতিতে দুতার্তেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং তাকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে; তাতে বোঝা যাচ্ছে, দুতার্তে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর তিনি তার অবস্থান বদলেছেন।
ফিলিপিন্সের মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট (আইসিএইচআরপি) এই গ্রেপ্তারকে 'ঐতিহাসিক মুহূর্ত' অ্যাখ্যা দিয়েছে।
এদিকে, ম্যানিলায় আটক থেকে শুরু করে দ্য হেগে পৌঁছানো পর্যন্ত তার প্রত্যর্পণের পুরো প্রক্রিয়াটি তার মেয়ে কিটি এবং দুতার্তে নিজেই তার সহযোগীর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
তিনি একটি ফেসবুক ভিডিওতে বলেছিলেন, 'আমিই আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি বলেছিলাম যে আমি আপনাদের রক্ষা করব এবং এর সমস্ত দায়িত্ব নেব।'