তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় খুন হন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ: পুলিশ

এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের পর হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া ঢাকা উত্তরখানে হত্যাকাণ্ডের হন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
আজ বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, "টাকা-পয়সা রাখার ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েন এক দম্পতি। তাদের অসহায়ত্ব দেখে দুজনকে নিজের বাসায় চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। নিয়ে যান উত্তরখানের একটি ভাড়া বাসায়। তবে চাকরির কথা বলে নিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, সুযোগ পেলেই যুবককে বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানী করতেন তিনি।"
"সবশেষ গত রোববার রাতে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন, ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। পরে ১১ মার্চ ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়," যোগ করেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারকৃত দম্পতি হলেন- মো. নাজিম হোসেন (২১) ও রূপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইলফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্ত মাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, "গত ১০ মার্চ রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা করেন।"
মামলার এজাহারে নিহতের ভাই উল্লেখ করেন, নিহত সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থল তার সামনেই এই জায়গাটি।
গ্রেপ্তার দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে উত্তরার পুলিশ কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, "হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২-৩ দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার মো. নাজিম হোসেন ও রূপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সাইফুর তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন দম্পতিকে। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রূপাকে তার ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক বেডে ছিলেন নিহত সাইফুর রহমান এবং দম্পতি রূপা ও নাজিম।"
তিনি আরও বলেন, "সে রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান রূপাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নাজিম ঘুম থেকে জেগে রান্নাঘর থেকে বটি এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃতুবরণ করেন।"
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কি না, জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, "থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে ধরনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি।"