নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ভারত

বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে মিশন শুরু, এরপর জয়ের মালা কেবল বড়ই করে গেছে ভারত। অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটির সামনে বাধার দেয়াল তুলতে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষই। শিরোপার লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডও কুলিয়ে উঠতে পারলো না রোহিত শর্মার দলের বিপক্ষে। আগে ব্যাটিং করে কিউইরা যে সংগ্রহ গড়ে, হিসেবি রান তাড়ায় তা টপকে শিরোপা উৎসবে মেতে উঠলো আসরজুড়ে ছড়ি ঘোরানো ভারত। অপরাজিত হিসেবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতলো তারা।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। ১২ বছর পর আসরটির শিরোপা জিতলো তারা, তাদের মোট শিরোপা হলো তিনটি। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসের রেকর্ড। দুটি করে শিরোপা জিতে এতোদিন একই বিন্দুতে ছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের স্বাদ পায় ভারত, ২০১৩ সালে দ্বিতীয় শিরোপা জেতে তারা। এর আগে পরে মিলিয়ে আরও দুটি ফাইনাল খেললেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতা হয়নি। পঞ্চম ফাইনালে এসে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুললো ভারত।
আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল মানেই যেন নিউজিল্যান্ডের জন্য হৃদয় ভাঙার গল্প। শিরোপার লড়াইয়ে হারই যেন তাদের জন্য অমোঘ নিয়তি। ছয় বছরের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপসহ তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারলো কিউইরা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। দুই বছর পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্ল্যাক ক্যাপরা হার মানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। চার বছর পর এসে আরও একটি ফাইনালে কেবল হতাশাই সঙ্গী হলো তাদের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ড্যারিল মিচেল এবং মাইকেল ব্রেসওয়েলের হাফ সেঞ্চুরি ও রাচিন রবীন্দ্র-গ্লেন ফিলিপসের তিরিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৭ উইকেটে ২৫১ রান তোলে কিউইরা। জবাবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ম্যাচসেরা রোহিত ও শুভমান গিলেন দাপুটে শুরুর পর শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর প্যাটেল, লোকেশ রাহুলদের ব্যাটে ৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ভারত। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ভারত। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপাও ঘরে তুললো হারের কোনো স্বাদ না নিয়েই।
লক্ষ্য তাড়ায় দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত ও শুভমান। এই জুটিতে অবশ্য রোহিতের অবদানই বেশি। শুভমান দেখেশুনে খেললেও চিরচেনা ভঙ্গিমায় দ্রুত রান তুলতে থাকেন রোহিত। উদ্বোধনী জুটিতে ১৮.৪ ওভারে ১০৫ রান পায় ভারত। ৫০ বলে একটি ছক্কায় ৩৭ রান করা শুভমানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। পরের ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েল এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে দিলে চাপে পড়ে ভারত। দলীয় ১২২ রানে রোহিত ফিরলে চাপ আরও বাড়ে। ভারত অধিনায়ক ফেরার আগে ৮৩ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ম্যাচ জেতানো ৭৬ রান করেন।
রোহিদের বিদায়ে পর চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন অক্ষর ও শ্রেয়াস, এ দুজন ৭৫ বলে ৬১ রান যোগ করেন। ৬২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪৮ রান করে আউট হন শ্রেয়াস। পরের জুটিতে ২০ রান যোগ করেন রাহুল ও অক্ষর। ৪০ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৯ রান করা অক্ষরের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এরপর রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়ার জুটিতে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় ভারত, ৩৬ বলে ৩৮ রান যোগ করেন তারা। ১৮ বলে ১৮ রান করা হার্দিকের বিদায়ে পরে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন রাহুল। ৩৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৩৪ রান করেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ও ব্রেসওয়েল ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান কাইল জেমিসন ও টুর্নামেন্ট সেরা রাচিন রবীন্দ্র।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন ড্যারিল মিচেল। ডানহাতি এই কিউই ব্যাটসম্যান ১০১ বলে ৩টি চারে ৬৩ রান করেন। উইল ইয়াং ১৫ রান করেন, রাচিনের ব্যাট থেকে ২৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রান। কেন উইলিয়ামসন রানের দেখা পাননি, ১১ রান করেই থামেন তিনি। শেষ দিকে দলের রান বাড়ানো ফিলিপস ৫২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই করা ব্রেসওয়েল ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৪০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় হার না মানা ৫৩ রান করেন। ভারতের দুই স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাদেজা।